কামিনী ফুলের গাছ

 



কামিনী ফুলের গাছ 

রবীন বসু 



আজ রবিবার। ছুটির দিন। বিকেলে ব্যালকনিতে এসে বসেছে মৃত্তিকা। এটা ওর বরাবরের অভ্যেস। 


চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেই চোখ চলে যায় নিচে ফ্ল্যাটের বাঁপাশে ঝাঁকড়া কামিনী ফুলের গাছটার দিকে। ছোট ছোট সবুজ পাতায় ঘেরা মাঝারি উচ্চতার চিকন গাছ। শুনেছে ফ্ল্যাট হবার আগে যাদের বাড়ি ছিল, সেই দত্তকাকুর মা গাছটা বসিয়েছিলেন। তলাটা গোল করে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল লাল রঙে। গরমের দিন বিকেলে এসে বসতেন। পাড়ার অন্যান্য প্রতিবেশী বউ আর তাদের মেয়েরাও এসে বসত। পরস্পর গল্প হত। এ-বাড়ির খবর ও-বাড়ি পেত, ও-বাড়ির খবর এ- বাড়ি। আইবুড়ো মেয়েগুলো চাপাস্বরে নিজেদের প্রেমের গল্প করত। মতান্তর যে হতো না, তা নয়। তবে তাতে আড্ডা থেমে থাকত না।


বর্ষা এলে গাছ থোকা থোকা সাদা ফুলে ভরে যায়। কী মিষ্টি গন্ধ ছড়ায় তখন। সারা পাড়া ম ম করে সেই গন্ধে। সন্ধেবেলা অফিসফেরতা কেমন ঘোর লাগে। উপরে এসে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চায়ের কাপ হাতে ব্যালকনিতে এসে বসে মৃত্তিকা। মিষ্টি গন্ধে শরীর মন জুড়িয়ে যায়। কামিনী ফুলের গাছটা কখন যে মৃত্তিকার সত্তার একটা অংশ হয়ে গেছে, তা সে নিজেও বুঝতে পারেনি।


রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে চা করে। তারপর মায়ের ঘরে যায়। সপ্তাহের অন্য দিনগুলো মা চা নিয়ে তার ঘুম ভাঙায়। ব্যতিক্রম শুধু এই রবিবার। মৃত্তিকাই মাকে বলেছিল, “সারা সপ্তাহ খাটো, তাই রবিবার তোমার ছুটি। কোনো কাজে হাত দেবে না।”


অরুন্ধতী বলেছিল, “তা কী হয়! তুইও তো সারা সপ্তাহ ধরে অফিসে খাটিস।”


শেষে একটা রফা হয়। সরমা মাসিকে সাথে নিয়ে মা শুধু রান্নার তদারকি করবে। ঘর ঝাড়ামোছা, মাসিক বাজার, গ্যাস বুক করা, ইলেকট্রিক বিল পেমেন্ট সব মৃত্তিকার দায়িত্ব। কোন ছোটবেলায় বাবা মারা গেছে। বাবার অফিসে মা চাকরি পায়। তারপর মা-মেয়ের একা লড়াই। মৃত্তিকা একসময় চাকরি পায়। মা অবসর নেয়। ভাড়া বাড়ি ছেড়ে তারা দক্ষিণ কলকাতায় এই থ্রি-বিএইচকে ফ্ল্যাটে উঠে আসে। মায়ের সঙ্গে ফ্ল্যাট দেখতে এসে তার প্রথম পছন্দ হয় মাঝারি উচ্চতার এই কামিনী ফুলের গাছটা। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখে। তখন জুলাই মাস। গাছ ফুলে ভরা ছিল। গন্ধও। ভাল লাগে মৃত্তিকার। মায়ের হাতে চাপ দিয়ে বলেছিল, “প্লিজ মা, তুমি এই ফ্ল্যাটটা পছন্দ কোরো।”


আসলে ছোটবেলা থেকে গাছ ভালবাসে মৃত্তিকা। আর ফুলগাছ হলে তো কথাই নেই। তাই মা যখন ফ্ল্যাট পছন্দ করল, তখন সে প্রোমোটারকে বলে, “আমাদের বাঁপাশের কামিনী ফুলের গাছের দিকে এই সেকে- ফ্লোরটা দিন। যাতে ব্যালকনিতে বসে আমি ফুলগাছটাকে দেখতে পাই।”


প্রমোটার হাসিমুখে কথা দিয়ে ছিল, “ঠিক আছে। তাই হবে। এই ফ্ল্যাটটাই আপনাদের নামে অ্যালট করে দিচ্ছি।”


