কাঠ ও কড়াই
নবী হোসেন নবীন
শুষ্ক কাষ্ঠ ডেকে বলে শোন হে কড়াই
তোমাকে পুড়িয়ে আমি করে দেবো ছাই।
বিনয়ে কড়াই বলে তুমি শোন ভাই
আমাকে পুড়াতে কেনো নিজে হও ছাই?
হয় তোবা পুড়ে পুড়ে আমি হবো কালো
তাতে কী তোমার ভালে আছে কিছু ভালো?
পরের ক্ষতির চিন্তা করে যেই জন
আপনার ধ্বংস ডেকে আনে সে কুজন।
শীত এক স্বৈরশাসক
সুজাউদ্দৌলা
শীত এক স্বৈরশাসক
কুয়াশার কারফিউ দিয়ে আটকে রাখে
আর পোশাকের এদিক ওদিক হলেই ছুঁড়ে
কনকনে হাওয়ার কার্তুজ-যেন ভেঙে
ফেলে ১৪৪ধারা মিছিল বেরিয়েছে পথে
সরকারের পোষা বুদ্ধিজীবীর মতো
আছে সবজি খেজুর রস আর পিঠাপুলি
তারা স্বাদের লিফলেট ছড়ায় নিমন্ত্রণ পত্রের মতো
প্রেমিকের প্রথম স্পর্শের মতো কেঁপে কেঁপে
শীতের নামে জয়োধ্বনি দিতে থাকে লোকজন।
পরিবর্তিত শীত
আদনান আল মিসবাহ
এই কনকনে শীতের অভদ্র আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে
হাতড়ে ফিরি শৈশবের স্মৃতি
ছোটবেলার শীতকাল গুলোতে এখনো শীত শীত ভাব
কলপাড়ে, বরফঠান্ডা পানিভর্তি বালতি নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা সকালে
আম্মার অনাকাঙ্ক্ষিত আগমন
সোবার নরম, কোমল কিন্তু তীক্ষ্ণ স্পর্শে
চামড়া ছিলে যাওয়ার মতন আমার চিৎকার
বরই গাছের ডালে জড়ো হয়ে
আমাকে সান্তনা দেয় চড়–ই পাখির দল
অথচ বিহঙ্গকুলের অবাকদৃষ্টিতে
আমি আরো লজ্জিত হই
মিশে যাই মাটির সাথে
গতর বেয়ে পড়া পানির সাথে
প্রতিনিয়ত দংশন করে এদের কিচিরমিচির শব্দ
এরপরও সে হিমসকাল, পাখিদের লজ্জা
আমার কাছে স্বপ্নময়
এখনকার শীতগুলো আর সেরকম
স্বাপ্নীক বার্তা নিয়ে আসে না
ডিজিটালাইজেশনের পর পৃথিবী কেমন যেন
তার স্নিগ্ধতা হারিয়ে ফেলেছে
সেই স্নিগ্ধতার প্রত্যাবর্তন হলে
হাড় কাঁপানো শীতের ডাইনি হাওয়া গুলোকেও
উপভোগ্য মনে হবে
কুয়াশার মতো অস্পষ্ট প্রণয়
এ এম তোফায়েল
পৌষের হিমাচ্ছন্ন কুয়াশাভরা রাত অথবা প্রভাতঅস্পষ্ট হয়ে উঠে যেন দূরের সব! কোকিলের যে প্রণয় ছিলো একদিন সমুদ্রের পানির মতো স্বচ্ছ তা এখন পৌষের হিমাচ্ছন্ন কুয়াশার মতো অস্পষ্ট!
মাস পেরিয়েছে পেরিয়েছে বছর! প্রণয় আছে আছে সাবেকের প্রতি সম্মান তবে অনুভূতি নেই এখন আর! বহুবছর আগেকার কিছু স্মৃতিরেখা খেলা করে কোকিলের মাথায় বাকিসব রয়েছে পড়ে, আহা; বসন্তের ঝরে পড়া পাতায়! বৃক্ষকেও যে টিকে থাকতে হয় পাতা ঝরিয়ে ফেলতে হয় উঠতে হয় জেগে থাকতে হয় বেঁচে নতুন করে।
আহা! কোকিলের যে প্রণয় ছিলো একদিন সমুদ্রের পানির মতো স্বচ্ছ তা এখন পৌষের হিমাচ্ছন্ন কুয়াশার মতো অস্পষ্ট!
আবেদন
এম. তাওহিদ হোসেন
শীতের আড়মোড়া সকালে ঘুম ভেঙ্গে উদিত হইও পুব আকাশে একটুখানি উষ্ণতা দেওয়ার জন্য,
তোমার লালিত সন্তানেরা তোমার পানে চেয়ে
তোমার উষ্ণতায় উদ্ভাসিত হবে বলে।
এক চিলতে হাসিমাখা মুখ নিয়ে দেখা দিও আমাদের আঙিনায়,
ঘনকুয়াশার ভিড়ে দেখো তোমায় ঠিকই খুঁজে নিবো
তুমি শুধু একটুখানি উষ্ণতার পরশ নিয়ে এসো,
তোমার ঝলকিত চোখ রাঙ্গানিতে দেখো কুয়াশার ভেলা ডুবে যাবে অতল সাগরে।
তোমার উত্তাপ, কঠিন দরিদ্রতাকে হার মানাবে
মুছে দিবে শীতের নিষ্ঠুরতার ছবি,
যান্ত্রিকতার নানা আয়োজন মুখ লুকাবে
সবাই হাসবে বিশুদ্ধতম হাসি।