অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
উলঙ্গ রাজা
সমাজ বসু
গালিচার পরিবর্তে যদিও মাদুরের আসন ছাড়া
আজ তাঁর কিছুই নেই,
জরির জামা জুতো কিংবা টুপি-
শুধু একজোড়া পাথরের উবু সিংহের মৃত অরণ্যের
সোঁদা ঘ্রাণ ভাসে-
দেয়ালের একাধিক তেলচিত্রে।
এরকমই ভিখিরি আঁকড়ে থাকা ভাঙা থালার মত
হাঁটাহাঁটি কন্ঠস্বর ইত্যাদিতে আজো বেজে যায়
তাঁর ঝাড়লন্ঠনের কারুকাজ করা সারেঙ্গি।
ধরো আমার অন্তিম যাত্রাও তোমার দিকে
জোবায়ের সরকার
(নিবেদিত : তাসনিম ফারিয়া আশা)
ধরো, আইজ থিকা আরও কুড়ি বছর পার
এমনই বাতাস
হিম রাত
ঘেঙর ঘ্যাঙ
ব্যাঙের ডাক
ধরো
চাঁদ
কুয়াশা
অবশ হাইওয়ে
ধরো
ছুটছি
প্রিয়গান ধরে
বরাবরের মতো
তোমার দিকে
ধরো
ফোন
ক্রিং ক্রিং
ব্রেকফেইল
মৃত্যু সংবাদ হয়ে।
জল
আহরাফ রবিন
জল। কাদা। নদীর ধারেই শ্মশানঘাট-
শব-পোড়া কঙ্কালগ্রন্থি মাথার খুলি।
শ্রাবণে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি;
বৃষ্টির শীতল জল- বৃষ্টিধোয়া হাড়গোড়।
নদী; জলের ¯্রােত- উত্তাল তার ঢেউ;
কুমারীর ভরাট যৌবনের মতন।
জনম মোহ
নাসিমা হক মুক্তা
নক্ষত্রের গায়ে আধুলি মাখে
কিছু অভিমানের জল তৃষা
মনের চৌকাঠে ডুবুরি হয়ে মেদুর মৌতাত
গলা উচু করে আকাঙ্খার যাত্রী- পোষাকে
ভোগ-পথ্য নিষ্প্রাণের মত দীর্ঘতম অপেক্ষায়
ডাগর- ডাগর চোখে কাক-কাক করে
গাছ থেকে ডগার সারস!
ফেরার পথে পা আটকে ধরে
এক টুকরো- জনম মোহ
যার পর্দায় প্রেমহীন সোনা মাছি নেশার উজ্জ্বলে
টুকরো টুকরো বরফ গুলানো মুখে
নিভৃতে- জীবন ছাইপাঁশ, জীবন ছাইপাঁশ বলে
চাষ করে অতৃপ্তির চিবুক
পরচুলা সুখ লুটোপুটি খায়
অমানিশার অন্ধকারে
প্রেমহীন সংসার মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রণা।
সে আসে; সে আসে না
নাঈমুল হাসান তানযীম
স্বপ্নের ভেতর দেখা দাও
কোন সে অনন্যা তুমি গো
খানিক মুহূর্তের জন্য এসে
তোলপাড় তুলে যাও
আমার হৃদয়রাজ্যে
অস্পষ্ট, আবছায়া হয়ে
কেন বারংবার এসে
যন্ত্রণা সৃষ্টি করো আমার
বুকের বাঁপাশে
আসবে তো কেন আসো না
জীবনের রাজকুমারী হয়ে
কেন আবছায়া হয়ে আসো
অধরা স্বপ্নের ভেতরে
খানিক মুহূর্তের মৌতাতে
অনধিকার
হোসেইন দিলওয়ার
বখেড়া বলয়ে পলি- জমেছে প্রাণরসে
অবৈধ খেলায় দখল হয়েছে সাম্রাজ্যে,
উত্তাপ দেখি জলজ মাটির কলসে!
তৈলাক্ত দহনে আজ সুখ পরিত্যাজ্য।
মুক্তির ত্রিশূল যেন অসুরের হাতে-
সপ্রতিভ মহিমায় আশ্চর্য সফেন,
সব খায় ছিঁড়ে খুঁড়ে ধারালো ইস্পাতে-
চুপসে যায় জীবনের বিশুদ্ধ লেনদেন!
সমস্ত শান্তির দূত ঘুমায় কবরে-
অনধিকার প্রবেশে চলে বলাৎকার,
নেতৃত্বের হাহাকার অবনি চত্বরে-
পথে প্রান্তরে লক্ষিত- বেসুরো চিৎকার।
সমস্বরে দানবেরা গেয়ে যায় গান-
বাঁচার তাগিদে কাঁদে মানবিক প্রাণ।
একলা একা
মমতাজ রোজ কলি
বড্ড ভারী বিপরীত পাল্লাটা...
রোজ উল্টে পাল্টে দেখি- অসম ছিদ্রের খোঁজে।
তবু বেহুশে গাছ নির্দ্বিধায় হাঁটে ছাঁটা ডাল নিয়ে বুকে।
কেউ ভালো নেই। প্রকৃতিও পিপাসিত আজ...
কোথাও কেউ নেই- বটের ছায়ায় বিলি কেটে
বেঙ্গমা বেঙ্গমীর সোনার কাঠি রুপার কাঠির সন্ধান দেবার।
সব আলাদিনের চেরাগে পুড়ে পুঁতে রাখে
উচ্চাকাক্সিক্ষত পাঁজরের মাংসল খাদে।
যেন তালগাছ হয়ে বেড়ে ওঠে একলা একা!
সব গাছ ছাড়িয়ে...