মফিজের কাণ্ড
প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম
মফিজ বিয়ে করেছে। বউয়ের নাম আলতা বেগম। দেখতে শুনতে খুব ভাল। আলতা বেগম এই প্রথম ঢাকায় এসেছে। ঢাকা শহরের বড় বড় বিল্ডিং ও রাস্তায় গাড়ি দেখে খুব মজা পাচ্ছে। এতো মাানুষের সমাগম সে আগে কখনো দেখেনি। মফিজ মিরপুরের একটি হোটেলে বাবুর্চির চাকরি করে। কয়েকদিন আগে সে হোটেলের মালিককে বললো, ‘মামা, আমি বিয়ে করতে বাড়ি যাবো। দোয়া করবেন।’ হোটেলের মালিক তার দূর সম্পর্কের মামা হয়। তার নাম হাসমত। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। তিনি মফিজকে খুব পছন্দ করেন। মফিজ বিয়ে করবে শুনে তিনি খুশি হলেন এবং বললেন, ‘এতোদিনে একটা ভাল সিদ্ধান্ত নিলে।’
‘মামা, আমার ছুটি লাগবে।’
‘তোমার যতোদিন ইচ্ছা ছুটি নাও, তবে সঙ্গে বউ নিয়ে আসতে হবে।’
‘জ্বি, মামা।’
মফিজ বিয়ে করতে গ্রামে চলে গেলো। তারপর আলতা বেগমকে বিয়ে করে সোজা ঢাকায় ফিরে এলো। এখন নতুন বউকে নিয়ে ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আজ শুক্রবার। যানজট কম। লোকাল বাসের ভিড়ও কম। মফিজ তার বউকে নিয়ে লোকাল বাসে চড়ে মিরপুর থেকে রমনা পার্কে যাচ্ছে। দু’জন পাশাপাশি বসেছে। একজন যাত্রী বাসের হ্যান্ডেল ধরে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে অনেক সিট খালি থাকার পরও লোকটি দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি মফিজের বউয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছে। মফিজ লোকটির দিকে চোখ বড় করে তাকালো। তারপর লোকটি মফিজের পিছনের সিটে এসে বসলো। এতোক্ষণ মফিজের মেজাজ খারাপ থাকলেও এখন কিছুটা শান্ত হয়েছে। কিন্তু কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই পিছনের সিটে বসে থাকা লোকটি তার বউয়ের মাথায় হাত রাখলেন। মফিজ উঠে দাঁড়িয়ে লোকটিকে বললো, ‘ওই মিয়া, আপনি কিন্তু অসভ্যতা করছেন।’
মফিজের কথা শুনে লোকটি থেমে গেলো। কয়েক মিনিট পর সে আবারও একই অসভ্যতা শুরু করলো। মফিজ প্রচ- রেগে গিয়ে বললো, ‘ওই, মিয়া, কি হয়েছে আপনার?’
লোকটি বলে উঠলো, ‘তুই আমারে চিনিস?’
‘আপনাকে আমার চেনার দরকার নাই, আপনি আমার বউয়ের গায়ে হাত দিবেন না।’
‘আমার যা ইচ্ছা করমু, কী করবি তুই?’
‘আমি কিন্তু নোয়াখালীর পোলা, মুখে কথা কই না।’
‘শালা, তুই আমারে হুমকি দিচ্ছিস? এক থাপ্পরে কানের পট্টি লাল কইরা দিমু।’
‘আমি রেগে যাচ্ছি, আমার রাগ উঠলে কিন্তু খবর আছে।’
‘তুই আমারে চিনিস না। আমি কি করতে পারি তুই জানিস না।’
মফিজ লোকটির অসভ্যতার প্রতিবাদ করছে, অথচ আশপাশের কোনো যাত্রী তাকে সাহায্য করছে না। তারা চুপ করে যার যার সিটে বসে আছে। আজকাল মানুষ খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। চোখের সামনে রোড এক্সিডেন্ট হলেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যাায় না। তবে যেদিন নিজে বিপদে পড়েন সেদিন বুঝতে পারেন অন্যের সহায়তা কতোটা প্রয়োজন।
বাসের কন্ট্রাকটর দৌড়ে এসে মফিজকে বললো, ‘উনাকে চিনেন আপনি?’
‘বেয়াদব চেনার দরকার নাই।’
‘আরে ভাই, উনি এই এলাকার টপ টেরর টাইগার ফজলু।’
‘আমার কাছে তো মনে হয় লুইচ্চা ফজলু।’
কন্ট্রাকটর টাইগার ফজলুকে বললো, ‘বস, আপনি শান্ত হোন। উনি আপনাকে চিনতে পারে নাই, তাই উল্টা-পাল্টা বলছে।’
টাইগার ফজলু মেজাজ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘শালার পুতেরে আজ মাইরা ফালামু।’
মফিজ তার ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে টাইগার ফজলুর মাথায় ধরলো। টাইগার ফজলু সাথে সাথে বিড়াল ফজলু হয়ে গেলো। কন্ট্রাক্টর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বাসের সব যাত্রী থ হয়ে মফিজের কান্ড দেখছে। মফিজ ধমক দিয়ে বললো, ‘শালার পুত, তুই কিসের টাইগার? পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিলেই তোর লুইচ্চামি বাহির হইয়া যাইবো। গুলি কইরা দিলাম কিন্তু...’
সবাই চুপচাপ। টাইগার বজলুও চুপ। তার সব বাহাদুরি শেষ। সে মফিজকে বলে উঠলো, ‘বস, আমাকে গুলি করবেন না। আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই। আমাকে মাফ করে দিন।’
‘মাইয়া মানুষ দেখলে শরীর গরম হইয়া যায়, তাই-না?’
মফিজ পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দেওয়ার ভাব নিয়ে বললো, ‘কানে ধর কইলাম, না’হয় গুলি কইরা দিমু।’
টাইগার বজলু সঙ্গে সঙ্গে কান ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। মফিজ তাকে বললো, ‘তোর গায়ে এক ছটাক মাংস নেই - পুরোটাই কঙ্কাল। মনে হয় সোমালিয়া থেকে আইছস। এই শরীর নিয়ে আবার মাস্তানী করিস?’
‘বস, আর কখনো করবো না।’
মফিজ বাসের ড্রাইভারকে বললো, ‘ওই ড্রাইভার গাড়ি থামা। এক্ষণি থামা, না’হয় তোরেও গুলি কইরা দিমু।’
‘জ্বি বস, থামাচ্ছি।’
মফিজ কন্ট্রাকটরকে বললো, ‘এই পুঁটি মাছটাকে গাড়ি থেকে লাথি দিয়ে নামা।’
ড্রাইভার বাস থামালো। কন্ট্রাকটর টাইগার বজলুকে ভয়ে ভয়ে গাড়ি থেকে নামাচ্ছে। মফিজ আবার বলে উঠলো, 'ওই কন্ট্রাকটর, এই শালাকে লাথি দিয়া নামাবি কিন্তু, না’হয় তোরেও গুলি কইরা দিমু।’
গুলির ভয়ে কন্ট্রাকটর টাইগার বজলুকে সবার সামনে পাছায় লাথি দিয়ে নামিয়ে দিয়েছে। তারপর সে মফিজের কাছে এসে বললো, ‘বস, আপনি ঠিক কাজ করেছেন। শালা খুব খারাপ লোক।’
‘তাহলে তারে এতো ভয় পাচ্ছিলি কেন?’
‘বস, আর কোন দিন ভয় পামু না। আপনি এখন পিস্তলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন, যেভাবে ট্রিগারে আঙুল রেখেছেন, যে কোন সময় গুলি বের হয়ে যেতে পারে।’
মফিজের গন্তব্য চলে এসেছে। সে আলতা বেগমকে নিয়ে বাস থেকে যাচ্ছে। নামার সময় তার হাতের পিস্তলটি কন্ট্রাকটরের হাতে দিয়ে বললো, ‘এটি একটি খেলনা পিস্তল। দেখেছিস শালাদের কলিজা কতো ছোট? এদের কখনো ভয় পাবি না।’
কন্ট্রাকটর পিস্তলটি হাতে নিয়ে দেখে - এটি সত্যিই প্লাস্টিকের খেলনা পিস্তল।
মফিজ তার বউকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তার কা- দেখে গাড়ির সবাই অবাক হলো।