আজও মনে আছে তার
মাহবুব এ রহমান
ট্রেনে সিট পাইনি। ভার্সিটি থেকে ষোলশহর স্টেশন পর্যন্ত দাঁড়িয়েই আসতে হলো। তারপর একটা সিট পেলাম। বসেই অভ্যেস মতো মোবাইলটা হাতে নিলাম। একটা অচেনা নম্বর থেকে তিন তিনটা কল! ঝামেলায় হয়তো টোনটা কানে বাজেনি। এইতো চার বা পাঁচ মিনিট হবে কলগুলো এসেছে। একটু পর আবারো কল। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ....
‘হ্যালো, আপনি কি রিয়াজ?
‘হ্যাঁ, আমি রিয়াজ। কে বলছেন, প্লিজ!
‘আমি তিশা, চিনতে পেরেছেন?
‘স্যরি, এই নামে তো আমার পরিচিত কেউ নেই, আপনি বোধহয় ভুল নম্বর এ কল করেছেন।
‘না তো, আমি সঠিক জায়গাতেই কল করেছি।
‘কেমনে বুঝলেন?
‘আমি তাসনিম তিশা বলছি। ওই যে দেবিদ্বারের।
থতমত খেয়ে গেলাম। একটু একটু মনে পড়তে লাগলো ওর কথা। আচ্ছা, আমি এখন ভার্সিটির শাটলে। ক্যাম্পাস থেকে ফিরছি। বাসায় গিয়ে কল দিচ্ছি, কেমন!
এই বলে ফোনটা কেটে দেই। ধীরে ধীরে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হতে থাকে। সর্বশেষ ওকে কবে দেখেছি ঠিক মনে নেই। হয়তো এস.এস. সি’র ফলাফলের দিন। একই গ্রামে বাড়ি আমাদের। সেই প্রাইমারি থেকে একসাথে স্কুলে যাওয়া আসা। হাইস্কুলে এসে তেমন একটা আগের মতো করে একসাথে থাকা হয় নি। কিন্তু কেমন জানি একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল ওর প্রতি। তারও আমার প্রতি যে দুর্বলতা ছিল কিছুটা হলেও তা বুঝতাম। কিন্তু এ নিয়ে কোন কথা বলি নি দুজন। এভাবেই কেটে যায় হাইস্কুল জীবন। এস.এস.সি’র পর আমি চলে আসি শহরে। তারপর শহরের একটা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করি। এখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
গ্রাম ছাড়ার পর থেকে ওর সাথে আর দেখা বা যোগাযোগ কোনটাই হয় নি। সেবার বাড়িতে যাওয়ার পর আম্মুর মুখে শুনেছিলাম ওর নাকি বিয়ে হয়েছে গতবছর।
ভাবতে ভাবতে ততক্ষণে বাসায় চলে আসি। গোসল আর খাওয়া-দাওয়া সেরে কল দিলাম। কুশলাদি বিনিময়ের পর হঠাৎ একটা প্রশ্ন করে বসে তিশা। বেশ জটিল প্রশ্ন!
‘এই, তুমি কি আমাকে ভালোবাসতে?
এমন আচমকা প্রশ্নের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমতা আমতা করে বললাম।
‘হঠাৎ এরকম প্রশ্ন?
‘না, আসলে একটা কথা কি জানো? সেই হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকে তোমাকে আমার কেমন জানি ভালোলাগতো, কিন্তু বলতে পারিনি সাহস করে। বিয়ের পর থেকে সবগুলো স্মৃতি এসে নাড়া দেয় মনে। ইদানীং তোমাকে খুব ফিল করি। ভুলে থাকতে চেয়েও পারিনা।
কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলে তিশা। আমার চোখেও কখন পানি চলে আসে টেরই পাইনি। কয়েক মুহূর্তের জন্য হয়ে যাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হারিয়ে যাই সেই সোনাঝরা দিনগুলোতে... তাহলে আজও মনে আছে তার!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়