ক্রাইটেরিয়ন
সৌর শাইন
[গত সংখ্যার পর]
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইউনিট-টুয়ের ১১০ নম্বর কেবিন। কদিন ধরে হাসপাতালে শুয়ে আছি জানি না। শ্রবণ ইন্দ্রিয় সজাগ হবার পরপরই আব্বুর কথা শুনতে পেলাম। উনি ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন।
স্পষ্ট শুনলাম ডাক্তার বললেন, মিঃ ফারদিন মজুমদার, আপনার ছেলে এখন যথেষ্ট আশঙ্কা মুক্ত। কিছুদিন পরেই তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
ডাক্তার চলে যাবার পর আব্বু ধীরে ধীরে বলল, সোম, আগে জানলে তোকে কিছুতেই ঐ জঙ্গলে পাঠাতাম না। তোর মা, খুব কেঁদেছে। বলতে বলতে আব্বু কেঁদে ফেলল।
আব্বু আরো জানাল বিভিন্ন মিডিয়ার নিউজ রিপোর্টার আমার সাথে কথা বলতে উদগ্রীব হয়ে আছে। ওরা জানতে চায়, সেদিন কী ঘটেছিল সেখানে? কিভাবে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হলো।
ঘটনাটা এতদূর যাবার পেছনে প্রধান কারণ বনে আগুন ছড়িয়ে পড়া। গত এক সপ্তাহ ধরে শালবন জ্বলছে। দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে নানা দিকে। গত ছয়দিনে কয়েকটি জেলা জুড়ে আগুনের বিস্তার ঘটেছে। বনের আশপাশে গ্রামগুলোও রক্ষা পায়নি। সবকিছু পুড়ে ভস্ম। শুধু টিকে আছে রিয়ন সাহেবের বাড়িটি। সংবাদে জানা যায়, দাদাজানের ঐ ঘরে কেবল ডায়েরি-খাতা-বইপত্র ও কাঠের আসবাব পুড়েছে।
জ্ঞান ফেরার পরদিন। উৎসব এল। একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে সে বেডের পাশে বসল।
সোম।
চোখ মেলে তাকালাম।
কিরে, এখন কেমন আছিস? দেখ কারা এসেছে।
তাকিয়ে দেখলাম উৎসবের ডান পাশে দাঁড়ানো ওর স্ত্রী মোহনা। বামপাশে দুটো শিশু।
আমি হাসার চেষ্টা করলাম।
উৎসব, বনের আগুনটা নিভেছে?
না, সোম। এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তবে বৃক্ষ ও প্রকৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফায়ার বিগ্রেড কাজ করছে। দু’এক দিনের মধ্যে সবঠিক হয়ে যাবে।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। এত চমৎকার বন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ছাই হয়ে যাচ্ছে নীলার স্মৃতি,শশীর হাসি মুখ! বনের ঐ মিষ্টি পাখিগুলো নিশ্চয়ই খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। লাল ফলে ভরা বটগাছটির করুণ চিত্র বার বার ভেসে ওঠছে। মাহিদ! মাহিদ কোথায়?
উৎসব বলল, মাহিদ কে?
সেদিন ওখানে ছিল? মাহিদ কি বেঁচে নেই?
তোর পাশে অন্য কাউকে তো পাইনি সোম।
আমি আর কথা বললাম না।
এক দুঃস্বপ্নের পৃথিবী থেকে উৎসব আমাকে বাঁচাল। ওর ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। আর কেনই বা এ ঋণ শোধ করতে যাব? ও যে আমার বন্ধু! হাসপাতালে অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছে। ওদের ভালবাসা ভরা মুখগুলো দেখে সত্যিই প্রশান্তি পাই। এ মুখগুলোর ভিড়ে যদি নীলা থাকত, তাহলে এ প্রশান্তি সত্যিই পূর্ণতা পেত।
বাসায় ফিরে আসার পরপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হলো। পুরো সত্য ঘটনা ওদের খুলে বললাম। কিন্তু মিডিয়া আমাকে ভুল বুঝল। আমার বিবৃতিকে ওরা হাস্যকর ও বানোয়াট কল্পনা বলে উপস্থাপন করল। নীলা ও শশীর ঘটনা ও আমার জীবনবৃত্তান্তের উদ্ধৃতি দিয়ে বার বার আমাকে মানসিক রোগি বলে প্রচার করা হলো। রিয়ন সাহেবের বহুমাত্রিক জগত নিয়ে গবেষণা ও ক্রাইটেরিয়ন ফর্মূলা ওদের কাছে বিন্দুমাত্র মূল্য পেল না। বেশিরভাগ লোকের দাবি আমি পাগলামি করে ঘরে আগুন ধরিয়েছি। আর সে আগুন দেশের বৃহৎ বনাঞ্চলে দাবানল সৃষ্টি করেছে। এই অভিযোগ দাখিল করে অনেকেই আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইল। কিন্তু লোকাল থানা সে মামলা গ্রহণে রাজি হয়নি।
কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন আমার শাস্তির দাবি করে বিভিন্ন জায়গায় মানব বন্ধন করল। আবার কয়েকটা সংগঠন ওদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো। আমার পক্ষাবলম্বন করে তাদের বক্তব্যের জিগির ছিলো এমন,“বৃহৎ শালবনে অগ্নিকা- একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা। এর জন্য সোম মজুমদারের মতো মানসিক রোগিকে দায়ী করা ঠিক হবে না। দেশে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায়, আমাদের প্রশাসক আন্তরিকভাবে প্রস্তুত নয়। এটা রাষ্ট্র ও জাতির প্রতি চরম অবহেলা। বন বিভাগ, বৃক্ষ ও প্রকৃতি মন্ত্রণালয়ের উচিত, দেশের প্রতিটি বনাঞ্চলে দাবানলের মতো দূর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা। এ ঘটনা থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেয়া উচিত। যারা, সোম মজুমদারের শাস্তি দাবি করছে, তাদের বলব, আপনারাও সোমের মতো মানসিক রোগী। আপনাদেরও দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।”
স্বনাম ধন্য বিশ্বখ্যাত গণিতবিদ রিয়ন সাহেবের নাতি সোম মজুমদারকে নিয়ে প্রতিদিনই পত্রিকা ভরে নিউজ আসতে লাগল। সে নিউজে দাদাজানের নামটিকে প্রাধান্য দিয়ে কুৎসিতভাবে আমাকে তুলে ধরা হলো। দেশ প্রেমিক বুদ্ধিজীবিরা বড় বড় কলাম লিখল। সেখানে কেউ আমাকে জঙ্গি বলে স্লোগান তুলল। কেউ বলল, আমি বিদেশি অনুচর, অর্থের লোভে বনের আগুন দিয়েছি। কেউ আমাকে বিশ্বাস ঘাতক, দেশের শত্রু বলে চালিয়ে দিলো। কেউ আমাকে পাগল ভাবতে রাজি নয়, সবই আমার সাজানো গল্প-নাটক। তাই আমাকে রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত বলে অভিমত দিলো। মিডিয়ার পাবলিক ওপেনিয়নে কেউ কেউ আমার চিকিৎসার দাবি জানাল। চিকিৎসার প্রয়োজনে কেউ কেউ অর্থ সাহায্য দিতে চাইল। কেউ আমার মতো পাগলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পত্রিকাতে খোলা চিঠি দিলো। কার্টুনিস্ট আমাকে ও দাদাজানকে নিয়ে ক্যারিকেচার আঁকল। নড়বড়ে আদর্শপন্থী ছড়াকার আমাকে নিয়ে দু’কলম ছন্দও মেলাল। কেউ গল্প-উপন্যাস লিখেছে কিনা জানি না। অন্যদিকে কিছু উঠতি বৃক্ষ প্রেমিক ক্রোধে জ্বলেপুড়ে আমাদের বাসায় ইট-পাটকেলও ছুঁড়ে মারল।
জীবনের আশঙ্কা প্রতিনিয়ত। ভয়ে জড়সড় প্রতিটি মুহূর্ত। আমি ঘর বন্দি হয়ে পড়লাম। এক মৃত্যুকূপ থেকে বেঁচে এলেও, আরেক মৃত্যু ফাঁদে আটকা পড়েছি। জীবনের মায়া ফুরিয়ে শূন্যকে ছুঁই ছুঁই করছে। বিব্রতকর এই মুহূর্তগুলোতে আমি ও আব্বু খুব অসহায় হয়ে পড়লাম। কেউ আমাদের পাশে নেই। ঘর থেকে বেরুবার জো নেই। গেট খুললেই মিডিয়ার লোকজন আব্বুকে ঘিরে ধরে। নানা প্রশ্ন দাঁড় করায়, এই মুহূর্তে আমাদের পুলিশী নিরাপত্তা প্রয়োজন কিনা? এ পর্যন্ত সোমের চিকিৎসার্থে কত টাকা সংগৃহীত হলো? সত্যিই সোম মানসিক রোগি, নাকি মিথ্যের মতলব?
আব্বু ঘরে ফিরে চুপচাপ বসে থাকেন। আমি আম্মুর কাছে ততটা যাই না। আমার বিধ্বস্ত মুখ তাঁকে দেখাতে চাই না। এমনিতেই আম্মু অসুস্থ, তাই এ বিষয়গুলো তাকে আর জানানো হয়নি। আব্বু ভুল ক্রমেও আম্মুকে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি নন। তবুও আম্মু আমার জন্য কাঁদেন।
বুঝতে পারলাম অচিরেই আমাকে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হবে। ইচ্ছা ফুরিয়ে গেলে বেঁচে থাকাটা অর্থহীন। জীবনের শেষ মুহূর্তে এ দেশের মিডিয়ার কাছে নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে চাই। কারণ, আমার জীবনে এ দুর্ভোগ ডেকে এনেছে এদেশের কতিপয় হুজুগে মিডিয়া। কখনো লেখক হবার ইচ্ছে জাগেনি। আজ নিরুপায় হয়ে সত্য প্রকাশের জন্য জীবনের এ অস্বাভাবিক ঘটনাটি লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে লেখায় অনেক কিছুই ওঠে আসছে। লেখাগুলোতে কৃত্রিমতা বর্জন করে, ঘটনা কেন্দ্রিকভাবে অগ্রসর হতে লাগলাম। আমার নিজস্ব বক্তব্যে এ লেখাটা এগোতে লাগল।
বন্ধুমহল থেকে প্রথমদিকে মুহুর্মুহু প্রবোধ ও সাহায্যের সাড়া পেলেও সে ভালবাসার গতি কদিনেই নিঃশেষ। ওরা ওদের সম্মান ও গা বাঁচাতে আমাকে এড়িয়ে যেতে লাগল। শুধু পিছু ছাড়েনি উৎসব। সব নিন্দার ঝড় মেনে নিয়ে, সে আমাকে নিয়মিত মানসিক সাপোর্ট দিতে লাগল। উৎসব বলল, কিছুদিন ধৈর্য ধর সোম। মিডিয়া হলো মাতাল মিছিলের মতো। যেখানে সেনসিটিভ খরবের সুঘ্রাণ, সেখানেই ওরা হামলে পড়ে। ঘটনা সঠিকভাবে অনুসন্ধান নয়, বরং ঘটনাকে নিজস্ব কায়দায় সংবাদে রূপান্তর করা ওদের কাজ। কারণ, সময়ের তাজা নিউজ পাবলিক পেট পুরে খাবে, তাতে ওদের পেটও ভরবে। হয়তো কিছুদিন পর অন্য একটি ঘটনার উপর ওরা ক্ষুধার্ত প্রাণীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন চাপা পড়বে মেন্টাল প্যাশেন্ট সোম মজুমদারের নাম। আর সে সময়টাকে ঘিরে মূল কাজটা করতে হবে। যে মিড়িয়ার উপস্থাপনে মানুষ তোকে ঘৃণা করছে, সে মিডিয়া তোকে নিয়ে আবার পর্যালোচনা শুরু করবে। গড়ে তোলা ভুলের প্রাসাদের ইট একটি একটি করে খুলবে। উৎসবের কথা মতো নিজেকে সান্তনা দিলাম। একটানা দু’মাস ঘরে বসে লিখলাম। নীলা ও শশীর কাছে যাবার আগে লেখাটা শেষ করতে চাইলাম। কিন্তু ঘটনার অনেক চিত্র এখনো চিত্রিত হয়নি। সে অপেক্ষায় আছি। মনের ভেতর একটা দুঃখবোধ হচ্ছে, আমার মৃত্যুর ঘটনাটি নিজের হাতে লিখতে পারব না। কেউ যদি দয়া করে লিখে দেয়, তাহলে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
একদিন বিকেলে উৎসব এক ভদ্রলোককে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় এলো। উৎসব আমার সাথে উনাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
এই হচ্ছে, আমার বন্ধু সোম মজুমদার। সোম, উনি হচ্ছেন নিউজ চ্যানেল “অনুসন্ধান”এর সিনিয়র রিপোর্টার মৃদুল হাসান। সবাই তাঁকে মৃদু ভাই বলে ডাকে।
আমি মৃদু ভাইয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করলাম। স্পষ্ট ভাষী সিনিয়র এ মানুষটি আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বহু প্রশ্ন করলেন। পুরো ঘটনা শুনে বিস্ময়ের নিশ্বাস ফেললেন।
বললেন, স্ট্রেঞ্জ! ভারি অস্বাভাবিক ঘটনা! বিষয়টি মহাজাগতিক চিন্তাবিদদের জানা উচিত! বহির্বিশ্বের গবেষকেরা এ ব্যাপারে খুবই আগ্রহী থাকে। তাঁদের সাথে যতদূত সম্ভব যোগাযোগ করা প্রয়োজন । আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সাহায্য করব।
উৎসব বলল, মৃদু ভাই, বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রিপোর্ট করা উচিত। আপনার প্রতি বিশেষ অনুরোধ।
মৃদু ভাই হেসে বললেন, শুধু রিপোর্ট নয়, সোম মজুমদারকে নিয়ে আমরা লাইভ প্রোগ্রামও করব। আর সেটা হবে মূল ঘটনা স্থলে। চা পর্ব শেষে মৃদু ভাই আমার ও আব্বুর সাক্ষাতকার নিলেন। সেটি ভিডিও রেকর্ড করা হলো। মৃদু ভাই চলে যাবার আগে বললেন, সন্ধ্যার নিউজেই আমাদের চ্যানেলে রিপোর্ট দেখতে পাবেন।
আব্বুর শুষ্ক মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কারো কারো বেঁচে থাকার সাথে সম্মানের একটি আপেক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। আব্বুকে দেখে তাই মনে হলো। ঊর্ধ্বমুখী সম্মান হঠাৎ সর্বনিম্নে চলে এলে, যা হয়। এখন যেন আব্বু সে মুহূর্তেই আছে।
মৃদু ভাইকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে উৎসব আবার ফিরে এলো। আমরা চ্যানেল “অনুসন্ধান”এ সন্ধ্যার নিউজ দেখলাম। রিপোর্টটি প্রচার করা হয়েছে। রাতের সংবাদে বেশ কিছু চ্যানেল “অনুসন্ধান” চ্যানেলের বরাত দিয়ে আমাদের রিপোর্টটি দেখাল।
রাতে উৎসবকে আমার লেখাগুলো দেখালাম। উৎসব বলল, মৃদু ভাইয়ের লাইভ অনুষ্ঠানটা প্রচার হোক তারপর পুরো প্রতিক্রিয়াটা লেখায় তুলে ধরবি। তারপরই তোর লেখা বই আকারে প্রকাশ করব। পাবলিক এই জিনিসটার উপর মৌমাছির মতো ঘিরে বসবে।
ওকে বললাম, তোকে একটা অনুরোধ করব। রাখবি?
কেন রাখব না? তোর কোনো কথা কি আমি কখনো ফেলেছি?
শোন, বই প্রকাশ করার চিন্তাটা আপাতত দূরে থাক। আমি এ লেখাটা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে চাই। মৃত্যুর ঘটনাটা লিখে যেতে পারলে, সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেতাম। যা কখনোই সম্ভব নয়। আমি চাই, যেভাবেই হোক আমার জীবনের অন্তিম সময়ের পার্টটা লেখার পর বইটা প্রকাশ হোক। ইহজাগতিক সবকিছুই আমার কাছে তিক্ত ঠেঁকেরে। মানুষের বাহ্ বাহ্ পাবার ইচ্ছে মরে গেছে।
উৎসব চলে যাবার পর আবার লেখা শুরুলাম। সারাদিনের ঘটনা লেখা শেষে ঘুমুতে গেলাম।
গতকয়েকদিন ধরে পত্রিকা ব্যবসায়ীরা সোম মজুমদার প্রসঙ্গটিকে নতুন দিকে মোড় দেবার চেষ্টা করছে। টিভি চ্যানেলে অনিদ্রা রোগিদের টকশোতে বহু মতের প্রাধান্য ও মিশ্রণে প্রসঙ্গটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। কারোর সন্দেহ ভরা দৃষ্টি আমার দিকে। ওদের ধারণা, আমি নতুন কোনো নাটক উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। কেউ অতি ভালবেসে আমার নামের পাশে কিছু মিথ্যা বিশেষণ জুড়ে দিতে লাগলেন। যা আমার জন্য মহাযন্ত্রণাদায়ক! এক বুদ্ধিহীন বুদ্ধিজীবি আমাকে গণিতের মহাপ-িত বলে দাবি করলেন। উনার দাবি, আমি আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ, তাই সবকিছু স্বীকার করছি না। এভাবেই দিনগুলো যাচ্ছে। সত্যিই অবাক হচ্ছি, একটি আবেগ তাড়িত রিপোর্ট কিভাবে দেশের শত্রু খ্যাত সোমকে, মহান ব্যক্তিত্বে পরিণত করে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা আমার সাক্ষাতকার নেবার জন্য বার বার নক করছে। আমি সবকিছুকেই অগ্রাহ্য করে যাচ্ছি। মনে মনে ঠিক করেছি মৃদু ভাইয়ের লাইভ অনুষ্ঠানেই নিজেকে পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করব।
উৎসব কল করে জানাল আগামীকাল আমরা শালবনে যাব। দাদাজানের ঐ পোড়াঘরটিতেই অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হবে। সকালে বাবা-মার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। ভোরে উৎসব কল করে জানাল ওরা শীঘ্রই আসছে। আমাকে সাথে নিয়ে রওনা দেবে। মৃদু ভাই বলেছেন, হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যেতে হবে। ওখানে পৌঁছে সব কিছু সেটিং করা চাই । ঐ বাড়িতে অগ্নিকা-ের পর ইলেক্ট্রিক সংযোগ আছে কিনা জানা নেই। সুতরাং, সেখানে গিয়ে ইলেক্ট্রিসিটির নিশ্চয়তা তৈরি করতে হবে। আজকের মতো লেখা এখানেই সমাপ্ত। সারাদিনের বর্ণনা সম্ভব হলে রাতেই লিখব, কিংবা আগামীকাল।
উৎসব নিচে থেকে হর্ণ দিচ্ছে।
(সোম মজুমদারের অসমাপ্ত আত্মকথন এখানেই সমাপ্ত)
[চলবে...]