আমাদের মনে আগুন লাগুক
হাসান মাহাদি
আগুন জ্বলে
বাসে, ট্রামে, ট্রেনে
আগুন জ্বলে
হায়নার লোভাতুর চোখে
জীবন্ত মানুষের রক্তের লোভ,
জলন্ত হাড়গোড়-গোস্তের লোভ,
ক্ষমতার লোভ।
আগুন জ্বলে নিরাপদ নীড়ে
আগুন জ্বলে বেকসুর দেহে
আগুনে ছারখার স্বপ্ন, সংসার।
আগুন শুধু জ্বলে না নিভে যাওয়া হৃদয়ে
প্রতিবাদে, প্রতিশোধে
আর আমাদের বিক্রি হয়ে যাওয়া বিকৃত চেতনায়
আগুন শুধু জ্বলে না জালেমের কালো হাত ভেঙে দেওয়ার তাড়নায়
আগুন জ্বলে না আমাদের আত্মকেন্দ্রিক কামনায়-বাসনায়
গোপীবাগে ট্রেনের আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া
সেই শিশুটির হাড়গুলো নিয়ে কেউ মিছিলে যাবে না
পিশাচের আগুনে যখন মানুষ জ্বলে
তখন ঝলসানো মুরগীর লেইগ পিস আর লাল ওয়াইনে ব্যস্ত বেহায়া পুঁজিবাদ
নির্লজ্জরা স্লোগান দিবে
কথিত ডেমোক্রেসির পলিটিকাল গেইমের বিজয়ে
বেহায়া বুদ্ধিজীবীর শব্দদূষণে
হলুদ মিডিয়া ঢেকে দিবে পুড়ে যাওয়া মানুষের ছাইগুলো।
আগুন জ্বলছে
জ্বলুক!
একাত্তরের মতো গ্রামের পর গ্রাম আর শহরের পর শহর জ্বলুক
তবেই যদি হুঁশ আসে নিভে যাওয়া বারুদের
আগুন নেভাতে আগুনের প্রয়োজন
আমাদের মতো আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর মানুষগুলোর মনে আগুন লাগুক।
করুণ চারু বিষাদনামা
রফিকুল নাজিম
তোমা প্রেমিক হতে গিয়ে আমি কবি হয়ে গেলাম।
বিচ্ছেদের এই বিরানভূমিতে
বিষাদ আমার কালি
জীবন আমার কলম।
আমি প্রেমপত্র লেখার বদলে লিখে যাচ্ছি
করুণ চারু এক বিষাদনামা,
বিচ্ছেদের গোপন অনলে পুড়ে পুড়ে
আমি লিখে যাচ্ছি বিরহের অনিন্দ্য এক কবিতা- ‘তুমি কেন আমার হলে না?’
দ্বিতীয় ওজুদ
হুসাইন আহমদ
কমলা রঙের রোদে তোমাকে লিখছি
তোমাকে লিখছি জীবনের খেরোখাতায়
কবিতা আমার
যে কোনো মূহুর্তের কাছে তুমি চিরবিস্ময়
এবং চির উচ্ছ্বাসের নাম
জীবনের নিটোল অধ্যায়গুলো খরচ করে
তোমার পেছনে ছুটছি হরদম
তোমার জন্য তকমা জুটেছেউদাসী
পাগল, মাতাল, বদ্ধ উন্মাদ
আফোসোস নেই
কবিতা আমার
আমি জানি, আমার অস্তিত্বের আরেক নাম তুমি
রমণীর কেশভাগ ছুঁতে গিয়ে
যখনই মনে পড়েছে তোমার কথা
নির্জনতা তরক করেছি
দুই হাতে টুটি চেপে
ভুলে গেছি প্রবাল পৌরুষের কথা
কবিতা আমার
আমার মুহুর্মুহু বেদনার দিনে তুমি অব্যর্থ ওষুধ
আমার করোটির ডাকনাম তুমি
আর তুমিই দ্বিতীয় ওজুদ
মিলনের অসুখ
মিজান মনির
স্বপ্ন-প্রেম
আশা-ভালোবাসা
দু’জনা অমৃত অসুখে!
মর্ত্যলোকে বাসা
মেহেদী, বিয়ে
দু’জনার সন্ধি
আগামী নিয়ে
ঘুম ঘুম রাতে
নরোম পাহাড়ের নিচে
মিশে যাবো
খতিয়ান দাগে!
গড়বো পূর্ণ উত্তাপ-চাষে
স্বপ্নের শেকড়Ñ
আঁকা ইতিহাসের পাতায়
প্রজন্ম স্মরণ।
শীত আমার বোধের অনুক্ষণ
লুৎফা শাহিন
কুটুম্বশীত মোড়ানো কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যারাতÑ
সকালের রোমান্টিক সোনালি রোদ্দুর আমাদের লৌকিক ঐতিহ্য-অনুভূতি
আর বাঙালির পিঠা-পার্বনের বারতা প্রেমের আয়োজন কেমন মাতিয়ে রাখা
অলসতার দিনানিপাত মিষ্টি বিকেলের ভাঁজে ভাঁেজ স্পৃশ্যতার সংবেদ
কবির হৃদয়ে লুকোনো ছায়াসুন্দর রসিক উষ্ণতার সময় পার হয়!
আহা! কী সুন্দর তীব্র আবেগ শীতকে চেতনার মেজাজে আলাদা করছি আজ
আমাদের বেড়ে ওঠা দূর্বাঘাসে নারীঘুম মাতালবোধ নিয়ে ফিরে আসো তুমিÑ
আর চলে যাও অজানা শহরের ঠিকানায়Ñ
কুয়াশা-সূর্যের লুকোচুরি পরির্বতনের খেলায় আমার বোধের ভেতর
শীত এখন নতুন বিস্ময়ের এক অনুক্ষণ!
শীতের ঘটনা দৌড়ে যায় না!
মাসুদ মুস্তাফিজ
গতগ্রীষ্মে একটা ফ্লাটবাসা বন্ধুধ্বনির কাছে ধার নিয়েছিÑ
তারপর আমাদের আমাদের ইচ্ছেগুলো জেগে থাকে কুয়াশায় নদীর ঢেউয়ে
তারপর আমাদের মৃত্যু রচিত হয় আগুনজলে। এবং আমাদের অমার্দীঘ
সংসারের বিড়ালকলহ কিংবা বাক্যহীন অশেষ বিবেক সমস্ত শীত অব্যয়ে
স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে জমাটবাঁধারোদেÑ
শীত নিয়ে আমার গোধূলি আর ভোরের কুশল নেই আপাতত
শীত আমার ভালোবাসা যৌথ মমতায় স্মৃতিসঙ্গ ডানপিটে প্রেমিকা!
ভাবছি সুখিরোদে বাসাটি ছেড়ে দেবো এবারÑ