অপার্থিব প্রেম
এস. কবীর
সাহিরের সাথে সাথীর প্রথম পরিচয় ট্রেনে। আমার সাথে পরে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ফোনে। আমি কোনদিন দেখিনি তাকে। ফোনেই বন্ধুত্ব। টাটা ফোনের ফ্রী কলের দৌলতে পূর্বরাগের সৃষ্টি। বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। একদিন ফোন না করে থাকতে পারি না কেউ। কী যে কথা থাকে এত! ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যায় বুঝতেই পারি না।!
‘তোমার হবি কী সাথী?
‘গান, ‘আমারও পরানও যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো...।
‘সত্যি?
‘হ্যাঁ, সত্যি। আর তোমার?
‘আমি বলেছিলাম- কবিতা। ‘তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে, আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে।’
আজ সকাল থেকেই সাথীর মেজাজটা খারাপ। কেমন যেন গুম হয়ে আছে। ফোনেও ঠিক মত কথা বলছে না। রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর আবার ফোন করলাম।
কী হয়েছে তোমার?
‘কিছু না।’
কিছুতো বটেই- শরীর খারাপ?
‘না’
‘তবে?
‘তবে কী?
দু’জন্যেই অনেক্ষণ চুপ। নীরবতা ভঙ্গ করতে আমিই বললাম- ঘুম আসছে না? মাথায় হাত বুলিয়ে দেব? দীর্ঘক্ষণ নিরুত্তর দেখে বললাম- আচ্ছা দিচ্ছি, তুমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। এই দেখ তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। এই দেখ গালে হাত বুলালাম- এই দেখ চিবুকে। বুঝতে পারছো? এই দেখ ঠোঁটে- গলায়-বুকে-পেটে- আর একটু নিচে...! রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করে ফোনের ওপার থেকে শুনতে পাচ্ছি কেবল উদ্দীপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুত আসা-যাওয়ার শব্দ! হয়তো এই প্রথম পেলাম অপার্থিব প্রেমের নিগূঢ় স্বাদ! পরের দিন সকালে গত রাত্রের প্রসঙ্গ তুলতেই সাথী লজ্জা পেয়ে কেবল বললো-‘যা’।
৩
দিন কয়েক পরে অফিস থেকে ফেরার পথে বাস থেকে নেমেই দেখি ফোনটা নেই! বুকটা ধড়াস করে উঠলো! কী হবে? সাথীকে ফোন করবো কিভাবে? নাম্বার তো কোথাও লেখা নেই! হন্তদন্ত হবে পিসিও খুঁজতে লাগলাম।
‘হ্যালো! দাদা, ফোনটা আমার, বাসে।
‘হ্যাঁ- আচ্ছা, পিজির এমারজেন্সির কাছে এক্ষুনি যাচ্ছি।’ পিজির পিসিও থেকে আবার ফোন করলাম।
‘দাদা আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না তো? কী? উডবার্ন-এ? আচ্ছা। ‘আবারও ফোন করলাম। করুণ স্বরে জিজ্ঞেস করলাম ।
‘দাদা আপনি কি ফোনটা দেবেন? রাত অনেক হল যে?
অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল যেন এক রসিকতার সুর।
‘ফোনটা তো ভালোই লাগছে। আপনি না হয় আর একটা কিনে নিন।’
মুদিয়াল, কলকাতা, ভারত