তোমার কাছে
তমসুর হোসেন
যতবার তোমার কাছে যাই শুধু হোঁচট খেয়ে বেদনার কাজলে
সিক্ত হয়ে ফিরে আসি জনহীন নিরালায়
ঘাঘটের পুরণো মঠের ব্রতচারি ঋষির মতো
আত্মদ্রোহে ফেটে পড়ি শোকের উত্তাপে।
প্রশস্ত মাঠের পারে সাদা বকেরা পাখায় রোদ মেখে তৃপ্ত হয়
সতেজ নিশ্বাসে বুক ভরে ডানা মেলে উড়ে যায় আপন নীড়ের উষ্ণতায়
তোমার দেয়া অনুপম কষ্টগুলো দু’হাতে ছড়িয়ে দিয়েছি সবুজ ঘাসে
আশ্বিনের ফুরফুরে মেঘে।
উঁচু পাঁচিল ঘেরা ছায়াঢাকা বাড়ির প্রান্তঘেঁষে লজ্জাশীলা বালিকার
বাড়ন্ত দেহের মতো বিকশিত গ্রামের বাজার
নিশব্দে চলে গেছে দূরের লোকালয়ে আঁকাবাঁকা মাটির সড়ক
তোমার মধুর স্মৃতি স্বপ্নভেজা সেই পথে খুঁজে ফিরি রোদপোঁড়া সারাটা প্রহর।
এভাবে কতদিন পুঁড়ে পুঁড়ে ক্ষয়ে যাব স্মৃতির বিবর্ণ অঙ্গারে
আমার ললাটে অগোচরে খোদাই হয়ে গেছে বেদনার দীর্ঘ ইতিহাস
মৃত্তিকার অন্ধকারে সুকুমার বোধগুলো পুতে রেখে
শূন্য হাতে আপন নিলয়ে অশ্রুভেজা চোখে ফিরে আসি আমি।
জোছনার আঁচল
আদ্যনাথ ঘোষ
রাত্রির গায়ে জড়িয়েছিল জোছনার আঁচল।
এই আঁচল কে ধরেছিল?
এবং একটি প্রজাপতি
আঁচলের ভাঁজে ভাঁজে এঁকেছিল রঙিন আলপনা।
দহনে মাতাল প্রজাপতি
রাতের আলোয় আলপনায়
খুঁজেছিল প্রণয়ের ডালা।
আর এরই সাথে পাখিদের নীরবতায়
নির্জন ছিল রাত্রি-কুসুম।
কাঁপা কাঁপা স্বরে পুড়ে গেল
জোছনার আঁচলখানি
আর মনে হলো রাত্রিভোরে সেজেছিল
প্রসন্ন স্বপনের বাসরকুঞ্জ।
মেয়ে-টি তার মা- এর অনুরূপ
মনিরুজ্জামান প্রমউখ
থুতনি’র প্রকাশ, চাহনির তেজস্বতা,
কথনের দায়-ভার যেমন তার ।
চলনের দৃঢ়তায়- অনুভূতির সকল ধাপে,
তার জননীর অবয়ব প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে ।
উচ্চতার উচ্চতায়ও এক ।
অন্য-তার প্রবাহে ফুরসৎ থাকলেও
মেয়ে-টি তার মা’- এর অনুরূপ।
ইদানীং আমার নেশা
নেহাল অর্ক
ইদানীং আমাকে খুব নেশায় ধরেছে
নিষ্কলঙ্ক চাঁদের গায়ে কলঙ্ক আঁকার নেশা;
নদীরস্রোতের বাঁধভাঙা টানে নিরুদ্দেশ হওয়ার নেশা
কারো চোখের গভীর মায়ায় ডুবে যাওয়ার নেশা।
ইদানীং আমি বনে যাই খুব
আমি কারো টুলের মায়ায় পথ হারাই রোজ;
আমি দেখি লাল টুকটুকে স্বপ্নের গায়ে সংশয়ের আহাজারি
কুয়াশার ঘেরাটোপে রাতের জড়োসড়ো অঙ্গভঙ্গি।
অতঃপর, আমি পরিভ্রাজক হই
অপভ্রংশ থেকে ভাষা খোঁজে আনি, তারপর
প্রেয়সীর চুমুকহীন বিবর্ণ বিছানায় আঁধার নামে;
তোমাকে কেবল পরিচয়হীন রাখি
শুধু আমার নামহীন পরিচয়টুকু তোমাতে আঁকি।
বিন্যস্ত বর্ণমালা
মহাজিস মণ্ডল
কথাগুলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে
অন্ধকারের শরীর ছুঁয়ে
গড়িয়ে যাচ্ছে গভীর রাত্রি
শূন্যতার শব্দেরা সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে
ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অজস্র মুখ
আর নিস্তব্ধ গ্রীবাদের আনাগোনা
তবুও জীবনের চৌকাঠে সাজিয়ে রাখি স্তবগান
আর আকাশে নক্ষত্রের বিন্যস্ত বর্ণমালা...