কথাকুঞ্জ
ঋতিদীপ্ত শ্যামল
১.
ঘূর্ণায়মান চাকার কেন্দ্রে একটু আধটু তেলের প্রয়োজন হয়ে থাকে, না হয় চাকা ঘোরে না, গতিও বাড়ে না- ড্রাইভারকে সেকথা জানতে হয়। মানুষের কর্মের গতি বাড়াতেও তেমনি তেল স্বরূপ প্রেরণা দিতে হয়, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই বিদ্যা ভীষণ জরুরি।
২.
খাঁচায় পোষা পরাধীন পাখিরাই শুধু শেখানো কথা বলে থাকে। তোমার কথাও তারাই বলছে- যারা তোমার কূটখাঁচায় এখন বন্দি। আর তোমার সেবাই এই বন্দিবিদ্যা। প্রভূত্বপ্রাপ্তিযোগ সেবা থেকেই আসে। তবে প্রভুত্বপ্রাপ্তিলিপ্সা একটি ভাঙা খাঁচা মাত্র।
৩.
সূর্যকে কেন্দ্র করে যেসব গ্রহ ঘোরে, সবগুলো নিজ নিজ কক্ষপথেই ঘোরে। কেউই অন্য কারো কক্ষপথ কখনও অনুসরণ করে না করবেও না, কিন্তু তাদের সবার কেন্দ্র একই- সূর্য। কারও কক্ষপথে কেউ ঢুকলে সৌরজগত ভারসাম্য হারিয়ে ফেলত নিশ্চয়ই। তাই তোমাকেও মনে রাখতে হবে: কেউই তোমার মতন হবে না; প্রত্যেককে তারই গুণমতো গড়ে তুলতে পারলে সেই-তারাই তোমার প্রতি কেন্দ্রস্থ শ্রদ্ধা জানাতে বাধ্য হবে। নেতা হতে হলে একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
৪.
যে গাছের একটাই মাথা, সেসব গাছই সরল বা সোজা হয় দেখছি। তাই সহজ মানুষের সমাজেও একজনমাত্র নেতা থাকতে হবে। না হয় সামাজিক পরিস্থিতি জটিল হবে। পারিবারিক স্বস্তিও সেই পরিবারে রয়েছে, যে পরিবার যোগ্যজনের একক সিদ্ধান্তে চলেছে।
কবিতা)
ভালোবাসা
রাফি ফরায়েজী
লাল আধর চুষে, মধুর আস্বাদন করা।
কোমল ছোঁয়াতে, শিহরণ তুলে ঝরে পড়া উদ্বেল যৌবন। এ নয় ভালোবাসা।
গোলাপে চুমু এঁকে কেবল, মধু সঞ্চয়ের প্রতারণা। কামনা পূরণের খেয়াল সাধনা।
ভালোবাসা তো ষোড়শী কুমারীর লিপস্টিকের মতন, হৃদয়ে লেপ্টে থাকা করো প্রেমের মায়াবী আল্পনা।
ইনভার্টেড কমার ভেতর
উদয়ন চক্রবর্তী
আমি একটা জায়গা খুঁজছি
যেটাকে মনে হবে আমার, একান্ত আমার
তখনই মহাজাগতিক ঝড় ভাসিয়ে
নিয়ে এলো নৈসর্গিক ধূলো আর তাপ
যা আমার রক্তের ভিতর শতাব্দীর জমাট
অহংকার বারবার জমাট বাধে অ্যাসপিরিন দিয়ে
লঘু করি সে কালচে রক্ত
আর ঠিকানা হীন পথে হেঁটে হেঁটে পথ খুঁজে মরি পিঁপড়ে দের মতো
মোবাইল টাওয়ারের মাথায় ক্লান্ত চিল
পড়ন্ত বিকেলে নেশাতুর মানুষের
না পাওয়ার কান্না শুনে
নিজেকে যথার্থই স্বাধীন ভেবে একবার
আকাশের দিকে তাকায়
সূর্যাস্ত দেখবে বলে
উঁচু মানুষেরা কারাগারের
ওপরে বসে আলো ঘড়ি দেখে আস্থানায়
ফেরার মানচিত্র আঁকে
কৌতূহল ওকে জানিয়ে দেয় মৃত্যু নিয়ে
মানুষের এড়িয়ে যাওয়ার অনুভব
সেখানে হাজার জিজ্ঞাসা চিহ্ন হাতে দাঁড়িয়ে
আছে সময়ের অপেক্ষায়
আর আমরা মানুষ নামের পোকা ইনভার্টেড কমার ভেতরে সেঁধিয়ে আছি মুহূর্ত দের হাতে নিয়ে।
শিক্ষার মাথা ন্যাড়া
মনোজ চৌধুরী
বেকারত্বের আগুনে জ্বলছে চারিদিক
হাজার হাজার দিন ঘুরে মেরুদন্ড নাজেহাল
আগামী কী নিথর কানা বোবা ?
শিক্ষা করলো মাথা ন্যাড়া- ভবিষ্যৎ হল টালমাটাল
তারা’ই কি লোহিতদূর্নীতির বাবা?
শিক্ষার পোশাক কেড়ে: তারা কি করেছে ঠিক?
আজ শিক্ষার মাথা ন্যাড়া
ডুকরে ডুকরে কাঁদছে এক নারী-সমাজ-আগামী
রঙিন চোখের স্বপ্ন চুরমার করেছে যাঁরা
অন্ধকারের রক্তে দূষিত এই ভূমি
বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলছি তুমি-আমি
আজ শিক্ষা যেন যন্ত্রণায় কাঁদছে
তার সঙ্গে কাঁদছে হাজার হাজার মুখ
ডিগ্রি নম্বর মার্কশিট চুলোয় যাচ্ছে
শুধু অন্ধকারের রাস্তা উন্মুখ।
আজ শিক্ষার মাথা ন্যাড়া
ডুকরে ডুকরে কাঁদছে এক স্বপ্ন
ডুকরে ডুকরে কাঁদছে সমাজ
যন্ত্রণায় কাতর এক নারী
আর অন্ধকার আগামী।
আজ শিক্ষার মাথা ন্যাড়া
শিক্ষা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি
রাতিক হাসান রাজীব
একটা নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে
ছেয়ে যাবে মাঠঘাট,
ওাস্তার মোড়, রেলস্টেশন
শহরের অলিগলি, সর্বত্র।
লিখা থাকবে-
কবির কবিতা হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে গেলে তুমি
হারিয়ে যাবে তোমার সেই চোখজোড়া;
যেখানে পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার ঘনীভূত
আমি তাকালেই ডুবে যাই অতল সমুদ্রে।
হারিয়ে যাবে তোমার ঠোঁট;
যার হাসিতে আমার পৃথিবীর সমস্ত সুখ লুকায়িত।
আনাড়ি
রুদ্র সুশান্ত
যে আগুন জ্বলছে জ্বলুক
বৃথা চেষ্টার কি ছিল দরকার?
এই আগুন জ্বলে জ্বলে নিভে যাবে
না হবে অন্যায় না হবে প্রতিবাদ আর।
যে মাটি জ্বলছে বিনা দোষে
বিনা কারণে যে হল ছারখার-
পদ্যরা ঘুমিয়ে পড়ে শিরিষতলে
এইখানে আমিই প্রেমিক আমিই সরকার।
এখানে পানির উপরে পদ্ম ফুটে না
সবুজে সবুজে ভালোবাসার কথা কয়না আর,
ছেলেটা করেনা প্রেমের বায়না
নিঃসংকোচে জীবন চলছে যার।
প্রথম চুমুর রাত
আশরাফ চঞ্চল
কেউ একদিন ডেকেছিল কাছে-
ছায়াঘূর্ণি রাতে
ঠোঁট মদিরায় চুমুক দিয়ে
হয়েছিলাম রাজা!
আমার সামনে যারা ছিল সবাই যেন প্রজা!