পরকীয়া
সালমা বিনতে শামছ
আমাদের বাসাটা ছিলো ইন্দিরা রোড,
ওহহ, আমাদের নয় ; আপনার বাসা।
আমি যখন নব বধূ হয়ে প্রথম এ বাসায় আসি,
দক্ষিণ কোণের আপনার রুমে আমাকে থাকতে বলা হয়।
প্রথম দু’দিন আমি একটুও খেয়াল করিনি এ রুম জুড়ে একটা বিশাল বারান্দা রয়েছে,
সেদিন মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
ঘুম ভেঙ্গে মৃদু আলোতে তাকিয়ে দেখি আপনি, বারান্দায় বসে আছেন, কাঁচের ডোরে লম্বা পর্দা দিয়ে ঢাকা বারান্দাটা প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়,
মৃদু আলোতে খেয়াল করলাম আপনি হাসছেন ; ওহহ কথা ও বলতেছেন..... কানে মোবাইল ফোন।
আমি অপলক চেয়ে আছি,
আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
এভাবেই চলত... প্রতিদিন নাকি মাঝে মাঝে
আমি জানি না,
কারন আমার তো মাঝ রাতে প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গত না।
আপনি আমায় ভালোবাসেন নাকি ঘৃনা করেন,
কোনটাই জানা ছিলো না, তবে স্বল্পভাষী আপনি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলতেন না।
জানেন, নিজেকে তখন খুব অসহায় লাগত যখন অফিস যাবার তাড়ায় আমি পারি না আপনার গলার টাই বেঁধে দিতে, অবশ্য আপনি কিছু বলতেন না,
আমি গ্রামের মেয়ে, জেনে শুনেই বিয়ে করেছেন।
আপনার বারান্দার পাশে একটা হিজল গাছ ছিলো,
যদিও ঢাকা শহরে এ গাছের সংখ্যা খুব কম,
গাছটা লম্বায় আমার সমান, আমি ভাবতাম কবে গাছটা বড় হবে
আমি হিজল ফুল দেখবো....
আপনার ইচ্ছে ছিলো এখানে আনার পরে আমাকে এসএসসি পরিক্ষা দেয়াবেন,
মাথামোটা আমি নাইন পাস করে ঠাকুমার ঝুলি নিয়ে বসলাম।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা বড্ড অপছন্দ আমার।
তাই হলো না পড়াশুনা।
মাঝে মাঝে আপনার কলিগরা আসতো বাসায়,
আটপৌড়ে আমি তাদের সাথে গুছিয়ে কথাও বলতে পারতাম না, অবশ্য এতে আপনার কোন সংকোচ ছিলো না, মুখ টিপে হাসতেন ; আমায় নিয়ে, নাকি অন্য কিছুর ছলে...
জানি না, জানার ইচ্ছেও ছিলো না।
শট স্কাটের চিকন হিল পরা মেয়ে গুলো দেখতে বেশ সুন্দর, তবে সেই সুন্দরটা কৃত্তিম আস্তরণে বুঝা যায়।
আপনি খুব হেসেই তাদের সাথে কথা বলতেন,
যেমনটা কখনো আমার সাথে বলেন নি।
মেয়ে কলিগ বাসায় এসে অফিসিয়াল কাজ করে,
আর আমি তাদের চায়ের আপ্যায়ন করি, বুঝি নি এ কি সত্যিই অফিসিয়াল কাজ?
একদিন আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা আমায় বলছিলো, “ভাবি, স্বামীকে দেখে রাখবেন”
আমি তখনও বুঝিনি কেন বলেছিলো এ কথা।
এক পাহাড় বিশ্বাস নিয়ে আপনার পানে চেয়ে ভুলে যেতাম সকল লুকোচুরি।
হুট করে একদিন খবর এলো আপনি আমায় ছেড়ে দিবেন,
অভিযোগ.... আমি লেখাপড়া না জানা এক গ্রামের মেয়ে,
বুঝি না কালচার
বুঝি না সমাচার।
চৌকাঠে প্রণাম করে প্রস্থান করি আপনার বাড়ি থেকে,
কেটে গেলো কত-কত গুলো দিন।
ইন্দিরা রোডের বাড়িটা আজও আছে,
পাশ কেটে যাওয়ার সময় রিকশাওয়ালা মামাকে বলি
‘ভাই একটু আস্তে চালান’
আমি অপলক তাকিয়ে থাকি সফেদ দালানটায়,
হিজল গাছ কত্ত বড় হয়ে গেছে,
ঢেকে গেছে বারান্দাটা।