ধুলোর শহরে শুধুই আমি একা
জহির খান
এই যে মেঘ আকাশ জুড়ে আছে
জমে থাক তুমুল হাওয়ার বেগে
একটু আধটু ভালোলাগার ছায়ায়
ধুলোর শহরে শুধুই আমি একা
একটু পরেই বৃষ্টি হবে ঝিরিঝিরি
মাঠের পর মাঠ দৌড় ছাগলছানা
কানামাছি ভোঁ, দৌড়ে গোল্লাছুট
এই যে আমি বর সেজে বসেছিলাম
আষাঢ়-শ্রাবণ বরষার উঠোন জুড়ে
কনের খোঁজে মিছে মিছে গেলো
আমার এক সরষে ইলিশ যৌবন
এখন একটু আধটু টিপটিপ শব্দে
ঘুম ভাঙলে শুধুই আড়াল, দেয়াল
তবু প্রেম আমার খুন হলে পরে
হবে রক্তপাত এই শহরের বুকে
ডেথ সার্টিফিকেট
সৈয়দ শরীফ
‘সব হারিয়েও যারা বেঁচে আছে, তাদের সকলকে
একটি করে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হোক’
রাষ্ট্রের কাছে এ আবেদনটুকু করার প্রস্তুতিকালে আমার পকেট হতে
কিছু শূন্যগন্ধ উড়ে বাতাসে মিশে গ্যালোÑ
পেছন থেকে কিছু অদ্ভুত লোক আমাকে
হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঁটাঘরে;
এখানে এসে জানলামÑ পরিবেশ দূষিত করার
অপরাধে আমাকে কাল সকালে আদালতে পাঠানো হচ্ছে...
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভাবছিÑ আমার পকেটের
গন্ধে যদি পরিবেশ দূষিত হয়, তবে এই দূষিত
নিঃশাসে তো রাষ্ট্রই ধ্বংস হয়ে যাবে !
বিচারকের কাছে নিজের ফাঁসি দাবি করে হাতজোড় করার
সময় আমার হাত থেকে আবেদন পত্রটি নিচে পড়ে গ্যালো;
পত্রটি সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হলে
ওটা তিনি গভীর মনোযোগে পড়েন এবং
পড়া শেষে জানানÑ ‘রাষ্ট্রেরও তো সব হারিয়ে
যাচ্ছেÑ জীবনমৃত এই রাষ্ট্রটিকেও একটি ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া প্রয়োজন।’
অস্তিত্তহীন
অলোক আচার্য
মাথার ওপরে নিশ্চল আকাশ
আমি অপেক্ষায় থাকি
আরেকটি বিকেলের।
মেঘগুলো আজকাল ফাঁকি দেয় আমাকে
অকারণে বাতাসে ভাসে না সে উত্তর
আমার দ্বিধাণি¦ত চোখ ফাঁকি দিয়ে
প্রায়ই বৃষ্টি হয়।
আমি টের পাই ভেঁজা উঠানে হাঁটতে গিয়ে
আমি বেশ অবাক হই। এই তো সেদিনও
আকাশের সাথে আমার গভীর প্রণয় ছিল
আমি মিশে ছিলাম-অথবা সে ছিল
অথবা মাঝে ছিল কারও বসবাস
অস্তিত্তহীন, আমি বুঝতে পারিনি।
জিঘাংসার ছাড়পত্র
মাজেদুল হক
দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মাত্রা আর বাড়াতে চাই না-
চাই না এক আনা জীবনে সুরের সিম্ফনী টেনে
অদম্য ইচ্ছের নামতা পড়ার।
চৈত্রের দুপুরে পিপাসিত তটিনির বুকের পাঁজরে
ঝরাপাতার মরমর ধ্বনি শুনতে চাই না
দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মাত্রা আর আওড়াতে চাই নাÑ
চাই না বিন্দু বিসর্গের কোন অভিযোগের শুনানী
চাই না তিলে তিলে দগ্ধ হওয়া মৃত্যু বিভীষিকার ফাঁদ
অগ্নিঝরা অসহ্য দুপুর, শোকাবহ খরতাপ।
অতৃপ্তির বাসনা, বঞ্চনা উপেক্ষা করে
অজ¯্রবার আসতে চেয়েছি একফোঁটা স্বচ্ছ আলোর দ্রাঘিমায়
অথচ জিঘাংসার ছাড়পত্র ছাড়াই ক্রুদ্ধ হীম
আগুনের হলকায় জ্বলছি...
মানুষই মানুষকে পারে বদলাতে
আকিব শিকদার
একটু আঘাত যদি পাই, জ¦লে উঠবো আক্রোশে
বারুদে বারুদ ঘষা খেলে যেমন জ¦লে ওঠে
একটু আদর যদি দাও, গলে যাবো ভালোবেসে
প্রজাপতির পাখার বাতাসে যেমন ফুল ফোটে।
আঘাত নাকি আদর, বলো, কোনটা আমায় দেবে...?
মানুষই মানুষকে পারে বদলাতেÑ দেখেছি ভেবে।
দু’টি কবিতা
মিশির হাবিব
১. আলফা
আজ বুঝতে পারি, কেন একজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষ রূঢ় হয়।
প্রতিষ্ঠার জালে বন্দি করে সমাজ একজন পুরুষকে নিয়ে যায় বিষাক্ত জীবনে
অথবা মৃত্যুমুখে।
হতাশার ঝলসানো আগ্নেয়গিরি থেকে
মধ্যবিত্ত বেকার জীবন বলে ওঠে-
সমাজ একটা মাদারচোদ।
২. বিটা
সুখের মুহূর্তগুলো একেকটি মুখর উৎসব,
আর বেদনাগুলো জীবনের ধর্ম।
এরপর মানুষ বলে- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
স্বরূপ
জাহিদ আজিম
তোমার বাড়িতে হয় রাজভোগ রান্না
পাশের বাড়িতে হাড়ি শূন্য,
পেট পুরে খেয়ে ঢেকুর তুলে তুমি
মসজিদ-মন্দিরে খোঁজো পুণ্য !
তোমার বিছানাটা খুবই আরাম-নরম
কতো জন ঘুমায় পথ-ধারে ,
ঘুম ভেঙ্গে তুমি ভারি ফুলবাবু সেজে
সাম্য-স্বপ্ন শোনাও ঘুরে ঘুরে।
বুক ভরা তোমার ভীষণ ভালোবাসা
কখনো কি কাঙাল খোঁজো?
কতো নজরানায় পুষ্প ডালি সাজিয়ে
রোজই তো তীর্থ-মাজার পুজো।
আগে মন মননে তুমি মানুষ হও
স্বরূপ চিনবে পরম পূর্ণতায়,
অবয়ব দিয়েই কি কখনো কোন দিন
পূর্ণ প্রকৃতির মানুষ হওয়া যায়?