হঠাৎ দেখা
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
অফিসের কাজ সেরে ঢাকায় ফিরছে ফাহিম। স্টেশনের প্লাটফর্মের কোলাহল থেকে একটু দূরে সরে সে সিগারেট টানছে। তখন বেশ মনোযোগ দিয়ে মোবাইল ফোনে জরুরি ইমেইল গুলো চেক করে নিচ্ছে। হঠাৎ করেই ওর কানের কাছে ভেসে আসে চিরচেনা এক নারী কণ্ঠস্বর। ফাহিম তখন চমকে উঠে এবং মাথা ঘুরিয়ে চারপাশ তাকিয়ে দেখে নেয়। নাহ, পরিচিত এমন কারো মুখ এখানে দেখতে পায়নি। সত্যি বলতে, এখানে সেই চিরচেনা মুখটি দেখতে পাওয়ার কথাও নয়। হয়তো এটা তার মনের ভুল আর নয়তো কাকতালীয় ভাবে নীরার কন্ঠস্বরের সাথে কোন এক নারীর কন্ঠের মিল আছে। হয়তো সে এমন কোন এক নারীর কন্ঠস্বর শুনেই এভাবে চমকে উঠেছে। তাই এই ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই। সে আর এটা নিয়ে ভাবতে চাইছে না। তবুও কেন জানি ভাবতে না চাইলেও বারো বছর আগের অনেক স্মৃতি তার চোখের সামনে অবলীলায় ভেসে বেড়াচ্ছে। ঠিক তখনই হুইসেল বাঁজিয়ে প্লাটফর্মে চলে আসে ঢাকার ট্রেন। সবাই তড়িঘড়ি করে ট্রেনে উঠতে থাকে। ফাহিমও সবার সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রেনে উঠে টিকেট নির্ধারিত বগির নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে বসে। মূহুর্তের মধ্যেই তার মাথা থেকে বের হয়ে যায় নীরার কথা। সে তার আশপাশের যাত্রীদের দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখে নেয়। তার পাশের সিটে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও মুখোমুখি সামনের দুই সিটে এক নব-দম্পতি। তার বাম পাশের চারটি সিটে আরও এক দম্পতি তাদের দুই সন্তান নিয়ে বসেছে।
ট্রেন আবারও হুইসেল বাঁজিয়ে সামনের দিকে ছুটে চলা শুরু করে। নীরার বুকের ভেতরটা ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। প্লাটফর্মে ফাহিমকে দেখার পর থেকেই সে যেন নির্বাক হয়ে গেছে। ট্রেনে উঠার সময় বেখেয়াল হয়ে পায়ে উষ্ঠা খেয়ে রীতিমতো ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা ছিল। যদিও অল্পের জন্য এই যাত্রায় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি কিন্তু পায়ে বেশ ব্যথা পেয়েছে। বুড়ো আঙুলের নখ উল্টে রক্ত বের হচ্ছে। নীরার হৃদয়ে যে পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, এর তুলনায় ওটা যেন কিছুই নয়। তার চোখে সামনেই বসে আছে ফাহিম। সে মাঝেমধ্যে স্বামীর চোখের আড়ালে ফাহিমকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছে। নীরা এমন ভাবে বোরকা পরে আছে, তার চোখ জোড়া ছাড়া আর কিছুই দেখার উপায় নেই। যদিও বিয়ের আগে সে কখনোই বোরকা পরেনি। তবে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চাপে বলতে গেলে বাধ্য হয়েই বোরকা পরা শুরু করে। এই কারণে তার মনে অনেক কষ্ট থাকলেও আজ সে বোরকা পরার উপকার বেশ ভালোই উপভোগ করছে। নীরার পাশের সিটে বসা আছে তার আট বছরের ছোট্ট ছেলে রামিম ও মুখোমুখি সামনের দুই সিটে তার স্বামী ফরহাদ হোসেন ও দশ বছরের কন্যা খুকি। হঠাৎ করেই খুকি দেখতে পায় তার মায়ের পায়ের আঙুল থেকে বেশ রক্ত বের হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তখনই সে চেচাঁমেচি ও কান্নাকাটি শুরু করে একটা হুলুস্থুলু কান্ড ঘটিয়ে দেয়। বগির আশপাশের সবার দৃষ্টি তখন তাদের দিকে। নীরার স্বামী ও দুই ছেলে-মেয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠে এবং এই অবস্থার কারণ জানতে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে। সে তখনও চুপ করে বসে থাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে অনেকটাই নিচু স্বরে প্রায় ফিসফিস করে তাদের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলে। তখন তার স্বামী নারীকে বেশ দোষারোপ করতে থাকে।
ট্রেন চালু পাওয়ার পর ফাহিম ব্যাগ থেকে পত্রিকা বের করে মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকে। বেশ কিছু সময় পর যখন তার বাম দিকের সিটের যাত্রীদের মধ্যে হুলুস্থুলু কান্ড, তখন সে আর পত্রিকার দিকে মনোনিবেশ করে থাকতে পারলো না। বোরকা পরা ভদ্র মহিলার পায়ের নখের দূরাবস্থা দেখে তার বেশ মায়া হচ্ছে। তখন সে তার ব্যাগ থেকে আফটার সেভ লোশন বের করে ওই মহিলার স্বামীর হাতে দিয়ে বলে, ‘ভাইয়া, ভাবির পায়ে লাগিয়ে দিন। একটু জ্বালাপোড়া হলেও কিছু সময় পরেই আরাম পাবেন এবং ইনফেকশনও হবে না’। ওই ভদ্রলোক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফাহিমের কথা মতো আফটার সেভ লোশন তার স্ত্রীর পায়ে কয়েক ফোঁটা ঢেলে দিলেন। পায়ের ব্যথা সহ্য করে চুপ করে বসে থাকলেও আফটার সেভ লোশনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ওই ভদ্রমহিলা মোটামুটি উচ্চ স্বরে উফ্ করে চেঁচাতে থাকে। তখনই ফাহিমের বুকের ভেতরটা নড়েচড়ে উঠে। আবারও সেই পরিচিত নারী কন্ঠস্বর, যেন ঠিক নীরার মতো করেই চেঁচিয়ে উঠেছে। ফাহিমের মনে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হল, তাই সে ওই বোরকা পরা ভদ্রমহিলার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। তখনই ওই ভদ্রমহিলার চোখে চোখ পড়তেই তার হৃদ কম্পন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। মনের ভেতর একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, সেই কন্ঠস্বর, সেই চোখ, তবে কী উনি সেই নীরা?’ উত্তরটা জানা যে এতোটা সহজ নয়, সেটা সে ভালোই বুঝতে পারছে। বিধাতা যদি সহায় থাকে, তাহলে কোন কিছুই কঠিন নয়। ওই ভদ্রলোক আফটার সেভ লোশন ফেরত দেয়ার পর তিনি ফাহিমের সাথে পরিচিত হলেন। কথায় কথায় ফাহিম জানতে পারে ওই ভদ্রলোকের নাম ফরহাদ হোসেন। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং সন্তানদের স্কুল ছুটি হওয়ায় পরিবার নিয়ে ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। ঢাকার মুগদায় আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের পাশেই তার শ্বশুরের বাসা। ফাহিমের তখন মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছিল, খোরশেদ আলম সাহেব কি আপনার শ্বশুর? কিন্তু না, কি যেন ভেবে সে এই প্রশ্নটা আর করেনি। উদাস মনে সিট থেকে উঠে বগির দরজার কাছে গিয়ে সিগারেট ধরায়।
নীরার সাথে ফাহিমের চোখাচোখি হওয়ার পর সে আর একটি বারের জন্যেও ফাহিমের দিকে তাকায়নি। সে তখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে আর নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। তবে খুব মনোযোগ দিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে ফাহিমের প্রতিটি কথাই শুনে। জানতে পারে ফাহিম একটা বিদেশী এনজিও সংস্থার একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং অফিসের কাজে শ্রীমঙ্গলে এসেছিল। উত্তরার দিকে তার বাসা এবং বনানীতে অফিস। নীরার স্বামীর সঙ্গে ফাহিমের কথা শেষ পাওয়ার কিছু সময় পর ফাহিমের দিকে এক পলক তাকাতেই দেখে ফাহিম তার সিটে নেই। বেশ কিছু সময় চলে গেছে কিন্তু ফাহিম আর ফিরে আসছে না। নীরার বুকের ভেতরে ফাহিমের জন্য অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে। এক সময় সে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তখন বগির দরজায় দাঁড়িয়ে ফাহিম দীর্ঘ টানে অস্থির ভাবে সিগারেট ফুঁকতে থাকে। ফাহিমের এই অবস্থা দেখে নীরা এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে টয়লেটের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মিনিট খানেক পর নীরা টয়লেট থেকে বের হয়ে সিটে চলে যাবে, ঠিক তখনই পেছন থেকে ফাহিম ডেকে উঠে ‘নীরা’। সে তখন এক মূহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়। তারপর আবারও হাঁটা শুরু করে, ঠিক সেই দিনের মতো করে। সেদিনের মতোই একবারের জন্যেও পিছনের দিকে ফিরে তাকায়নি। সে তার সিটে গিয়ে বাসা থেকে বানিয়ে নিয়ে আসা নুডুলস তার স্বামী ও ছেলে-মেয়ের জন্য পরিবেশন করে। এর কিছু সময় পর ফাহিম তার সিটে এসে বসে। ফাহিমকে দেখে আফজাল হোসেন তখন তাদের সাথে নাস্তা খেতে অনুরোধ করে। ফাহিম বিনয়ের সাথে না করলেও নীরা ততক্ষণে একটা ছোট্ট বাটিতে করে ফাহিমের জন্য নুডুলস পরিবেশন করে তার স্বামীর হাতে তুলে দেয়। আফজাল হোসেন তখন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর হাতের বানানো নুডুলস। নিন খেয়ে দেখুন, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি খারাপ লাগবে না।’
ফাহিম নুডুলস খাওয়া শেষ করে আবার সিট থেকে উঠে বগির দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন মনে পড়ে যায় সেই পুরানো দিনের কথা। যখন সে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর নীরা ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ফাহিমের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শিলার আপন খালাতো বোন ছিল নীরা। সে শিলার মাধ্যমে নীরার গৃহশিক্ষকের দায়িত্ব পায়। রসকষহীন অংক ও ইংরেজি বিষয় পড়াতে গিয়ে যে একদিন তার ছাত্রীর সাথে জটিল প্রেম হয়ে যাবে, সেটা সে কখনো কল্পনাও করেনি। যদিও ফাহিমের বুকেও প্রেমের ফুল ফুটে ছিল, তবে প্রেমের প্রস্তাব এসেছিল প্রথম নীরার দিক থেকেই। ফাহিম একটা সংকোচ প্রথমে এগিয়ে না এলেও পিছিয়ে যায়নি। নীরার প্রেমপত্র পাওয়ার সপ্তাহখানেক পর সে তার সম্মতি আরেকটি প্রেমপত্র লিখে জানিয়ে দেয়। দিন যত যায়, তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। দেখতে দেখতে চোখের পলকে দুটি বছর কেটে যায়। এদিকে নীরার ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে আর ওই দিকে ফাহিমের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি। খুব ভালো রেজাল্ট করায় নীরা স্বপ্ন দেখছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আর ফাহিম ভাবছে মাস্টার্স শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব ভালো একটা চাকরি নেয়ার। ঠিক এমন সময় নীরার একটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তার বাসায় বেশ ঝামেলা চলে। নীরা তার বাবাকে লেখাপড়ার কথা বলে নানাভাবে বুঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। খোরশেদ আলম সাহেব ছিলেন নাছোড়বান্দা, মেয়ে যতই ভালো রেজাল্ট করুক, এই প্রস্তাবে তিনি নাকচ করতে পারবেন না। খুব ভালো পাত্র, সরকারি কর্মকর্তা, তাই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। প্রয়োজনে পরিবারের সবার অমতে জোর করে হলেও তিনি ওই পাত্রের সাথেই মেয়ের বিয়ে দিবেন। একদিন নীরা বাসা থেকে পালিয়ে এসে ফাহিমের কাছে যায়। তবে ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, কাজী অফিসে গিয়ে নীরাকে সেদিনই বিয়ে করার সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মূহুর্তে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
ফাহিম তার সিট থেকে উঠে যাওয়ার পর নীরা বুঝতে পারে, ফাহিমের খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে নীরার কষ্টও যে কম হচ্ছে না। সেই ঘটনার কথা ভেবে ফাহিমের প্রতি তার মনে এখন আর কোন রাগ ও অভিমান নেই। একদিন অনেক কষ্ট করে বাসার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সে ফাহিমের কাছে পালিয়ে গিয়ে ছিল। ফাহিম বেকার, ভার্সিটির হোস্টেল ছাড়া ঢাকা শহরে তার মাথা গুঁজার কোন ঠাঁই নেই। তবুও সে প্রেমের টানে চালচুলোহীন ফাহিমের কাছে ছুটে যায়। তবে শেষ মূহুর্তে কাপুরুষের মতো ফাহিম নীরাকে ফিরিয়ে দেয়। নিজেই একটা রিক্সা করে নীরাকে নিয়ে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়। নীরা তখন বাসায় ফিরে যাওয়ার লজ্জায় এবং ফাহিমের প্রতি ঘৃণায় সারাটা রাস্তায় ডুকরে ডুকরে কাঁদে। বাসার সামনে এসে যখন রিক্সা থামে, তখন সে রিক্সা থেকে নেমে ধীরে ধীরে হেঁটে গেইটের দিকে এগিয়ে যায়। ঠিক তখনই পিছন থেকে শেষ বারের মতো ফাহিম একবার ‘নীরা’ বলে ডেকে উঠে কিন্তু নীরা পিছনে আর ফিরেও তাকায়নি। সোজা বাসায় গিয়ে উঠে এবং তার বাবার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। এর কিছুদিন পরেই বেশ ধুমধাম করে তার বাবার পছন্দের পাত্রের সাথে নীরার বিয়ে হয়ে যায়। আধুনিকা ও স্বাধীনচেতা নীরা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বুঝতে পারে, সে একটা রক্ষণশীল পরিবারে বন্দি জীবনের ভেতরে প্রবেশ করেছে। যদিও বিয়ের আগে কথা ছিল, সে শ্বশুরবাড়িতে এসে লেখাপড়া করবে কিন্তু সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের থেকে শত অশান্তি তো লেগে আছেই। তার স্বামী ব্যক্তি হিসেবে ভালো ছিল, তাই নিজের নিয়তিকে মেনে নিয়ে সবকিছুই সহ্য করে সংসার করে যায় নীরা। একবার তার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসে তার খালাতো বোন শিলা। নীরার কষ্ট দেখে সে খুব আফসোস করে। তখন নীরা বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়, ‘তোমার বেইমান বন্ধুর জন্যেই এই কষ্টের জীবন মেনে নিয়েছি। ‘তখন শিলা জানায়, ফাহিমের কোন দোষ নেই। তোর বাবাই ফাহিমের হাত ধরে অনুরোধ করে। এমনকি এটাও বলে, যদি ওইদিন রাতের মধ্যে তুই বাসায় ফিরে না যাস, তাহলে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন। তবে তুকে এসবের কিছুই বলা যাবে না। তাই ফাহিমের আর কী করার আছে বল?’
একের পর এক স্টেশন পার হয়ে ট্রেন এগিয়ে যাচ্ছে। ফাহিম সেই তখন থেকেই বগির দরজায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় ট্রেন চলে আসে বিমানবন্দর স্টেশনের কাছে। গন্তব্য কাছাকাছি চলে আসায় ফাহিম তার সিটের কাছে গিয়ে ব্যাগ হাতে তুলে নেয়। তারপর নীরার স্বামী ফরহাদ হোসেনের সাথে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিয়ে নেয়। নীরার বাচ্চাদের দিকে হাত উঁচিয়ে ‘বাই’ বলে নীরার দিকে একপলক তাকিয়ে নেয়। সেই চিরচেনা দুটি চোখ শেষ বারের মতো দেখে নিয়ে ফাহিম দরজার দিকে এগিয়ে যায়। একসময় ট্রেন থামে, ফাহিম প্লাটফর্মে নেমে পেছনের দিকে আর না তাকিয়ে সোজা বাহিরের দিকে পা বাড়ায়। এদিকে হুইসেল বাঁজিয়ে ট্রেন নীরাকে নিয়ে আবার সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পেছনে পড়ে থাকে এক যুগ পর কাকতালীয় ভাবে দুজনার হঠাৎ দেখা হওয়ার স্মৃতি।