প্রকৃতি-ই আমার শিক্ষক
~আর.করিম
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার পুটিবিল্যা খুইশ্যামার পাড়া গ্রামের মোস্তাক আহমেদ এর চতুর্থ সন্তান আর করিম। পুরো নাম রেজাউল করিম। পৃথিবীর কোলে আগমন ১৯৯৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। নেশা একটাই ছবি আঁকা। অসাধারণ অঙ্কন তাঁর। অঙ্কনে মুগ্ধ সাকুল্যে। এই উদীয়মান তরুণ চিত্রশিল্পী’র সাক্ষাৎকার নিছেন ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র: আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আর.করিম : তোমাকেও ধন্যবাদ।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : প্রথমেই জানতে চাইবো চিত্রশিল্পী বলতে আপনি কি বুঝেন?
আর.করিম: চিত্রশিল্পী মানে আমি বুঝি একজন মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ। আমি এখনো নিজেকে শিল্পী দাবী করছিনা, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং এস এম সুলতান এর দেখানো পথে হাঁটতে চাচ্ছি, জানিনা কতটুকু পারছি এবং পারবো। যতটুকু পারিনা কেন, তবে আমি চেষ্টা করে যাবো।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনার ছবি আঁকার ইচ্ছে টা কখন থেকে? কিভাবে হলো?
আর.করিম : আমি তখন খুব ছোট, বাড়িতে প্রচুর বই থাকতো। যেহেতু আমার বড় ভাইবোনরা পড়ালেখা করতো। তাদের বই গুলো খুলে খুলে আমি ভেতরের ছবি গুলো দেখতাম। কেন জানি ছবি গুলো আমাকে খুব আকর্ষণ করতো। সে আকর্ষণ থেকে শুরু হলো আঁকার চেষ্টা। তারপর যখন আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়, তখন ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহটা আরো বেড়ে যায়। কারণ স্কুলের বইয়ের মধ্যে ছিল শিল্পী হাশেম খানের আঁকা রঙিন ছবি। শুরুটা মূলত এভাবেই।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনাকে ছবি আঁকার পেছনে অনুপ্রেরণাটা কে বেশি দিয়েছিল? আপনার ফ্যামিলির কেউ কি পড়ালেখার ক্ষতি ভেবে অন্য ভাবে দেখতো এ ছবি আঁকার নেশাটাকে?
আর.করিম : যদি একজনের কথা বলি সেটা মা। মা বেশী অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমাকে। শুধু পড়ালেখার ক্ষতি নয়, আমাদের পরিবার যেহেতু ধার্মিক ছিলেন সে হিসাবেই বাঁধা দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে সে বাঁধাটা আমাকে আর দেননি তারা, তাদের সে বাঁধাটা উৎসাহে পরিণত হয়। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিলেন ছবি আঁকা থেকে আমাকে সরানো যাবেনা।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনি কোন আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন?
আর.করিম : আর্ট স্কুল বা আর্ট কলেজে এখনো নই, এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি তবে আগামীতে চারুকলায় পড়ার ইচ্ছা আছে। ছবি আঁকা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কোন শিক্ষা নেই। প্রকৃতি-ই আমার শিক্ষক। মানুষের ভালবাসা আর নিজের চেষ্টা এতদূর আসতে পেরেছি আমি।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনি বর্তমানে কি করছেন? শুধু ছবি আঁকা না অন্য কিছুও?
আর.করিম : আমি বর্তমানে ছবি আঁকার পাশাপাশি পড়ালেখাটা চালিয়ে যাচ্ছি, আর কিছু করছিনা। আমার মনে হয় ছবি আঁকা ছাড়া আমাকে দিয়ে আর কোনো কাজ সম্ভব নয়।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনার ভবিষ্যত ভাবনা কি ছবি আঁকা নিয়ে?
আর.করিম : আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই ছবি এঁকে যাওয়া। পরিণতি যাই হোক না কেন।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : কোন ধরণের ছবি আঁকতে বেশি ভালো লাগে?
আর.করিম : মানুষের মুখ আমাকে খুব আকর্ষণ করে। পাশাপাশি গ্রাম বাংলার প্রকৃতিও। বর্তমানে এ দুটি বিষয় আঁকতে আমার খুব ভাল লাগে।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আমি মূখ্যপুঞ্জিতে আপনার ওয়ালে দেখলাম প্রায় সকল বিখ্যাত লোকের ছবি এঁকেছেন। জীবিত যারা তাদের নজরে কি পড়েছে আপনার আঁকা তাদের প্রতিকৃতি?
আর.করিম : হ্যাঁ, আমার আঁকা প্রায় প্রতিকৃতি গুলো বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে। সেখানে প্রয়াত মানুষের সংখ্যাই বেশি হবে। জীবিত মানুষের ছবির সংখ্যা খুবই কম। জীবিত মানুষদের ছবি গুলোও প্রায় তাঁদের নজরে পড়েছে। তাঁদের থেকে অনেক স্বীকৃতি এবং প্রশংসাও কম পাইনি। তাদের স্বীকৃতি আর প্রশংসাগুলো আমাকে কাজের প্রতি আরোও আগ্রহ জাগিয়ে তোলে। জীবিত অবস্থায় যারা আমার আঁকা তাদের ছবি দেখেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন - কবি নির্মলেন্দুগুণ , আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা, গীতিকার লিয়াকত আলী বিশ্বাস, আর জে কিবরিয়া, চলচ্চিত্রকার মালেক আফসারী, তরুণ উদ্যোক্তা ইকবাল বাহার, চিত্রশিল্পী মামুন হোসাইন, চিত্রশিল্পী সোহাগ পারভেজ, ড. সলিমুল্লাহ খান, আনিসুল হক , কবি জাহেদ সরওয়ার সহ আরোও অনেকে।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনার প্রিয় আঁকিয়ে কে?
আর.করিম : আমার প্রিয় আঁকিয়ে জয়নুল আবেদিন। তবে আরেকজন শিল্পীর কথা না বললেই নয়। আমি যেসব শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়েছি তাদের মধ্যে শিল্পী কামালুদ্দিন অন্যতম। তিনি বর্তমানে চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনার আঁকাআঁকি ছাড়া আর কি করতে ভালো লাগে?
আর.করিম : ছবি আঁকা-আঁকি ছাড়া আরেকটি বিষয় আমাকে খুব টানে, সেটি হলো গান। আমি গান গাইতে পারি সেটি অনেকেই জানেন না, তবে যারা জানেন তারা আমার গানের গলার খুব প্রশংসা করে। আগামীতে যারা শুনবে আশা করি তাদেরও ভাল লাগবে। আমি এতটুকু বলতে পারি আমার কন্ঠ তেমন ভাল না হলেও গায়কিটা খারাপ না।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : একজন নতুন আঁকিয়ে কে আপনার পরামর্শ কি?
আর.করিম : ছবি আঁকাটা মন থেকে আসে এবং মন থেকে করতে হয়। অনেকের মন থেকে আসলেও চর্চা না করার কারণে হয়না। চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বলেছিলেন - ছবি আঁকাটা সার্বক্ষণিক চর্চার বিষয়। আসলে তাই। চেষ্টা না করে বড় শিল্পীদের মত আঁকতে চাইলে তো হবেনা, চেষ্টা করতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : আপনার চোখে আপনার আঁকা শ্রেষ্ঠ ছবি কোনটা?
আর.করিম : কবি নির্মলেন্দুগুনের সে ছবিটি, যে ছবিটি উনি নিজে আমার সম্পর্কে লিখে উনার ফেসবুকে পোষ্ট করেছিলেন এবং আমাকে ধন্য করেছিলেন। তিনি বলেছেন তার কোনো বইয়ের ফ্ল্যাপে বা প্রচ্ছদে আমার আঁকা ছবিটা ব্যবহার করবেন । সেটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র : ধন্যবাদ আপনাকে।
আর.করিম : তোমাকেও।