বর্ষা আসতে বিলম্ব আছে। সবে মার্চ মাস। কামিনী গাছে ফুলের জন্য এখনও প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। সকালে মিটিংয়ের পর তার মনটা খুব খারাপ। মাথাটা তাই এখনও ঝাঁ-ঝাঁ করছে। প্রতি মাসে সম্ভব হয় না, তাই তিন মাস অন্তর তাদের ফ্ল্যাটে যে আবাসিক কল্যাণ সমিতি আছে তার সভা ছিল। সেখানে অন্যান্য জরুরি আলোচনার শেষে ফার্স্ট ফ্লোরের মিত্রবাবু একটা অন্য প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর বেড রুমের বাঁপাশেই ওই কামিনী ফুলের গাছটা। এতদিন তিনি দু’একটা ডাল কেটে দিতেন শীতকালে। তখন নাকি ওঁনার ঘরে রোদ ঢোকে না। কিন্তু এবার ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস। ওঁনার বড় মেয়ে যার ব্যাঙ্গালোরে বিয়ে হয়েছে, সে প্রথমবার মা হতে চলেছে। সামনের মাস থেকে এখান এসে থাকবে প্রায় বছরখানেক। তাই মা এবং আগামী শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাঁরা চান ওই কামিনী ফুলের গাছটা কেটে দেওয়া হোক। রোদ আড়াল তো হয়ই, তার উপর পোকা- মাকড় ও মশার উৎপাত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার চারপাশে যা ভাইরাসের আক্রমণ। তাই সাবধান হতে হবে। না হলে মা ও শিশুর বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। 


অনেকে মাথা নাড়লেন। মৃত্তিকা চেঁচিয়ে উঠল, “গাছ কাটা যাবে না। আপনারা তো সবাই জানেন, গাছ কাটা এখন নিষেধ। তাছাড়া আমাদের এই কমপ্লেক্সে ওই একটাই ফুলের গাছ। আপনারা অন্য ভাবে ব্যাপারটা ভাবুন।”


মিত্রবাবু এবার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, “বলি কী ভাবব! শিশুর জীবন বড়, না ফুলের সৌন্দর্য।’


মৃত্তিকা বলে, ‘শিশুর স্বাস্থ্য তো আগে কাকাবাবু। তবে একটা ফুলের গাছ কেটে তো আপনি সব ভাইরাসকে তাড়াতে পারবেন না দেশ থেকে। আর পোকামাকড় ও মশার কথা হলে বলি, জানলায় সবাই তো আজকাল ঘন নেট লাগাচ্ছে। আপনারা লাগান। তাছাড়া এসি রুমে এমনিতে তো জানলা বন্ধ থাকে।’


মৃত্তিকার কথায় সবাই যুক্তি খুঁজে পায়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হল আপাতত মিত্রবাবুর বেডরুমের দিকে জানলার ধারঘেঁষা কয়েকটা ডাল কেটে দেওয়া হবে। গাছ কাটা চলবে না।


এখন ব্যালকনিতে বসে সকালের কথাটা ভাবছিল মৃত্তিকা। মিত্রবাবুর থমথমে ক্রদ্ধ মুখটা বার বার মনে পড়ছে। রেগেমেগে নেমে এলেন নিচে ঠিকই, কিন্তু ব্যাপারটা কী সহজে মিটবে! মৃত্তিকার মনে দুশ্চিন্তা। সে কামিনী গাছের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে।


ব্যালকনির টবে বসানো বেল মল্লিকাতে সবে কুঁড়ি এসেছে। দু একটার মুখ ফুটেছে। মৃদু গন্ধ ভাসছে হাওয়ায়। বেলমল্লিকার গন্ধ আর বসন্ত সন্ধ্যার বাতাস তার মনকে অনেকটা শান্ত করল। এমন সময় সরলামাসি চা দিয়ে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই ফোন বেজে উঠল। ধরতেই ওপারে অর্কর গলা। ‘কী ব্যাপার! সকালে কতবার ফোন করলুম। ধরলি না। হোয়াটসঅ্যাপ দেখলি না। কী হল তোর?’


‘কিচ্ছু না। আসলে সকালে একটা মিটিং ছিল। ফোন অফ রেখেছিলাম। বল, কী হয়েছে?’


‘কী হবে আবার। দু সপ্তাহ তোকে দেখিনি। গত রবিবার বের হতে বললুম, এলি না।’

‘তোকে তো বলেছিলাম, মাকে নিয়ে চোখ দেখাতে যাব। পাওয়ারটা বেড়েছে। মাথায় যন্ত্রণা হয়।’

‘বেশ বুঝলুম। কিন্তু আজ আয়। হপিপোলাতে দেখা হোক। মাইরি বলছি, তোকে দেখতে না পেলে মেজাজ খুব খারাপ হয়ে  যায়। প্লিজ আয়।’

‘আজ হবে না। আমার মনটা ভাল নেই। তাছাড়া এখন অনেক বেজে গেছে।’

‘বেশি বাজেনি। সবে সাড়ে ছ’টা। আমি বাইকে পৌঁছে দেব। না এলে কিন্তু রাগ করব খুব। তুই আয়।’  অর্ক আকুল হয়।


মৃত্তিকার সত্যি আজ বের হতে ভাল লাগছে না। সে কী করে বোঝাবে অর্ককে। কামিনী গাছটাকে ঘিরে তার মনে বেশ উদ্বেগ। কয়েকটা ডাল কাটার ব্যাপার তো নয়! কী যে ঘটবে সে বুঝতে পারছে না। গাছটার দিকে একবার তাকিয়ে শেষে অর্ককে বলে,‘সরি, আজ হবে না। সামনের রোববার ঠিক যাব।’

অর্ক বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়।


সেদিন রাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল মৃত্তিকা। সারি সারি কামিনী ফুলের গাছ। সে পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে আর এক একটা গাছকে জড়িয়ে ধরে বলছে, ‘তোদের কাটতে দেব না। কিছুতেই না।’ তাকে দেখে শহরের অন্য মেয়েরাও এগিয়ে এসে গাছকে জড়িয়ে ধরছে। আর দূরে ধারালো কুড়–ল হাতে মিত্রবাবু দাঁড়িয়ে।


যখন ঘুম ভাঙল, দেখে তার গা ঘেমে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। উঠে টেবিল থেকে জলের বোতল নিয়ে জল খায়। আসলে শুতে যাবার আগে সে নেট সার্চ করে ছিল। বৃক্ষছেদনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পরিবেশ আন্দোলন পড়তে গিয়ে তার নজরে আসে চিপকো আন্দোলনের কথা। স্বাধীন ভারতে প্রথম পরিবেশ বা বনভূমি সংরক্ষণ আন্দোলনের নাম চিপকো। এই আন্দোলনের পিছনের প্রেরণা হিসেবে দেখা হয় ১৭৬৩ সালে রাজস্থানের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ, বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা তাদের প্রাণের প্রিয় খেজরি গাছকে জড়িয়ে ধরে তাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিল। ‘চিপকো’ কথার অর্থ আলিঙ্গন। গাছকে আলিঙ্গন করে তাকে ছেদন থেকে বাঁচানোই চিপকো আন্দোলন। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে হিমালয় গাড়োয়াল পার্বত্য অঞ্চলের অমূল্য অরণ্য সম্পদকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭৩-এ দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য সংঘ- এর নেতা চ-ী প্রসাদ ভাটের নেতৃত্বে চিপকো আন্দোলন ব্যাপক আকার নেয় ও আস্তে আস্তে উত্তরাখ- ও অন্যান্য পার্বত্য জেলা রেনি তেহরি কুমায়ুন বৈদ্যগড় সহ সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলস্বরূপ সরকার যথেচ্ছ বৃক্ষছেদন বিরুদ্ধে আইন আনতে বাধ্য হয়।


মৃত্তিকা ভাবল, স্বপ্নটা হয়তো ওই নেটে পড়া চিপকো আন্দোলনের ফল। তবু সে দৃঢ় সঙ্কল্প হয়, কামিনী ফুলের গাছটাকে রক্ষা করতেই হবে।


সপ্তাহের শেষে একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে একটা ক্যাফেতে বসছিল সে আর অর্ক। কথার মাঝে হঠাৎ সে অর্কর কাছে জানতে চায়, পরিবেশ আন্দোলের সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তিকে সে চেনে কিনা। কারণ জানতে চাইলে মৃত্তিকা সব ঘটনা খুলে বলে। তখন অর্ক বলে, ‘আচ্ছা, আমি খবর নেব। সন্ধান পেলে তোকে জানাব।’

‘তাড়াতাড়ি কিন্তু।’ অস্থির হয় মৃত্তিকা।

‘ঠিক আছে বাবা। আমি খুঁজে দেব। এখন কফি তো খা।’

এর কিছুদিন পর মৃত্তিকার নজরে পড়ল কামিনী ফুলের গাছটার পাতাগুলো কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। সে দৌড়ে নিচে নেমে গিয়ে দেখে গোল করে বাঁধানো গাছের গোড়ার মাটি যেন কিছু দিয়ে খোঁড়া হয়েছে। আর মাটি থেকে একটা ঝাঁঝালো গন্ধ আসছে। মৃত্তিকার বুকটা ছাঁৎ করে ওঠে। একটা অজানা ভয় তাকে জড়িয়ে ধরে। সে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর দৌড়ে উপরে এসে অর্ককে ফোন করে। ‘কিরে! তোকে যে খবর নিতে বলেছিলুম, পরিবেশরক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন কোনো সংস্থা বা এনজিও, তার কী হল ?’

