তোমাকে খুঁজে পেতেই আবার আমি আসব ফিরে...






তোমাকে খুঁজে পেতেই আবার আমি আসব ফিরে...
উম্মে হাবিবা অনু

আমার একটা রোগ আছে । যখন যা মনে হয় বা দেখার ইচ্ছা হয়; তা না দেখা পর্যন্ত মনে হয় যে, আমি  ঠিকমত অক্সিজেন পাচ্ছি না। এইতো কিছুদিন আগে নদী দেখার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম।  সাভারে থাকি তাই বংশী নদীই দেখতে গেলাম।
এই শখ তো মিটলো তারপর শুরু হলো পাহাড় দেখার শখ।
কিভাবে যাব কার সাথে যাব এসব ভাবতে ভাবতেই শুনলাম আমাদের সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে প্রতি বছর যে ভ্রমণের আয়োজন করা হয় সেখান থেকে এবার বান্দরবান আর সেন্টমার্টিন নিয়ে যাচ্ছে। সব বন্ধু বান্ধবও যাবে। ব্যাস আর কি লাগে..?  ১৬০ জন তরুণ তরুণী নিয়ে আমাদের সফর শুরু হলো..
প্রথমেই আসি বান্দরবানের কথায়। এ যেন এক আলাদা স্বর্গ। শহরের সব কর্মব্যস্ততা,  কোলাহল, হিংসা, প্রতিযোগিতা কিছুই যেন পাহাড়কে স্পর্শ করতে পারে নি। সে নিজের স্বতন্ত্রতা, কঠোরতায় অটল।

বান্দরবান পৌঁছে আমরা নীলগিরি উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। চাঁদের গাড়িতে করে যেতে হয় সেখানে। সে এক আজব গাড়ি। এত এত পাহাড় পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আর মেঘগুলো যেন তুলোর মত লেগে আছে। চট করে দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না যে আমি বাস্তবে আছি কল্পনায় নয়। পাহাড়ের গায়ে অনেক ফুল ফুটে ছিল। সব ফুল চিনতে পারিনি। মরিচা ফুল, রংবাহারি, চিকনগোছের শাঠি ফুলও ছিল।

সাদা রং এর কি একটা ফুল ছিল নাম জানি না তবে এত সুন্দর দেখতে। সব থেকে ভালো লেগেছে পাহাড়ি জবা। নতুন এক ধরনের জবাও দেখেছি।
DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

এই সৌন্দর্যের কারনেই তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পাহাড় কিনতে চেয়েছেন
পাহাড় কি আসলেই কিনে ফেলা যায়। আমরা কয়েকজন এক গাড়িতেই ছিলাম। লালনগীতি গাইতে গাইতে যাচ্ছিলাম। গানে আর সৌন্দর্যে আসলেই অদ্ভুত রকমের শূন্যতা কাজ করেছিলো তখন। নিজেকে খুব বেশিই শুণ্য মনে হচ্ছিলো। এত সুন্দর পরিবেশেও যে কেউ ঘুমাতে পারে তা আমার এক বন্ধুকে না দেখলে আমি জানতামই না। আমরা সবাই এত মজা করছিলাম সে ঘুমিয়ে ছিল। নীলগিরি থেকে ফিরে বিকেলে গিয়েছিলাম নীলাচল.. পাহাড়ে ঘেরা পরিবেশ। এত কিছুর মাঝেও এত সবার মাঝেও আমার চোখ দু’টো কিছু একটা খুঁজে বেরিয়েছে। দেখা পেয়েছে আবার পায়নি। পাহাড়ের লোকেরাও বড় অদ্ভুত।
DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

মনে হচ্ছিলো এখানেই থেকে যাই কি হবে ফিরে না গেলে। সেদিন রাতেই আমরা টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পাহাড়কে বিদায় দিতে খুবই খারাপ লেগেছিলো। বার বার মনে মনে বলছিলাম আবার আসব।

রাতের বেলা একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ভোরের দিকে আমরা টেকনাফ পৌঁছে গেলাম। তারপর শিপে করে সোজা সেন্টমার্টিন ।
২২ কিলোমিটার নাফ নদী আর ২০ কিলোমিটার বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হয়।  গাঙচিল ছিল অনেক তারা প্রায় সারা রাস্তা আমাদের সাথে এসেছে।
DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

যতবার তাদের দেখেছি ততবার নিজের মধ্যেও যেন পাখা মেলেছে নতুন সব ভাবনা। শিপের মধ্যে সবাই গান নিয়ে ব্যস্ত ছিল । সাগর আর পাহাড়ের মিলনমেলায় এ এক ভূস্বর্গ ছিল।
সেন্টমার্টিন পৌঁছে আমরা সকল তরুণ তরুণী নিজেদেরকে সাগরে বিলিয়ে দিয়েছিলাম।
সাগরের জলে একসাথে দৌড়ে নেমেছিলাম। বিশাল বিশাল ঢেউ এ যেন বিধ্বংসী রুপে বিরাজ হয়েছিল! আর সুর্যাস্ত দেখার সময় আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। খুব সুন্দর জিনিস মানুষকে যতটা আনন্দ দেয় তার থেকে দ্বিগুন দুঃখ দেয়। কারন তখন মানুষ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করে ফেলে। আমিও হয়ত তাই করছিলাম। পরদিন ভোরে গিয়েছিলাম ছেড়াদ্বীপ এ। সৃষ্টিকর্তার প্রসংশা করা ছাড়া উপায় ছিল না তখন। অবাক করা দৃশ্য ছিল সব।
খুব আপনজনের সাথে যেমন সব বলা যায় ঠিক তেমনি সাগরের সাথেও সব বলা যায়।

তাই আমি অনেক অভিযোগ লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। সমুদ্রের সাথে অনেক সময় একা কাটিয়েছি। অনেক অনেক অভিযোগ দিয়ে এসেছি। এখন ফেরার পালা ।
DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

যেদিন ফিরি সেদিন পুর্ণিমা ছিল
ফেরার সময় একই চিন্তা আসছিলো বারবার
আতœপোলব্ধিতে নিমগ্ন ঋষির মত
রাতের আকাশের সেই পূর্ণ পূর্ণিমায়
কিছু গোপন কথায়
লালনের সেই আট কুঠুরি নয় দরজার মিলনমেলায়
পুরোনো গানে, পুরোনো গল্পে
ব্যস্ত নগরীর শান্ত গলিতে
গ্রীষ্মের রোদে অনেক পথ হেঁটে আসা পথিকের ক্লান্ত চেহারায়
কান্ত নদীর মত তোমার মুখ ভেসে আসে 
আর আমি খুঁজে যাই তোমায় প্রকৃতির প্রত্যেক ধাপে
আর তোমাকে খুঁজে পেতেই আবার আমি আসব ফিরে !!!
DHANSHALIK YOUTUBE CHANNEL : https://www.youtube.com/channel/UCvalpdS1Kp_2lW5-Qibzzpw

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট