বসন্তবরণ ভালোবাসার দিনে
সোহেল রানা
আজ বসন্তবরণ ভালোবাসার দিনে
শুধু চারুকলা প্রাঙ্গনই নয়,
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই নয়;
অমর একুশে গ্রন্থমেলাই নয়,
আজ উৎসবমুখর মানুষের যে
ঢল নেমেছে-
তাদের বেশভূষা, চালনবলন
সবকিছুতেই একটা বার্তা:
“মধুর বসন্ত এসেছে এবং মধুর মিলন
ঘটাতেই যে এসেছে।
রাজধানী ছড়িয়ে- আজ পুরো বাংলাদেশ
বাসন্তী উৎসবে মাতোয়ারা রেখেছে।
আজ মাধবীলতা ভালোবাসা দিবসে-
ভালোবাসার অবারিত দুয়ারে
লাল-নীল,
কেউ হিমু সেজে হলুদ পাঞ্জাবি পরে
প্রিয়জনের সান্নিধ্যে সময় করছে পার,
কেউ কপালে টিপ, মাথায় খোঁপা,
কেউবা কানে গুঁজে দিয়েছেন
গোলাপ তরতাজা;
প্রত্যায়ের প্রকাশে বিনিময় ফুল
আর হাতে হাত রেখে
চলতে চলতে পথও যেন ধরেছে গান।
আহা, রিনিঝিনি লাল চুড়ি- প্রেমিকার লাল শাড়ি,
সেই শব্দ যেন আন্দোলিত করছে
লাল অথবা সফেদ পাঞ্জাবি।
উপমা
জাহিদ আজিম
বিধাতা সমস্ত সৌন্দর্য উপকরণ ঢেলে
একাগ্র চিত্তে তোমাকেই তুলেছেন গড়ে,
মনের সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে
অনুপম স্নিগ্ধতায় যতেœ যতেœ নিপুণ করে।
যদি বলি ফুল হয়তোবা হবে বড়ই ভুল
যদি বলি চাঁদ, রয়ে যাবে বেশ কিছু বাদ
ভাবি, কোন উপমা তবে হবে উপযুক্ত?
তুমি ভোরের শিশির, নাকি বর্ষার মেঘ ?
নাকি শান্ত কবির বুকে অশান্ত আবেগ?
নাকি সাগর তলে জৌতি ছড়ানো মুক্তো?
তুমি কি রিমঝিম বৃষ্টি নাকি বর্ণীল রামধনু
নাকি গোধূলির আবির রঙে সাজা ঘরণী?
তুমি কি লাজুক লতা, মায়াবী এক হরিণী ?
ঘুম-মাঝে স্বপ্নচারিণী, জাগ্রত মনে সুখহারিণী?
তুমি কি চঞ্চলা ঝর্ণা অথবা ছুটে চলা নদী?
নাকি শোভাময় পদ্ম ফোঁটা শান্ত সরোবর?
তুমি কি রঙিন ফাগুনে মিষ্টি কোমল হাওয়া
নাকি মন এলোমেলো করা ভীষণ এক ঝড়?
তুমি কি মানবী, না অনিন্দ্য সুন্দর অপ্সরী ?
কল্পনার রাজ্য, বাস্তবের ভূমি খুঁজি আমি,
পাই না কিছু, কোন উপমায় তোমাকে সাজাই ?
আসলে হৃদয় ছোঁয়া অসীম এক মুগ্ধতাই তুমি ।
আমি এখন আর ক্লাস নাইনের ছাত্র নই
দেলোয়ার হোসাইন
আপনি বলতেন- নাইনে উঠলে ছেলেরা লাইনে উঠে!
হয়তো। কিন্তু আমরা সে সময় লাইনটা ঠিক বুঝতাম
না। তবে কিছু ছেলেরা নাইনে উঠার পর ঠিক ঠিক
মেয়েদের কমন রুমে উকি দিতই! দুই একজন ছাড়া
কারো লাইন বেশিদিন ঠেকেনি। এই দু'চারটা চিঠি
চালাচালি আর একটু চোখের দেখা ছাড়া তেমন কোনো
সফলতার গল্প নেই...
স্যারদের কড়া শাসন আর অভিভাবদের চোখ রাঙানিতে
লাইন সংক্রান্ত হাহাকারের গল্প ছাড়া ছেলে-মেয়েরা
তেমন কোনো ইতিহাস লিখতে পারেনি...!
লাইন পেরিয়ে আমরা এখন আর কেউ নাইনের ছাত্র নই।
সবাই মোটামুটি বড় হয়ে গেছি, কেউ কেউ নিজের আলোয়
প্রস্ফুটিত। কারো চোখে অন্য আকাশ, অনেকই সুখি দ¤পতি,
কারো ঠিকানায় এখন এ দেশের নামই নেই। কেউ আছে
নিজের চরকা নিয়ে ব্যস্ত...
আমার কোনো নিশ্চিত আকাশ নেই বলে পনের হাজার
টাকা মাইনে নিয়ে ‘নিজস্ব প্রতিবেদক’র একটি চরিত্রে
খেটে যাই মাসের পর মাস... কপালের লেখা নিয়ে
কিঞ্চিত হতাশা আছে, তবে কারো পোষা গোলাম হইনি
বলে দাসত্বটা ঠিক শিখতে পারিনি। নইলে এক্সট্রা কামাই
হিসেবে পনের হাজারের সাথে দুই চার হাজার টাকা যোগ
করতে পারতাম!
একটা একত্রিশ মার্কস’র অংকে নাইনের সাথে লাইন যোগ
করে যদিও পনের হাজার টাকার একটা যোগফল আমি দাঁড়
করেছি, সেটা আপনার হিসাবের সাথে মিলবে না! আপনি
যে আকাশে ফুল চাষ করেন, আমি এই আকাশের মালি।
আমি এখন আর ক্লাস নাইনের ছাত্র নই, আপনার ছাত্র নই...!
আমার ভালো লাগা
আকিব শিকদার
কোনো কোনো মানুষ এমন হয়-
চোখের দিকে তাকালে যার দেখা যায় মনের অতল
কিছু কিছু পুরুষ এমন হয়-
যেন শ্যামল ঘাসে ছাওয়া কবর শীতল।
একটা দুইটা নারী এতটা লাজুক
যেন ছুঁয়ে দেয়া লজ্জাবতীর পাতা
এতই সরল কারো কারো মুখ-
যেন দিগন্ত বিস্তৃত শালবনের মাথায় মেঘের ছাতা।
কটুকুৎসা উড়িয়ে দেয়ার নির্মল সাহস
কেউ কেউ রাখে
আমার ভালো লাগে সেইসব জন-
কোনো উপমায় বাঁধা যায় না যাকে।
কোথাও তোমাকে দেখি না
রুদ্র সাহাদাৎ
বসন্ত এসে গেছে
কোথাও তোমাকে দেখি না।
কাউকে চাই না
কাউকে খুঁজি না
তোমাকে খ্ুঁজি অষ্টপ্রহর
তোমাকে দেখি রাত্রিভোর।
খুঁজতে খুঁজতে পাহাড় দেখি, ঝর্নাধারা দেখি
খ্ুঁজতে খুঁজতে নদী দেখি, সাগর দেখি
বসন্ত এসে গেছে
কোথাও তোমাকে দেখি না।
হাঁটতে হাঁটতে পথের ধারে, মোড়ে মোড়ে তোমাকে দেখি
হাঁটতে হাঁটতে দোকান মার্কেট রেস্তরাঁয় তোমাকে দেখি
বসন্ত এসে গেছে
কোথাও তোমাকে দেখি না।
ভালো বাসতে বাসতে তোমাকে
ফতুর হলেম নাকী!
ভালো বাসতে বাসতে জীবন
আমাকেই দিলো ফাঁকি।
বৎসর বৎসর বসন্ত আসে বসন্ত যায়
ভালোবাসা আসে না আর সহসায়।