লক্ষ যোজন দূরে...
ফজলুর রহমান
নির্জনে তোমাকে পাবো এমন বিশ্বাসেই কোলাহলে তোমাকে খুঁজি না আর। জলের ভিতর আলোর রেখা মিলিয়ে যাওয়ার আগে মীন সন্তানদের কানকোয় যে চঞ্চলতা ফুটে উঠে তেমন আকুলতা কী তুমি আমার মাঝে দেখ না? আঁশটে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ার আগে শিকারী কীভাবে বুঝে ফেলে মীনের গতি! এই যে বৈধব্য বেশ, আমিষ ছেড়ে দিয়ে নিরামিষ এ আসক্ত Ñ এই উপবাস কিংবা যৌবনকে কাঁচের বয়মে পুরে তোমার পায়ে বর্তে দেওয়াÑ এসবের বিনিময়ে বেহেশতে কী প্রগাঢ় প্রেম, চির তরুণ জীবন দেবে না আমায়? একটা তন্দ্রা টুটে যাওয়া ভোর, পুবাকাশে ঘোড়ার খুরের ছায়ার মতো মেঘ, সারারাত জেগে থাকা বেশ্যার ঘুঙুর ও তার করুণ মুখে, শারাবে নিমজ্জিত গালিবের চোখে তুমি কী দেখা দাও না? ভাসো না মেঘের শায়রে? ফেনায়িত ঢেউয়ে? তোমাকে কী পাওয়া যায় না ঝিনুকের শব্দে, বায়স্কোপের Ñ ‘কী চমৎকার দেখা গেল’ ছবিতে? ম্লান সাঁঝের আযানে, মন্দিরের ঘণ্টায়, গির্জার সুউচ্চ মিনারে? তোমাকে পাবো বলেই মোমবাতি হই। পুড়ে পুড়ে শেষ হই তবুও লালনের মতো ‘লক্ষ যোজন দূরত্ব’ ঘোচে না।
আমি যদি পাখি হতাম
বশির আহমেদ
সাঁঝের আলো অধরে মেখে কুলায় ফিরে যায়
সন্ধ্যা পাখি,
ইস আমি যদি পাখি হতাম।
ভোরের শিশির আমার স্বপ্নীল ঠিকানা
নতুন বইয়ের মলাটে খুঁজে পাই হেমন্তের ঘ্রাণ।
মানুষকে ভালোবেসে কাছে যেতে চাই যতটুকু আছি তার চেয়েও বেশি।
সদা প্রস্তুত মৃত্যুর পয়গাম সালাতে কামনা করি মার্জনা।
প্রলম্বিত জীবন হিসেবের খাতায় দোটানা তবুও
অন্তরে বপন করি সবুজ নীতি।
তুমি যা কর
মাজরুল ইসলাম
যখনই ভোট উৎসব আসে, তখনই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে
উচ্চকণ্ঠে বেদগান শোনাতে
সুরের ত্রুটি কর না।
নানা উপায়ে তুমি গোপন কথা, গোপন রেখে
অনায়াসে কাজের তালিকা পেশ কর।
নজর আলি, রবি রুইদাস উৎসবের মুখে খুব অন্তরঙ্গ
আর কাজ চাইলে
কাজের পরিবর্তে হাতকড়া পরাও।
তোমাকে মিথ্যাতেই বেশি মানায়।
রাস্তায় পড়ে থাকলে
দেখতে আসা তো দূরের কথা
খবর নেবার সময়টুকু পাও না।
তার পরেও- তুমি’ই এখন আবার
প্রধান পদে উন্নীত।
তুমি যা কর
তা যে কতটা সত্যি, সে কথা তুমিও জানো বোধহয়!
একটি নির্জন আবর্জনা
ইয়াকুব শাহরিয়ার
আলো, বাতাস, রাস্তা-নদী
সব আছে, আছে ‘আন্তাজি’ ব্যস্ততা
জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার লাগামহীন দৌঁড়,
কাঠটুকরার মত টুকরে খাওয়া নষ্ট সমাজ,
সব আছে। এসব থেকে যেতে যেতে চলে যাবে-
পরের প্রজন্মে, খোলা খামে।
এক গ্লাস নেশা ধরা বৃষ্টি
পৃথিবীর মলাটের উপর পড়ে থাকবে প্রবল ঘৃণায়
কুকুর, শুয়োর, শেয়ালেরা হয়তো লজ্জিত হবে একদিন
মিথ্যার বেসাতি দেখে। রূপান্তরের মানুষগুলো
তবু বেলাজ হয়ে বসে থাকবে নিজস্বতার আশায়।
আহ! ছিঃ, লজ্জা, ঘৃণা
একটি নির্জন আবর্জনার গল্প
রচিত হতে থাকবে তথাকথিত মানুষের হাতে
প্রকৃত মানুষেরা হারাতে থাকবে কালের আবর্তে,
মহাকাল অতি আদরে লুকাবে তাদের, যারা-
স্বপ্ন বুনে সুন্দর সমাজের, অথচ তাদের মাড়িয়ে
গড়ে উঠবে আবর্জনার স্তুপ।