শব্দমালা : মো. আরিফুল হাসান








শব্দমালা  
মো. আরিফুল হাসান


আমার ক্লান্তিগুলো

আমার ক্লান্তিগুলো, ঘুম ঘুম চোখগুলো তোমাকে দিলাম। তুমি আমাকে দেখালে ঘনরাতের মাধুর্যশোভিত আলিঙ্গনের বিষ
আমি তোমাকে বললাম, আজ থেকে তোমার বাগানে যে শ্বেতপদ্মটি ফুটবে সগৌরবে, সেখানে আমার সুগন্ধ তুমি পাবেই

তুমি আমাকে বললে, এমন যদি হয় জীবনের দার্শনিক ভাষ্য, তাহলে তো আমরা সবাই পরবাসে মাতৃভূমির সন্তান সন্ততি
তুমি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলে, তোমার অন্তিম যাত্রায় দু’য়েকটি ধুপকাঠি জ্বেলে দিয়ে চুপ করে থাকলাম মহাকালের মতোই

তুমি বললে, চলো না পাল্টাই আমাদের ধারাপাতের জীবন। এই বস্তুমুখী হতাশার থেকে চলো দূরে কোথাও হারিয়ে যাই
আর বাগানের পরিবর্তে অরণ্যের প্রতি অধিক যতœশীল হই, যেনো বা আমরা ঠিক আমাদের শেকড়ের সন্ধান করতে পারি।



আমায় তুমি সর্বনাশে নাচাও

আমায় তুমি সর্বনাশে নাচাও
ধ্বংসস্তুপে হাসাও অট্ট হাসি
আমার হৃদয় বানের জলে ভাসাও
নষ্ট হতেই আজকে ভালোবাসি।

আমায় তুমি খুন করে দাও, খুন
আমায় তুমি দিনভিখারী করো
আমার বুুকে বয়ে যাক টাইফুন
আঘাত তুমি করো আমায় আরও

আমায় তুমি পাগল করে দাও
ঘর যেনো যাই ছেড়ে তোমার নামে
তোমার দুঃখের সঙ্গী করে নাও
লিখো চিঠি, বেদনা-রং খামে



বিরহকলার শেষে

যে মাটিতে আছাড় খেয়েছো তুমি
সে মাটি ধরেই তো উঠে দাঁড়াবে আবার
তবে সেভাবে নয়, যেভাবে তুমি পড়েছো
উঠে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটা আরেক

তোমাকে কয়েকটি বসন্ত দেয়া হলো
তুমি তার গায়ে মাখলে কাদা
হায় নরগাধা নিজ বিষে নিজে নীল হলে

আরেকটু দুপুর ভাবলে ক্ষতি নেই, ভাবো
এ জীবন নিতান্ত দুর্ভাবনাময়
এ জীবনে তুমি আমি গাঙচিলই হবো






ধানফুল ও সুরভী সাগরের গন্ধ

সুরভী সাগরের গন্ধ :
আমরা তাকে দেখা মাত্রই চিৎকার করতে থাকলাম, বাঁচাও বাঁচাও, কে আছো বাঁচাও
আমাদের অগ্রবর্তী সারেং সবাইকে হুশিয়ার করে দিয়ে বললো- সরে যাও, সরে যাও
এখান থেকে অন্তত একশত নটিকেল মাইল দূরে আমাদের জন্য রয়েছে ছায়ার দ্বীপ
চালাও, আর বৈঠা আরো জোরে, আরো জোরে চালিয়ে যাও, হে যোয়ান দারবাহীগণ
তোমরা তোমাদের অক্লান্ত ভৈরবে ভেঙে ফেলো ঢেউয়ের প্রাচীর। যাও, সামনে যাও

ধানফুল :
হাজার হাজার দীপপুঞ্জ পাড়ি দিয়ে শ্রমিকেরা ঘামঝরা দেহটিকে মাটিতে এলিয়ে দেয়
বোবা কান্নারাই তাদের শত্রু। তারা আ-বাস্তব উল্লাস ধ্বনি করে এবং গড়াগড়ি খায়
আর বৃহস্পতিবার রাত্রির শেষে তাদের চোখে মুখে ফুটে থাকে শষ্যের জৌলুস হাসি
হাটবারে তাদের কর্মকোলাহল বেচাকেনা হয়। দিনবদ্ধ স্বরলিপি লেখা থাকে প্রান্তরে
ধানের গন্ধে কৃষকের যৌবন আসে। কামে ডাকে রোদ-বৃষ্টির দেহটির নিবিড় শয়নে



এক খাবলা মাটির দোয়াত

কতো কথা লেখা থাকে প্রেমে
সময়ের অতীত কারো কা-জ্ঞান থাকে না

তোমাকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে
সত্যিই দুঃখিত চাঁদ
তুমি ওঠো, হাসো খেলো ঘুর্ণি বিবাদ

মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে নেই
একদম বেমানান আমাদের কদাকার মন


যে যুদ্ধের অবসান নেই

সকাল থেকেই আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়। আমরা ঘুমের ভেতরেও যুদ্ধ করি। আমাদের ক্ষান্তি নেই। আমাদের বিরাম নেই। বিশ্রামহীন ভাবে আমরা যুদ্ধ করে যাই। দিনে কিংবা রাতে, সাঁঝে কিংবা প্রাতে, আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রতিপক্ষ হয়ে ঝাঁপিয়ে পরি, নিজেরই উপর।

আমাদের যুদ্ধ শুরু হয় জন্ম থেকে। আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকে মৃত্যু অবধি। আমরা একেক জন একেকটি যোদ্ধা। আমরা একেক জন একেকটি অস্ত্র। আমরা আমাদের অস্ত্র তাক করি নিজেদের দৃষ্টি বরাবর। ট্রিগারে চাপ দেই নিজেরই আঙুলে। আমরা নিজেরাই ঢলে পরি।

আমরা আমাদের যুদ্ধজীবনের ইতিহাস গড়তে পারি। আমরা আমাদের যুদ্ধাহত জীবনের সমাপ্তি করতে পারি না। আমাদের যুদ্ধ চলমান থাকে। উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকে আরেকটি যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত। আমরা যুদ্ধে যাই।

আমরা হুংকার দেই নিজের কণ্ঠে। আমরা চেপে ধরি নিজের কন্ঠ। আমরা আমাদের লাশ পিঠে বহন করে আবার ঝাঁপিয়ে পরি ভয়ানক যুদ্ধক্ষেত্রে। আমাদের জীবন আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র। আমাদের পৃথিবী আমাদের যুদ্ধক্ষেত্র। আমাদের অন্তরীক্ষ আমাদের দানবীয় যুদ্ধক্ষেত্র।

আমরা নিজেদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই যখোন গনগনে রোদ উছে আসমানে। আমরা নিজেদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হই যখো বৃক্ষ আমাদের ছায়া দান করে। আমরা জলে স্থলে যুদ্ধে লিপ্ত হই। আমরা আমাদের গৃহস্থালিতে যুদ্ধে লিপ্ত হই। নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।

আমাদের হাতগুলো মেতে উঠে হত্যায়। আমাদের রক্তগুলো নেচে উঠে ধ্বংসে। আমাদের বিবেকগুলো অন্ধ ক্রোধে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হই। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে। নিজেকে খুন করি নিজেরই হাতে। আমাদের যুদ্ধ কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব বাাঁচাতে।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট