শীতের অনুভূতি...


শীতের অনুভূতি 

শেখ রহমতুল্লাহ


শীতের সকালে পাখিদের কিচির-মিচির শব্দ আর গাছের পাতায় জমে থাকা শিশির কণা, ঘরের চালে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ার আওয়াজে ঘুম ভাঙার পর পূব আকাশে কুয়াশা ঢাকা সূর্যটাকে দেখতে বেশ লাগে! তার কিরণটা আবছা হলেও মিষ্টি। এহেন মুহূর্তে জাম্পার বা জ্যাকেট পরে শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে পদচারণ করার অনুভূতিটা হয়তো কিছু শব্দের মাধ্যমে বাক্যবন্দী করা সাধ্যের বাহিরে। এমন সব চক্ষু শীতল দৃশ্য হৃদয়ের ক্যানভাসে প্রস্ফুটিত হয় হেমন্তের মৃদু হাওয়া আর অতিথি পাখিদের আনাগোনায়। হেমন্তে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি ইত্যাদি হরেক রকমের ফুল। এ সকল ব্যবস্থাপনা হয়তো শীতকে কেন্দ্র করেই। কতই না সুন্দর থেকে সুন্দরতম মাধ্যম অভ্যর্থনা জানানোর। এভাবেই শীতের আগমন। তার আগমনে বাস্তব রূপ ধারণ করে আমাদের অনুভূতি গুলো। শীতের দিনে ভোরের শিশির আর প্রস্ফুটিত ফুলের মিশ্রণে প্রকৃতি এক অনিন্দনীয় রূপ ধারণ করে। এই মৌসুমে নদীগুলো-ও যেন শীতল হয়ে যায়। থাকে না কোন উথাল-পাথাল ঢেউ। একনাগারে, একই ভাবে বয়ে চলে নদীগুলো। তার অনতিদীর্ঘ ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে নদী কূলে। ঢেউয়ের চাপুর চুপুর শব্দ আর বাতাসের শাঁ-শাঁ শব্দ একত্রিত হয়ে প্রকৃতিকে করে তোলে আরো মোহনীয়। এ যেন এক নেশা! এ যেন এক ঘোর, যার মধ্যে ডুবে থাকতে তনুমনে কোন ক্লান্তিবোধ হয় না। শীতের সময় কেইবা নানা-মামা বাড়িতে না যায়? সেখানে বাচ্চাদের হই-হুল্লোড়, মামি-খালাদের চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, ভিজানো পিঠা ইত্যাদি বহু রকমের পিঠা বানানো, শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে আগুনের তাপ নেয়া এই বিষয়গুলো ভাবতেই হৃদয়ে প্রফুল্লতা ও সজীবতা ফিরে আসে। শীতের শেষে পাতা শূন্য গাছগুলো দেখতে নিষ্প্রাণ লাগে। কিন্তু বসন্তেই দৃষ্টিগোচর হয় পাতা গজানোর মনোরম দৃশ্য। বর্তমান সময়ে এ সকল বিষয় যেন কল্পনা বৈ কিছু নয়। কেউ অনুভব করে না প্রকৃতিকে, কেউ ফিরেও তাকায় না নবরূপ ধারণকারী গাছগুলোর দিকে। এভাবেই আনন্দ উৎফললতার মধ্য দিয়ে কেটে যায় আরো একটি শীত, আরো একটি বছর। আর আনন্দঘন মুহূর্তগুলো হয়ে যায় অতীত।


দিলুরোড মাদ্রাসা, নিউ ইস্কাটন, ঢাকা।




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট