চলতি পথে...
রহমতুল্লাহ শিহাব
ঘুম ভেঙে গেল আচমকা। চোখ খুলে আবিষ্কার করলাম আমি গাড়িতে। গাড়িটি স্থীর হয়ে আছে। গরমে ঘেমে গেছি। ইঞ্জিন থেকে এক ধরণের ভ্যাপসা গন্ধ বেরুচ্ছে। বিরক্তির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বাইরে তাকালাম। একটা পুরাতন মুদি দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা ফকিরহাট। একি ? ফকিরহাট এসে গেছি ? আমাদের তো এখানেই নামার কথা। সফর সঙ্গী বিন ওমরকে ডেকে তুললাম। সেও ডুবে ছিল গভীর নিদ্রায়। বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম। ঘুম না ভাঙলে কত দূর চলে যেতাম আল্লাহ মালুম। দ্রুত ভাড়া দিয়ে নেমে পড়লাম। এক মাহিন্দ্র ড্রাইভার দৌড়ে এলো আমাদের দেখে।
-ভাই ওঠেন ওঠেন। এইডে বাগেরহাট যাবে; এহনি ছাইড়ে দেব।
হাতে খুব একটা সময় নেই আমাদের। মাহিন্দ্রটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পুরোটা ফাঁকা। এখনি উঠে বসে থাকা বোকমি। পাশের চা-স্টলে দৃষ্টি আটকে গেল। চুলোয় মাঝারি ডেগচিতে বুদ বুদ তুলে দুধ গরম হচ্ছে। কাছে গেলাম। আমরা দুজনেই দারুণ চা-খোর। অর্ডার দিয়ে দোকানের বেঞ্চিতে বসে পড়লাম। তেমন রোদ্দুর নেই আজ। তবু আকাশটা দারুণ। নীলের বুকে সাদা মেঘেদের অলস স্থীরতা। দুয়েকটা পাখি ডানা মেলে শূন্যে ভাসছে। বিন ওমরের সাথে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দেখছি। একটা ভাতশালিক এসে বসল দোকানের পাশে প্রাচীণ ডুমর গাছটার পাতাহীন এক ডালে। দোকনির টুংটাং শব্দে ফিরলাম তার দিকে। চা তৈরী হচ্ছে। বাতাসে দুধ-চায়ের মনোহরী ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। চা আরেকটু স্পেশাল করতে দোকানী চামচে করে খানিকটা মালাই ভাসিয়ে দিলেন চায়ের কাপে। তার ওপর সিক্রেট মশলা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। গাছের ভাতশালিকটি ডেকে উঠল হঠাৎ। ডানা ঝাপটে উড়েও গেল। পাতাহীন ডালে ঝুলে রইল বিশ্রী শূন্যতা। আমি কাপে চুমুক দিলাম। দারুণ স্বাদ। চলতি পথের ক্লান্তি ছাপিয়ে সময়টা রঙিন হয়ে উঠল যেন।