পদাবলি : ০২

 



সমর্পিতা

শঙ্খশুভ্র পাত্র


সমর্পিতা আমি বুঝি। শুভ প্রাতে তোমার সান্নিধ্য

ধানে ঘ্রাণ আনে নবান্নের প্রীতি। ইতিহাস সাক্ষী

রেখে অগ্রসর হতে চাই। সাহিত্য আমাকে ঋদ্ধ

বরাবরই করে শ্রীরামকৃষ্ণের মতো বিশালাক্ষী


দেবীকেই মান্য করি। আমি খুবই সহজ-সরল।

তোমার বিদগ্ধ জ্ঞানে নত হই বিশ্বাসে অধীন

সরস্বতী মনে-প্রাণে লক্ষ্মীকৃপা, অতীব চঞ্চল

অভাবের দ্বারে এসে দেখা দেবে প্রার্থিত সুদিন।


এই মতো ভাবি, আর অর্পিতার রাঙা-করতলে

একটি গোলাপ রেখে মনে-মনে থেকেছি উদাস...

গুপ্রভাত সম্ভাষণে, সারাদিন তারা হয়ে জ্বলে।

আমার স্বপ্নের কাছে তুমি এক মহার্ঘ আকাশ।


সমর্পিতা, আমি তো জানি না কিছু কে আমাকে টানে

নতুন বরষে এসে, ভালোবেসে, খুঁজি তার মানে...


একদিন সে আসবে

মুহাম্মদ নূর ইসলাম 


লাল শাড়ি পরে একদিন সে আসবে

ঘোমটা মাথায় দিয়ে আমার পাশে বসবে,

একদিন সে আসবে।


কোমল হৃদয় সিক্ত করে আমায় ভালোবাসবে

আঁচল টেনে মুখ লুকিয়ে মিষ্টি করে হাসবে,

একদিন সে আসবে।


সুযোগ পেলে হাতছানিতে আমায় কাছে ডাকবে

বুক পাঁজরে যতœ করে আমার ছবি আঁকবে,

সবার চেয়ে অনেক বেশি আমায় ভালোবাসবে

একদিন সে আসবে।


মেহেদিতে রাঙা দুহাত আমার হাতে রাখবে

চোখের ভাষা, মনের কথা, সবটা বুঝে থাকবে,

তার মনের আকাশ জুড়ে আমার ছবি ভাসবে

একদিন সে আসবে।


খালি পায়ে আলতা পরে উঠোন জুড়ে হাঁটবে

আমার কথা ভেবেই তার সারাটা দিন কাটবে,

শূন্য হৃদয় পূর্ণ করে আমায় ভালোবাসবে

একদিন সে আসবে।




সুলেখার প্রতি

এবি ছিদ্দিক


যদি কখনও আসতে চাও

তবে সবুজ রঙ মেখে এসো...

মালা দিও...কাঁটা দিওনা, প্রিয়।

আমি অনেক রুগ্ন ও পা-র হয়ে যাচ্ছি ! 

দেহে ব্যধি বাসা বেঁধেছে...

বাক যন্ত্রও বুঝি বিকল হয়ে যায় !


ভোরের সূর্য ক্রমশ অস্তমিত হতে যাচ্ছে...

আমিও আমার ঋতু চক্রের শেষ প্রান্তে !

তোমার উষ্ণ হাতখানা.. 

