পরকীয়া
সোহেল রানা
আজাদ সাহেব নতুন গাড়ি কিনেছেন। তাই ভাবীকে সঙ্গে করে এখানে-ওখানে ঘুরছেন, প্রকৃতি দেখছেন আর হারিয়ে যাচ্ছেন তারই মাঝে! এটাই স্বাভাবিক, কারণ তিনি সাহিত্যিক মানুষ, প্রকৃতি দেখলে লোভ সামলাবেন কী করে? যদিও নতুন গাড়ি- চকচকে-ঝকঝকে, আয়নার মতো! দেখতে অনেকটা শামসুর রাহমানের মতোই হ্যান্ডসাম! তাই বলতে গেলে বলতে হয়- তাঁরও গাড়ির প্রতি লোভ কম নাই!
কিন্তু ওই যে... প্রকৃতি দেখলেই প্রেমে ‘নগ্মপ্রেমিক’ হয়ে যাওয়া; সেই আর কী...।
ভাবী সাহেব ওদিকে তাঁকে ডেকে ডেকে খুন হয়ে যাচ্ছেন, অথচ আজাদ সাহেব এদিকে পরকীয়ায় লিপ্ত।(ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছেন তাতে।) ‘না-না, এহেন অনাচার আর সহ্য করা যায় না, ইম্পসিবল!’ -তাই ক্রমশ: তাঁর মধ্যে সতীন বিদ্বেষ হলো জাগ্রত। দিলেন গাড়ির গিয়ার চেপে!
এদিকে হঠাৎই পরকীয়তার বিভোর কাটলো আজাদ সাহেবের চেতনার চৈতন্যে; কিন্তু গাড়ি ততক্ষণে আধাকিলো দূরে চলে গেছে! দৌড়-দৌড়-দৌড়। আর কে দেখে কার পৌষমাস কিংবা সাড়ে সর্বনাশ। ঢাকা শহরের জনসাধারণ নির্বাক-নির্বিচারে চরাচর করে। কেউ কারো পানে ফিরে না চাহে! আর বেচারা-আজাদ সাহেব তাঁর যা হবার তা তো হয়েছেই। হচ্ছেই...। একে তো শরীরের ঘাম আর নাকের সর্দিতে একাকার। তার উপর মাঝে মধ্যে তিনি এমন দমকা কাশি হাঁকাচ্ছেন, যাতে করে ঢাকা শহরের বিল্ডিংগুলো কাঁপছে থরে থরে! বিল্ডিং থেকে ইট, সিমেন্ট, রড, পাথর যেন খসে খসে পড়ছে। ঢাকা শহরের যতো ধুলোবালি, তিনি গিলছেন আর বের করছেন! বের করছেন আর গিলছেন! তবুও যদি কারুর মনে এতটুকু দয়ার সঞ্চার ঘটে! কিংবা গাড়ির গতিও যদি একটু থামে, তাহলেও বেচারার রক্ষা। অবশ্য, যদি ভাবী সাহেবের দিলেও বিন্দু পরিমাণ ঘাম ঝরে, সেটা-ও একটা আশার বিষয় বটে...! কিন্তু এইসব আশাগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসে আজাদ সাহেবের আকাশে।
২
‘আজকে দিবো সাহিত্যিকের হালুয়া টাইট করে, বাসায় খালি চেটাংচেটাং কথা’ দ্যাখো... আজ কে ম ন লাগে!’
শত হলেও সাহিত্যিক বলে কথা! এই ভেবে যানজট তার হৃদয়টা দিলো প্রসারিত করে।