‘নিয়েছি। একটা সন্ধানও পেয়েছি। ফোন নম্বর আর অ্যাড্রেস পেলেই তোকে জানাব।’

‘তাহলে, অ্যাড্রেস পেলেই আমাকে একদিন নিয়ে যাবি ওখানে।’ মৃত্তিকা অস্থির।


এর দু’দিন পর গোলপার্কের একটা এনজিওতে তাকে নিয়ে যায় অর্ক। সব শোনার পর সেক্রেটারি মিসেস চৌধুরী বলেন, ‘মনে হচ্ছে গাছের গোড়াতে অ্যাসিড দিয়েছে কেউ। এবং তা পরিমাণে খুব বেশি। শিক্ষিত মানুষেরা গাছকে রক্ষা করার বদলে যদি এমন অবিবেচনা ও গর্হিত অপরাধ করে, তাহলে আমরা পরিবেশকে রক্ষা করব কেমন করে? আইন আছে কিন্তু প্রমাণ হবে কীভাবে যে ওই মিত্রবাবুই অ্যাসিড ঢেলেছেন? এই তো কত কেস পেন্ডিং পড়ে আছে, হিয়ারিংই হচ্ছে না।’ আপশোসের সুর।

‘তাহলে আমি এখন কী করব?’ মৃত্তিকা উদ্বিগ্ন।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন মিসেস চৌধুরী। ‘আচ্ছা, আপনারা ঠিকানা ফোন নম্বর দিয়ে যান। সামনের রবিবার আমাদের এখান থেকে লোক যাবে। তারা সরেজমিনে দেখে এসে রিপোর্ট দিলে আমরা জানাব কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’


রবিবার এসে গেল। সকাল এগারোটায় এনজিও থেকে দু’জন ভদ্রলোক এলেন। তাঁদের একজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ আর অন্য জন সয়েল। নিচে নামতেই মৃত্তিকার চোখ ফেটে জল এল। এই ক দিনেই গাছটার হাল আরও খারাপ হয়েছে। সব পাতা শুকিয়ে বিবর্ণ। ডালপালাগুলোও শুকিয়ে কালো। বিশেষজ্ঞ দুজন ভালো করে গাছ এবং মাটি পরীক্ষা করে বললেন, ‘এই দেখুন, গাছের গোড়ার দিকের বাকলের বেশ কিছুটা গভীর করে কেটে দেওয়া হয়েছে। পাতা ঢেকে থাকায় বুঝতে পারেননি। এইভাবে গাছের বাকল কেটে দিলে গাছ খাদ্য তৈরি ও সরবরাহ করতে পারে না। তখন খাদ্যের অভাবে ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। সেটাই হয়েছে। আর মাটি পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, মাটি খুঁড়ে গভীর করে শিকড়ে এসিড ঢালা হয়েছে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে।’

‘গাছটাকে কি কোনো ভাবেই বাঁচানো যাবে না?’ 

‘দেরি হয়ে গেছে, ম্যাডাম। আর সম্ভব না।’ একজন বিশেষজ্ঞ বললেন।

ব্যথাতুর অসহায় মৃত্তিকা ঝর ঝর কেঁদে ফেলল। ততক্ষণে ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা নিচে জড়ো হয়েছে। মিত্রবাবুদের ফ্ল্যাট আজ তিন-চার দিন তালাবন্ধ। তাঁরা নাকি মেয়েকে আনতে ব্যাঙ্গালোর গেছেন। সহবাসিন্দাদের দেখে মৃত্তিকা চিৎকার করে উঠল, ‘দেখুন, আপনারা দেখুন! একটা সুন্দর ফুলের গাছকে কেমন নিষ্ঠুর ভাবে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিল। ওরও তো প্রাণ ছিল। যে নবজাতক শিশু আসছে তারও তো অক্সিজেন লাগবে! সবুজ লাগবে। মিষ্টি ফুলের গন্ধ লাগবে! না হলে সে তো হৃদয়হীন অমানবিক হবে! পৃথিবী বাঁচবে কীভাবে? মানুষ বাঁচবে কী নিয়ে?’


মৃত্তিকার কথাগুলো হাহাকার হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল। উপস্থিত সবাই তখন নিরুপায় নীরব।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট