আত্মসমর্পণ
আকিব শিকদার
ভালবাসা দিয়ে মানুষকে কাঁদাতে চাই, বেদনা বিলিয়ে নয়।
কঠিন মিথ্যাড়ালে সরল সত্য ঢাকতে চায় চতুর লোকÑ
আমি চাই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নির্মোহ-নির্মল হোক।
আপন জনের মন বিষিয়ে জয়ের মুকুট পরাটাও পরাজয়।
কাঠখোট্টা মার্কা স্বামীদের চোখে বয় আনন্দের প্লাবন
অতিজাঁদরেল স্ত্রীরা যখন করে আত্মসমর্পণ।
একবার পরাজিত হয়ে দেখো, তেজদীপ্ত শপথ আমারÑ
চোখের জলে ধুয়ে দেবো পরাজয়ী গ্লানিমাখা শরীর তোমার।
জয়ের নেপথ্যে থাকে শোক, ঠিক যেমন একই দেহে
জীবনের পাশপাশি বাস করে দুর্বিসহ মরণ।
দরিদ্রের অর্ঘ্য অবজ্ঞায় দিও না ঠেলে, সর্বস্ব দেবো তোমায়Ñ
পরিপাটি কুঁড়েঘর, ছায়াঢাকা আঙিনা, মাটির সিংহাসন।
যদি একনিষ্ট মনোযোগে তাকাও আমার গহীন চোখের দিকে
বজ্রলতা ঝলকের মতো ক্ষণিক ক্ষণেই চিনবে আমাকে।
হস্তশিল্প
হাসান মাসুদ
এই দিনেই মনে পড়ে মাকে;
এই দিনেই।
সামান্য উষ্ণতা পাব বলে -
আম পাতার মত অমন খসখসে
শুকনো হাতদুটি মাখিয়ে দিত গরম তেল;
আমার তুলতুলে ত্বকে।
পেতামও খুব;
পাখির মত হাত-পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে
বুঝিয়ে দিতাম আমি বড্ড ভালো আছি।
হ্যাঁ মা,
সত্যিই আমি ভীষণ ভালো আছি;
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয় - দুপুর
গড়িয়ে সন্ধ্যা -
ব্যস্ত নগরের ব্যস্ততার হুড়োহুড়ি
কালো ধোঁয়ায় মিশে যাচ্ছে অতীত!
অনাহুত ভবিষ্যতের কড়া বেজেই চলেছে!
এখন চোখের সামনে মরা আম পাতা
দেখলেই মনে হয় ওটা মায়ের হাত,
আমার মায়ের সেই জামকালো খসখসে
হাত।
অন্যকে শিখাতে
শামীমা আক্তার সাথী
কাঁদিয়া বুক বাঁধো গো সখি
নতুন আশাতে,
নতুন আশায় খুলিবে দুয়ার
নব প্রভাতে।
নাহি বা পেলে যাহা চাইলে
এই না জগতে,
না পাওয়ার বেদনা কে রোপণ
করো শক্তিতে।
হোক না যতই বাঁচাই কঠিন
এই দুনিয়াতে
তবুও তোমায় বাঁচিতে হইবে
এই কঠিনের সাথে।
হার মানিওনা সহজে পরাজয়
বরণ করিতে
মাথানিচু করিও না প্রয়োজনে
মরিবে হাসিতে।
অশ্রুর নোনাজল কাজে লাগাইও
তৃপ্তি মিঠাতে,
তোমার চলার পথ সুগম করো
অন্যকে শিখাতে।
ভালোবাসার বেলুন
মোহাম্মদ আবদুর রহমান
ভালোবাসার বেলুনটিকে
প্রতিহিংসার ব্লেট দিয়ে কেটে দিয়েছ
ভালোবাসার বাতাস দিয়ে
পূর্ন করার জন্য ফু দিচ্ছি বার বার
কিন্তু তা প্রসারিত হয়না
বরং যেমন ছিল তেমনই থাকে।
বেলুনটি আর্তনাদ করে ব্যথায়
তার ক্ষত দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তাজা রক্ত
আবেগের সূচ দিয়ে করেছি সেলাই
কিন্তু ক্ষত মেরামত করা সম্ভব নয়
রক্তস্রোত কমে না
বরং বেরিয়ে যায় অনেক গতিতে।
অথচ ভালোবাসার বায়ু বহন করে
ঘুরেছে আমার বুকের আকাশে
দেখেছে সকলে
হাত তালি দিয়ে জানিয়ে ছিল অভিনন্দন।
আজ হাজারও চেষ্টা করেও
জীবনের সকল ভালোবাসার বাতাস দিয়ে
পূর্ন করতে পারিনি বেলুনটি
কেন কেটেছ?
জবাব দাও।
ক্ষমা চেয়ে নেও
নতজানু হয়ে
অপসারিত হউক সলক ক্ষত
আবার উড়ুক আমার আকাশে
হাত তালিতে ভরে উঠুক চারিদিক।
সর্বনাশা বাঁশি
মজনু মিয়া
ঘর ছড়ার ডাক দিয়ে যায় বাঁশি
যখন শুনি ঐ বাঁশির সুর
বিমোহিত হয়ে যায় একাগ্র চিত্তে
আর ঘরে থাকতে পারি না।
ছলে কৌশলে ছুটে যায় বাঁশির পানে
মুগ্ধ হয়ে শুনি ঐ বাঁশির সুর
ঘোর কাটে না তখনো-যখন না তুমি
স্পর্শে সজাগ করো।
পৃথিবীর লোক লজ্জা সমাজ ধর্ম
সব ভুলে যাই, ক্ষুধা তৃষ্ণা থাকে না
ভাবি বাঁশিওয়ালা আমার হলে
ঘরে ফেরার আর প্রয়োজন হতো না।
পাণ্ডুর পৃথিবীর পাণ্ডুর গল্প
জোবায়ের সরকার
আমি যেন এই পা-ুর পৃথিবীর
এক অবসন্ন আত্মারামের দূত।
আমি যেনো অতীত জীবনের ভীড় থেকে
উঠে আসা এক খিন্ন জনসাধারণ।
এই গ্লানিমাখা পৃথিবীর আলো, গন্ধ
জনবহুল উষ্ণ বাতাস, আমার প্রতিকূল।
দীপ্তিহীন এই পৃথিবীতে
নিরংশুতে ঠাঁই নেয় সকল পাপ।
আর নিরেট-নির্দয় ঠাকুরেরা,
মদ্যপানের নান্দনিকতায় মেতে থাকে।
এখানে প্রেম যেন সাময়িক; অনিঃশেষ রক্তাতিপাত-
বিকলাঙ্গ সকল চেতনা।
এই পৃথিবীর উন্মাদ রক্ত
মিশে গেছে যার যার দেহে,
তারা যেন বিকিয়ে দিয়েছে;
ঝাউগাছটার পিছনে কার্তিকের চাঁদ।
তবু তারা মধ্যরাতে মোমের আলোয়
কান্তি খুঁজে হয়রান, সিক্ত অন্তরচক্ষু পল্লব।
অবশেষে, চাওয়া-পাওয়ার কিছু উটকো আর্তি-যন্ত্রণা,
অন্ত প্রদেশে ঘুনপোকাদের জন্ম দেয়।
হেমন্তের ঝড়ে পাতার মতো ঝড়ে যায়
তোমার গল্প, আমার গল্প, প্রেমের গল্প, মাটি ও মানবের গল্প।