পদাবলি : ০২

 



কল্পনা

নবাব আব্দুর রহিম


একদিন সকালে 

গুগ্রামের দোচালা বাড়িটার পিছনে

একজোড়া চটি পায়ে

বাগানের ফুলগুলো কোমল আঙুলে

স্পর্শ করবে আর বিমুগ্ধ মুখাবয়বে তোমার

বাতাবী লেবুর মত নমনীয়তা।

সেদিন সকালে গোলাপের কাঁটা যখন 

তোমার কোমল তালুকে ছিঁড়ে খেতে চাবে

সামান্য আঘাতেও তা ছুঁয়ে দেবে তোমার কোমল মনকেও

অশ্রুর ¯্রােতে বাঁধ ভাঙার মত ভেঙে যাবে যখন শখের কাজল।


কিংবা তোমার মুখ থেকে বুলির নহর

যেন বায়তুল মুকাররমের স্নিগ্ধ আজান,

যেন পাহাড়ি পাখির সকালের গান

আর

কোলের মেয়েটি যখন দারুণ উৎপাতে

তোমার রক্তের উদগ্র নিশান,

তোমার আঁচলে মুখ লুকিয়ে সুখের ঠিকানা যার।


একদিন সকালে চোখ মেলে যখন

সূর্যস্নাত ধানক্ষেতের পশ্চিমের দাওয়ায় 

একটা চুমুকের জন্য অধীর আগ্রহ তোমার

কিংবা কপালে, কপোলে, ঠোঁটে, চিবুকে 

স্নেহের অদৃশ্য চিহ্ন বয়ে যাবে তুমি

আর তোমার সুবাস যখন দখিনের দমকা বাতাস


অথচ সেদিন, তোমার পাশে থাকব না আমি

অথচ সেদিন তুমি অন্য কারো

যার প্রতি আমার ক্ষোভ নেই।

যার প্রতি আমার অন্তহীন শুভকামনা। 

যার প্রতি আমার হৃদয়ের হৃদ্যতা।

নারী জাতি তো তাকেই ভালবাসে 

যার সামর্থ্য আছে

ভালবাসার সামর্থ্য 

খাওয়া-পরার সামর্থ্য

প্রভৃতি রকমের যার সামর্থ্য আছে।


আমি নাহয় সেই সকাল, সেই দিন

সেই সুবাস কল্পনা করি!



এক রাত্রি ঘুমে ছিলাম

স্বপন শর্মা


আমার ভাবনাগুলো-

চিরদিন বন্দি থাকে খাতার পাতায় অথবা

মুছে যায় শরৎ বাতাসে,

তবু হৃদয় আকাশে চিন্তার খোরাক আসে।

চিন্তার ভাষা ভুলি না আমি-

অজ¯্র কল্পনা, জেগে থাকে প্রাণে;

পৃথিবীর প্রান্ত ঘেঁষে বার বার পদচারণা

নক্ষত্রের বুকে ঘুরে বেড়ানো...

কোনদিন বাস্তব হবে না সেটা, জানি আমি-


রাতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেখি-

জল, ঢেউ, সমুদ্র কিংবা প্রিয়ার দেহের-বেগ হয়ে

সব ভেসে যায় সাগর জলের আবেগে;

জানি না কোন ঢেউ আমায় খুঁজেছিল-

রাত্রি সিন্ধুর ঢেউ, জলের আবেগে চলে যায়

মনের উচ্ছ্বাসে চোখ বুজে থাকি।


কল্পনায় ছুটে চলি-

সমুদ্রের পাড়ে, বনে-মাঠে কিংবা আকাশজুড়ে

যেখানে উল্কার আলেয়া ভাসে, অথবা...

কাস্তের মত বাঁকা চাঁদ জেগে ওঠে ডুবে যায়

যেখানে গাছের শাখা নড়ে শীত রাতে সাদা হাড়ের মত...


সেখানে আমি আদিম রাত্রির ঘ্রাণ বুকে নিয়ে

নিঃসঙ্গ নিশীথের পথে এক রাত্রি ঘুমে-ছিলাম।




জেগে উঠে হে নারী 

লাভলী ইসলাম 


কিশোরী মেয়েটি দৌড়াতো উঠোন জুড়ে 

ভাঙ্গা মাটির হাঁড়ির টুকরো দিয়ে 

এঁকে ঘর বানাতো মাটির উঠানের বুকে 

এক্কাদোক্কা বলে দম বন্ধ করে লাফাতে লাফাতে ছয়ের ঘরে বাড়ি যেয়ে থেমে যেত ।

ফের মাটির টুকরোটাকে দম বন্ধ করে এক পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে  ফিরে আসতো ঘুরে ।

চাঁদনি রাতে লুকোচুরি খেলতো সখীদের খুঁজে ফিরে ।

কখনো জোনাকিদের তাড়া করে ধরতে যেয়ে বিফল হয়ে ফিরে এসে বসতো মাটিতে ক্লান্ত হয়ে। 

খিলখিল হাসিতে গাছের লতা পাতারাও নড়ে উঠতো আনন্দ উপভোগে ।

সে মেয়েটি এখন স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে অনড় 

হাসতে ভুলে গেছে, আনন্দ ভেসে গেছে অদেখা কোন প্লাবনে ।

কিশোরী মেয়েটি আপন গৃহে শকূনদের বিষাক্ত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে খুইয়ে ফেলেছে জীবনের সব হাসি আনন্দ উল্লাস মহামূল্যবান নারীত্বের অংহকারী গৌরব।

দুরন্ত কিশোরী এখন এক নরকীয় আবর্জনা ঘূণে ধরা নষ্ট মানবের লালসার শিকার। 

এখন মেয়েটি কাঁদে না 

এখন মেয়েটি হাসে না 

এখন মেয়েটি খেলে না 

এখন মেয়েটি ছোটাছুটি করে না 

এক দুনিয়া জোড়া নরকীয় যন্ত্রণার ছোবলে 

বিষাক্ত মেয়েটি বাঁচতে চায় কিন্তু কে দেখাবে আলো তার অন্ধকার ভুবনে ?

আছে কি কেউ, আছে কি কেউ ?


আছে কিছু সংখ্যক মানবতাবাদী সুপুরুষ। 

নিশ্চিত আছে কেউ ধর্ষিতার অসহায় পিতা নয়ত অসহায় কোন ভাই 

আর আছে অভাগীনি মা জননী, যার বুকে বইছে এক ক্ষতবিক্ষত খাল নদী সাগর 

মহা সাগরের রক্তাক্ত সতীত্ব বয়ে যাবার 

স্রোতের জীবন ভাঙ্গার তীব্র দহন ।

 

তবু ও আজ বলি উঠো, জেগে ওঠো হে নারী 

হে শিশু কন্যা মা জায়া জননী 

তোমরা ভালবাসার ফসলাদি বল আমরা কি প্রতিবাদ করতে না পারি ?

জেগে ওঠো হে নারী মুছে ফেলো অশ্রু নয়ন 

ঘুরে দাঁড়িয়ে বাঁচতে শেখো 

ঐ যে নতুন সূর্যের আশার আলোর বাধ ভাঙ্গা হাসি দেখো ।

উঠে দাঁড়াও হে লাঞ্ছিতা নির্যাতিতা নতুন প্রত্যয় নিয়ে বাঁচতে শেখো



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট