নীলু সম্ভবত আমাকে ভালোবাসে !
ফরিদুল ইসলাম নির্জন
নীলুকে আই লাভ ইউ বলতেই চোখ বড় বড় করল। এদিক-সেদিক তাকাল। সম্ভবত কোনো কিছু খুঁজতে ছিল। আমিও ভয়ে ছিলাম। মনে মনে ভাবছি নীলু ইট খুঁজছে না তো? গ্রামের মেয়ে ইট দিয়ে মাথা ফাটাবে। এই বিশ্বাস আসছিল না। তবে তার মতি-গতি দেখে সন্দেহ জাগছিল। সে কি আমাকে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেবে?
আমিও এদিক-সেদিক তাকাচ্ছি। আর দেখছি দৌঁড় দিলে কেউ দেখবে না তো! সোজা রাস্তা এক দৌঁড়ে বাড়ি ফিরব। ভাবতেই নীলু আবার আমার দিকে তাকাল। অগ্নিমূর্তি রূপ। অনেকটা ভরকে গেলাম। আতঙ্কে বুক ধড়ফড় করতে লাগল। হৃদয়ের মাঝে মনে হচ্ছিল হাতুড়ি দিয়ে কেউ পেরেক গাঁথছে।
আসলে জীবনে প্রথম প্রেমের অফার মনের মধ্যে তো এমনটাই হবে। এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। এমনটা না হওয়াটা হলো অস্বাভাবিক। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির মাঝে নীলুর মুখে কথা ফুটল।
প্রথম কথাটি, ‘আপনি’ বলতেই থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলাম, ‘ হ্যাঁ, আমি। আমি ছাড়া তোমাকে বোঝার মতো কেউ নেই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচুম না।’ ডায়লগটা কোন জানি বাংলা সিনেমা থেকে বাগিয়ে নিয়েছিলাম। এবার নীলু চিৎকার দিয়ে বলল, ‘এবার থামুন। অনেক হয়েছে। আপনার সাহস দেখে আমি হতবাক? আপনি আমাকে...
আর বাকিটুকু শব্দ উচ্চারণ করার আগেই আমি তার কাছে হাত জোড় করে বললাম,‘আমায় ক্ষমা করে দাও। প্লিজ আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার বাড়িতে যেন তুমি ভুলেও এই কথা বল না। তাহলে নির্ঘাত আমাকে কয়েক দিন নির্বাসনের পথ বেছে নিতে হবে। তুমি আমাকে যা ইচ্ছে বলতে পারো। তুমি জানো আমি খুব ভিতু মানুষ। আমার হৃৎপি- বোধ হয় ছোট। প্লিজ আমার বাবা-মাকে বলে দিও না।’
নীলু বলল, ‘আপনার বাবা-মাকে তো বলার পাশাপাশি আপনার দাদা-দাদির কাছেও অভিযোগ দিয়ে আসব। বাড়ীতে এসে আমার মা-বাবাকে বলে গ্রামে বিচার ডাকবো। আপনি যেন এই গ্রামে আর থাকতে না পারেন আমি সে ব্যবস্থা করে দেব! আপনার সাহস দেখে আমি অবাক।’ বলেই রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করল। আমি আর কী বলব। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
আমার ভালোবাসার অনুভব তখন যেন বুকের মাঝে ধরপাকড় করছে। সে যেভাবে হেঁটে যাচ্ছে। আমি ভয়ে অস্থির। আমি এবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘আমার বাবা মাকে প্লিজ বলে দিও না।’
সে সোজা জবাব জানিয়ে দিল,‘ বাবা-মাকে সে অবশ্যই জানিয়ে দেবে। তা না হলে তার কোনো উপায় নেই।’ আমি নিরুপায় হয়ে তার আগে আগে রওনা দিলাম। সোজা বাড়ি ফিরলাম। রুমে ঢুকে তড়িঘড়ি করে একটা ভালো জামা নিয়ে সোজা বাড়ি প্রস্থান করলাম।
ভালোবাসা কেন যে এভাবে বাড়ি ছাড়া করে সেটাই বুঝতে পারলাম না। ভয়ে ভয়ে সারাটা দিন বাড়ির বাইরে থাকলাম। সন্ধ্যার পা টিপেটিপে বাসায় ফিরছিলাম। রুমে ঢুকতেই মা বলল, এই মাভিন, তুই এই রকম হয়ে যাচ্ছিস ক্যান?
‘মা কেমন হয়ে যাচ্ছি।’
‘নীলু এসেছিল। তোর নামে হাজার অভিযোগ দিয়ে গেল। ভাবতেই অবাক লাগে তুই আমার ছেলে।’
‘মা বিশ্বাস কর, আমার দোষ নেই। আমার ভুল হয়ে গেছে।’
‘ভুল হয়ে গেছে মানে। তুই মেয়েটির কাছ থেকে কত দিন আগে বই আনছিস। তাকে ফেরত দিতে হবে না। মেয়েটি বলল কত দিন আগে তার কাছ থেকে বই নিয়ে আসছিস। আর তুই কি-না তাকে বই ফেরত দিসনি। তুই এত মন ভোলা পোলা হয়েছিস। যা হাত-মুখ ধুয়ে খেতে আয়।’
মায়ের মুখে কথাগুলো শোনার পর সোজা রুমে গেলাম। রুমে ঢুকে হাঁফ ছাড়লাম। বুঝতে পারলাম নীলু আই লাভ ইউ অফারের কথা মায়ের কাছে বা বাবার কাছে অভিযোগ করেনি। বরং উল্টো মিথ্যা একটা অভিযোগ দিয়ে গেছে। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য। এই সহজ সমীকরণ থেকে মাথায় আসছে নীলু সম্ভবত আমাকে ভালোবাসে। না হলে তো আমার নামে নালিশ করত।