আমার বুকের উপর রেখো

যেন চার চোখের শেষ কথাগুলো শেষ হয়।



পথে চলে যেতে যেতে

নাসরিন জাহান মাধুরী 


তুমি সামনে এলেই 

থেমে যাই, থেমে যায় অবিরাম কলকল কথার নদী

থেমে যায় মনের গহনে বয়ে চলা ঝর্ণার সরোবর

ফুলের হাসি পাখির গান সব থেমে যায়

নীরব বিশ্ব চরাচরে একা দাঁড়িয়ে থাকি

অনাবিল আনন্দে থরো থরো কাঁপি


তুমি হাসলে

আলোকিত ভোরে দেখি আকাশ হাসে

ফুলেরা দোলে সুশীতল সমীরণে

ভোরের পাখিরা ডানা মেলে গানে গানে

নীরবে খুন হই হাসিতে 

শব্দের মালা গাঁথি নিঃশব্দে 


তুমি দূরে গেলে

হৃদয় চিরে বয়ে যায় বরফ গলা নদী

চোখ জুড়ে মেঘলা বিষন্ন আকাশ

শীতল ¯্রােত বয়ে যায় অস্তিত্ব জুড়ে 

কুঁকড়ে যাই, কুন্ডলী পাকিয়ে পড়ে রই অসাড়

ভীষণ ঘুম পায় তখন, মরণ ঘুম


তবুও 

আমি দাঁড়িয়ে থাকি স্বর্গের উদ্যানে যেন

পথে চলে যেতে যেতে



বরফ শীতল বাতাস

গাজী তৌহিদ


স্মৃতিগুলো যুগ পেরুলেই হয়ে যায় বেদনাবিধুর কাব্য, 

শীতকাল, হাড় কাঁপানো শীত! ভোরের আবছা অন্ধকার, 

হিসাব-নিকাশের জট খুলতে বহুপথ হাঁটছি তো হাঁটছি! 

থমকে যায় হঠাৎ! বাইসাইকেল প্যাডেলের খটখট শব্দ-

বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দের সাথে মিশে যায়;

পাতলা হাফ হাতা গেঞ্জি, মাফলার বা টুপি ছাড়া কান! 

হাত-পা ঠা-ায় কেমন বরফ হয়ে যায়! 

টিউশনি হারানো মন খারাপ করা বিকেল- 

ব্যস্ত শহরে মেসের ছাদে পা ঝুলিয়ে একলা বসে থাকা;

নিঃশব্দে কখন অট্টালিকায় ছেয়ে গেছে- 

কুয়াশায় হারিয়া যাওয়া মাঠ, ফসলী ক্ষেত, 

রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত খাল-বিল, ভাঙা চায়ের দোকান। 

মাঝরাতে খেঁজুরের ঠান্ডা অমৃতের স্বাদ- 

পানসে হয়ে গেছে হয়তো এতো দিনে! 

পাতা ঝরা মেহগনি বাগানের ক্রিকেট খেলা, 

সন্ধ্যা নামার আগেই এখন বন্ধ হয় কিনা কে জানে! 

বহুদিন বহুপথে বহু লেনদেনের অনিশ্চিত হিসাব

ধেয়ে আসে বরফ শীতল বাতাসে...


স্মৃতির দর্পণ

মুবাশশির খন্দকার!


জীবন কখনো থেমে থাকে না! অবিরাম চলে যায়। বহমানের নদীর ¯্রােতের ন্যায় তরতরিয়ে কেটে যায় অষ্টপ্রহর। ফেলে আসা দিনগুলো বিমূর্ত অতীত হয়ে যায়। সেই অতীতজুড়ে থাকে কিছু মায়া-প্রীতি-টান ও জ্বালামিশ্রিত অনুভব। যা আজীবণ জিইয়ে থাকে স্মৃতিপটে! মানসপটে আষ্টে- পৃষ্টে সেঁটে থাকে, কিছু রমরমা স্মৃতি ও ঝলসে যাওয়া অতীত!

কিছু বিষাদ ও দহন মেখে একাকার থাকে স্মৃতির দর্পণ! যে স্মৃতি রোমন্থনে ভীষণভাবে বিষিয়ে ওঠে মন! অনেকক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক জাগড়ণেও ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু সেই যাপিত দিনগুলো সম্যকদর্শনে সযতনে খুঁটিয়ে দেখলে, মিলে যায় কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত, রঙিন ও “অত্যুজ্জ্বল অতীত”! যার জাদুবলে আমাদের এগিয়ে যাবার প্রয়াসটুকু ক্রমান্বয়ে

বৃদ্ধি পায়। কখনোই থিতু হতে পারে না, হতোদ্যমের নিকষ

জংলায় জর্জরিত বেড়াজাল!

ঠিকই কোথাও প্রচ্ছন্নভাবে আগলে থাকে, এগিয়ে যাবার

টিমটিকে বাতিটুকু; প্রত্যাশার চিরঅম্লান দ্যুতি!

যা যতনে দিবালোকে পরিণত হয়!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট