অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
মুখোশ
রায়হান আজিজ
”হ্যালো, আব্বা ! আমি স্টেশনো আয়া ফরসি”, শাহীনের কণ্ঠে উত্তেজনা ।
দুপুর বারোটা নাগাদ মানিকখালী স্টেশনে এসে পৌঁছেছে শাহীন। সে ময়মনসিংহ শহর থেকে এসেছে বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে। বাবার সাঙ্গপাঙ্গরা আগেই স্টেশনে উপস্থিত ছিল। বাবা লুতফর মিয়া এবার বুরুদিয়া ইউনিয়নের মেম্বার প্রার্থী, পুরু গোঁফ, দাপুটে চেহারা, মেজাজও তিরিক্ষি।
শাহীনও স্বভাবে একটু উগ্র, আর দেখতেও ষ-ামর্ক চেহারার। ট্রেন থেকে নেমে অদূরে মসূয়া বাজারে বসে সিগারেট ধরাল সে। এ সময় সে দেখল, কিছু ছোকরা তার বাবার প্রতিদ্বন্দ্বী আলাউদ্দিনের পোস্টার লাগাচ্ছে। সে তাদের ধমকে ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিল।
বিকেলে আলাউদ্দিনের বাড়িতে বৈঠক বসল। মধ্যমণি বাবরি চুলওয়ালা আলাউদ্দিন ।
”লুতফইরা আর অর ফুতেরে একটা শিক্কা দেওন লাগব। এত বড় সাহস, আমার ফুশটার ছিরে। কী কইন আমনেরা’’?
বৈঠকে উপস্থিত সবাই এ ব্যাপারে একমত হল।
পেয়ার মুন্সী বলল, “ঠিহই কইসুইন” ।
”ওই কাজইল্যা, ব্যাকতের লেগা চা লয়া আয় ”। আলাউদ্দিন হুকুম করলেন তার বিশ্বস্ত চ্যালা কাজল কে। এই কাজলকে একটু বেশিই বিশ্বাস করেন লুৎফর । মেম্বারের সাথে থেকে কাজলও মোটামুটি ভালই পয়সা করেছে ।
আলাউদ্দিনের বৈঠকের খবর লুতফরের কানেও পৌঁছায়। শাহীন বলল, “আলাওদ্দি যেইতা কইতাসে, থানা ফুলিশই করন লাগব আব্বা”।
লুৎফর বললেন, ”আমরা কুনু মারামারিত যায়াম না” ।
রবিবার সকালে ধানক্ষেতে কাজ করতে যায় আমিন, শামীম, কাওসার ও আরও কয়েকজন ।
শামীমই প্রথম দেখে লাশটা- “কাওসার বাই, দেহুইন চাই, এইডা আলোদ্দী মেম্বর না ?”
পুলিশ ঘেরাও করে লুতফরের বাড়ি । ”ফুলিশ বাই, আমরা কিচ্চু জানিনা, আমরা এইতা করতাম ক্যারে”? বলল লুৎফর ।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? আটক হয় লুতফর ও শাহীন ।
অন্যদিকে মুচকি হাসে কাজল। আজ রাতে ওর ভালই ঘুম হবে ।
করিমুল্লারবাগ, পোস্ট- ফরিদাবাদ, থানা- শ্যামপুর, ঢাকা-১২০৪ ।