প্রেম ও সাহিত্য
মুহাম্মদ নুরুল করিম মাসুম
মানব সভ্যতার ইতিহাস জীবন সম্পর্কিত ইতিহাস। প্রতিটি ইতিহাসের মূলে রয়েছে প্রেম। আর প্রেমের কারণেই পৃথিবীর প্রতিটি ইতিহাস ঐতিহাসিক হয়ে আছে। উদাহরণ স্বরূপ বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, তবে আমি বলবো স্বদেশ প্রেম তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। কারণ এই প্রেমের বিবিধ রূপে সংগঠিত হয়েছিল নানা আন্দোলন।
এই প্রেমের সংর্ঘষে জন্ম নেয় সাহিত্য। আর এই প্রেম ও সাহিত্য জীবনের একটি পর্ব।
যদি বলা হয়, জীবন সম্পর্কিত কিছু পর্ব আমার কাছে খুব সহজ, আপনার কাছে খুব কঠিন। আবার আপনার কাছে জীবন সম্পর্কিত কিছু পর্ব খুব সহজ হলে, আমার কাছে খুব কঠিন।
এই যে বললাম, কঠিন ও সহজের কথা, এই কঠিন ও সহজ জীবনেরই পর্ব। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় জীবন বহু পর্বের সমষ্টি। আর এই জীবন শব্দটা ব্যবহার হয় পূর্ণ অর্থে বা অপূর্ণ অর্থে।
কারণ, জীবনে যেভাবে আসে সফলতা সেভাবে আসে ব্যর্থতা। আর জীবনের সে সফলতা আসতে পারে, পরীক্ষার মাধ্যমে, রাজনীতির মাধ্যমে, ব্যবসার মাধ্যমে এবং জীবনে সে সফলতা আসতে পারে প্রেমের মাধ্যমে। আর জীবনের এখানেই পূর্ণতা বা প্রাপ্তি অর্থে ব্যবহার হয়।
জীবনের ব্যর্থতা বা হতাশার কারণ ঐ পরীক্ষা, রাজনীতি, ব্যবসা ও প্রেম হতে পারে। আর এখানে জীবন অপূর্ণতা বা অপ্রাপ্তি অর্থে ব্যবহৃত হয়।
তাই বলা যায় জীবনে বহু কিছু আসে এবং সে সাথে আসে প্রেম ও সাহিত্য।
আচ্ছা, সাহিত্যর সৃষ্টি হয় প্রেম থেকে, না প্রেম সৃষ্টি হয় সাহিত্য থেকে? এমন প্রশ্ন যদি করা হয় তবে আমি দু ভাবেই উত্তর দিবো। আমার মতে, সাহিত্য থেকে প্রেমে সৃষ্টি হয়! কারণ সাহিত্য চর্চা করতে করতেই সাহিত্যিক বিভিন্ন ভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে প্রেমে পড়ে আর সে প্রেম ¯্রষ্টার প্রেম বা তাঁর সৃষ্টির প্রেমে, আর সে প্রেমের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমেই তার রচনাশৈলী সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলে।
এবং আমার মতে প্রেম থেকে সাহিত্যর সৃষ্টি। কারণ আমার এক বন্ধু প্রেম পর্ব শেষ করে সাহিত্যর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর কারণ হলো, না পাওয়ার বেদনায় মনে যে সুর বাজে তা কবিতায় রূপ নেয়, আবার সে সুর রূপ নিতে পারে গল্প, উপন্যাস এবং চিত্রকলায়।
আমি মনে করি, জীবনে যদি প্রেম আসে সাহিত্য অবশ্যই ক্ষণিকের জন্য হলেও আসবে। আগেই আংশিক বলেছি, সে প্রেম সৃষ্টির্কতা বা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির জন্যও হতে পারে।
একটু গভীর চিন্তার সাথে উপলদ্ধি করলে লক্ষ্য করা যায়, সাহিত্যের প্রতিটি ধাপে ধাপে প্রেম মিশে থাকে। সে সাথে প্রেমের প্রতিটি ধাপে ধাপে সাহিত্য মিশে থাকে। আমার মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাহিত্যিক চিন্তা ধারার মূলে, ভালোবাসা ও প্রেম। সে সাথে বলা যায়, ভালোবাসি বা তোমাকে ভালোবাসি এ শব্দযুগল পৃথিবীর সবচে বড় সাহিত্য!
কারণ, পৃথিবীর সর্বাধিক সাহিত্যর বর্ণনা শৈলীতে প্রেম ও ভালোবাসা শব্দটা স্থান পেয়েছে।
আমাদের ব্যাক্তি জীবন মাঝে মাঝে রোমান্টিক হয়ে উঠে, অর্থ্যাৎ প্রবল আবেগ প্রবণ হয়ে উঠে। আর আবেগ প্রবণ হয়ে উঠার মূল কারণ হলো, সুখ ও দুঃখে। মানুষ যেমন সুখে আবেগ তাড়িত হয়ে অনেক অনুভূতি প্রকাশ করে, ঠিক তেমনিভাবে মানুষ প্রবল দুঃখে আবেগ তাড়িত হয়ে অনেক অনুভূতি প্রকাশ করে। আর সে অনুভূতির মূল নির্যাসটাই সাহিত্য। অতএব, বলা যায় মানুষ যে অনুভূতি প্রকাশ করে সেটাই সাহিত্য!
কেউ কেউ বলে, সাহিত্যর আরো একটি অন্যতম দিক হলো নারী, আজকাল একটা কথা অকপটে শুনা যায়। কথাটা হলো, নারীত্ব ছাড়া কবিত্ব হয়না।
কথাটা সত্য , কারণ নারী ¯্রষ্টার এক প্রকার সৃষ্টি। ¯্রষ্টার সৃষ্টির প্রেমে পড়তে হবেই এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া, অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যকরা নারীর প্রেমে পড়েই সাহিত্যর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবুও আমি, কথাটা নিয়ে তেমন একটা ভাবতাম না। একটা সময় আমি ভাবতে লাগলাম। কারণ, আমি এর আগেও বলেছিলাম, যখন আমার এক বন্ধু প্রেম পর্ব শেষ করে সাহিত্যর দিকে ঝুঁকে পড়েছে, এবং তার প্রাথমিক সাহিত্য চর্চার ধরণ, নারী সম্পর্কিত ছন্দের মিলে কাব্য চর্চা।
বন্ধু, তার প্রিয়তমা উদ্দেশ্য করে লেখেছিলো..
‘আমি উৎসর্গিত হবো তোমার দেয়ালে’
যদি তুমি রাখো আমায় তোমার খেয়ালে।
এই যে আবেগের মাধ্যমে অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে সাহিত্যর রাজপথে তার পথ চলা। এই পথ চলার মূল উপাদান ছিলো প্রবল মায়া ও প্রেম।
বুঝা গেল, তার জীবনের চেয়ে এখন প্রেম ও সাহিত্যে প্রতি তার আগ্রহ বেশি।
যদি বলা হয়, জীবনের থেকেও প্রেম ও সাহিত্যর জাগরণ কত বেশি? আমি বলবো আরো বেশি এবং প্রবল বেশি! তারপর এই অংশে আমি আর কিছু বলবো না, বাদ বাকী চিন্তা দর্শন আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
এবং আমি আসলেই উপলদ্ধি করতে পারলাম, হয়তো নারীত্ব ছাড়া কবিত্ব হয় না!
অতঃপর বলা যায়, সাহিত্যর রচনা শৈলীতে প্রেম জিনিসটা যে ভাবে যুগযুগ ধরে স্থান পাচ্ছে। সে সাথে স্থান পাচ্ছে জীবন ও জীবনের কথা।
আর জীবন আছে বলেই প্রেম আছে, প্রেম আছে বলেই সাহিত্য চির অমলিন। তারপরেও সব কালে জীবন পাতার পতন হলেও জীবন পাতার মূলে পতন হবে না, এবং পতন হবে না প্রেম ও সাহিত্যর। কারণ, এ পৃথিবীর প্রতিটি প্রেমে, প্রতিটি সাহিত্যে আছে, জীবনের অনিদ্র জাগরণ।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
নোয়াখালী সরকারি কলেজ।