পদাবলি : ৩



বেনামীনামা
শারমিন আক্তার

আপাতত সব ঘুম কোলাহলের- অগোচরে তার বাসা বাঁধে নরম সুখ।

বাতাসের বুকে গা এলিয়ে থাকা বেনামী রোদ, ছায়া মেপে দিন গোনে অবেলার। অধিকার বুঝিয়ে দেবার কেউ নেই, ঘুমিয়ে পড়েছে তারা যে যার মতন। তাই থাক, দিনান্ত ফুরিয়ে যাক আঁধারের নস্ট্যালজিয়ায়। দুপুরের সৎকার, পড়ন্ত বিকেল, ছায়াবী গোধূলি,
অতঃপর দশ দিগন্তে ঘনিয়ে আসুক নিকষ কালো- যাতে ছন্দেরা কবিতায় বাসা বাঁধে, আমিও ডুব দিই পরিচয়হীন কোন নামে গভীরতর স্বস্তির খোঁজে মাছেদের মতন।

নিঃসঙ্গ দুপুর ও পায়ের নূপুর
সেলিম রেজা 

ওড়না টেনে লজ্জাবতী কিশোরী মুখ লুকোয়;
কামুক অন্তর্বাস দেখে কামনার জোয়ারে ভাসে
নেশাতুর কল্কি টেনে মাতাল গরলবিশ্বাসী
কেউ আসবে ভেবে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে নিঃসঙ্গ দুপুর
লজাবতী কিশোরী বিস্তৃীর্ণ মাঠে হারিয়েছে পায়ের নূপুর
স্বপ্নচিল ওড়ে গোধূলীর আধো আধো আলোয়
অযাচিত কষ্টগুলো মোমের মতো ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ে
দূরে নীল ঘাসের বনে খেলে পরাগ-পাঁপড়ি;
একাকী বিস্তর মাঠ অনাবাদী পড়ে থাকে কতকাল!!



হে আমার প্রথম কন্যা
জোবায়ের মিলন

১.
প্রতিদিন তুমি বয়সের সাথে যোগ করছো
আরও একটি দিন।
আমার মাথা থেকে ঝরে পড়ছে আরও কিছু চুল,
বাড়ছে কপালের ভাঁজ।
তোমার আঙুল বড় হচ্ছে, হাত বড় হচ্ছে,
পায়ে বাড়ছে শাক্তি-
তুমি হাঁটতে শিখছো; আমি ধীর হচ্ছি ক্রমাগত।
তোমার স্বপ্নগুলো রঙিন, অনভিজ্ঞ, পাতার মতো কাঁচা-
তুমি শুধু বোঝ যোগ চিহ্ন;
আমি যোগ, বিয়োগের সাথে এসেছি এতোটা দূর।

তুমি পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছো,
আকাশের গাঁও ছুঁয়ে ভাসতে চাচ্ছো;
তোমার তো পাঠ নেই ঋতু নিয়ে!
আমি ষড়ঋতুর ভেতর দিয়ে আসতে আসতে
দেখেছি মেঘ ও বৃষ্টির, আকাশ ও মাটির খেলা।
তুমি আমাকে এড়িয়ে যেতে চাও প্রতি নি:শ্বাসে,
আমি দীর্ঘ সুতোর উপর দিয়ে পাড়ি দিচ্ছি তপ্তচিমুনি-
কেঁপে ওঠছি তোমার সম্মুখে পাতা আগত দিনের
কল্পনায়- কী করে এখানে তুমি কানন হয়ে ফুটবে!
-এই পৃথিবী যে আর তোমার বাসযোগ্য নেই।


হাতল চাপার মুগ্ধ দর্শক 
বিটুল দেব

চাপা কলের হাতল চাপার শব্দে কষ্ট গুলো করে উঠা নামা। কখনো জলের পূর্ণতায় উপচে পড়ে যুবতী কলসির শরীর বেয়ে। মুগ্ধ হয়ে আড়ালে, তোমার চোখের নিশানা। জলের শব্দে সম্বিত ফিরে দেখি বারবার জোড়া চড়–ই। কেঁপে ওঠা ধূসর রঙের সরু ঠোঁট। দেখতে দেখতে বিকেলটা হারায় পারিজাত বৃক্ষের কোটরে। সেই সাথে সূর্যটা দিচ্ছে হামি। সদ্য ঝরে পড়া হলুদ পাতার মতো অস্ত যাবে বলে। ভেসে আসা শঙ্খের ধ্বণির মতো বাতাসে ভাসে হাসির মুক্তোর কণা। নদীর তীরে অবাধ্য সবুজ ঘাসের ঘর। প্রতি নিঃশ^াসে তোমার ভালোবাসার বার্তা।

অনুচ্চারিত প্রেমিকা
দিপংকর ইমন

কতবার বলতে চেয়েছি, ভালোবাসি।
তবুও বলতে পারিনি মুখ ফুটে।
আমার অনুচ্চারিত ভালোবাসা গুলো
বারবার গড়াগড়ি খেয়েছে,
তোমার উঠানে, তোমার বারান্দায়, তোমার জানালার ওপাশ টায়।
আমি নির্লজ্জের মত পান করে যাই পৃথিবীর স্তন।
অথচ, আমি মুখ ফুটে একবারও বলতে পারিনি
আমি বিপ্লবকে ভালোবাসি।
বিপ্লব আমার তথাকথিত কোন প্রেমিকা নয়।



তফাৎ  
অভিজিৎ মান্না

আমি যেনো অনেক তফাৎ এ 
ঘাস হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ।
তবু ইচ্ছা হয়
রবাহূত হয়ে আসরে ঢুকি ।
ললাটের চুল সরিয়ে ছুঁয়ে দিই
একান্ত তর্জনী ।
প্রকৃতির পাতায় বড্ড জবুথবু ।
নক্ষত্র আদরহীন গুমোট ঘরে -
এক কবি । শ্যাওলা ভাঙি ।
প্রকৃত বিভাজন মেপে মেপে
সত্যিই অনেকটা তফাৎ এ ।


একশো আটটি পিঁপড়ে তবু ঘুমোচ্ছে
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম

জন্মাতে পারছিনা:
অন্তত একবার বিশ্বাস করো,
ঘুড়ি না উড়ার ষড়যন্ত্রে, আমি কেউ নই;

শেষ পর্যন্ত একশো আটটি পিঁপড়ে তবু ঘুমোচ্ছে।

তোলপাড়ের ভেতরেও মগ্ন যে কালোগোলাপ,
খড়ের মতো পুড়ে যাচ্ছে আগুন্তুকের যে ইচ্ছা,
বরফ কুচির ভাঁজে ঘাপটি মেরে আছে যে গোল রুটি,
ক্ষরণের চিহ্ন লেপটে যাবার আগে উসকে দিচ্ছো যে নৈবেদ্য,
তা সব, গেঁথে যাচ্ছি লোহিত কোরকের লকলকে ওমে।

শ্বেতধোঁয়া ভেসে উঠছে,
হরিৎ ডেরায় জমা করতে থাকো কুয়াশা সারগাম।

জন্মাতে পারছিনা:
আঁশটে গন্ধের প্রতœশহরে,
মোমের মাস্তুলের পাশে, আমি কেউ নই।

বেঘোর জুয়ারি হেঁটে যাক তবে কীটদষ্ট সরাইখানায়।

অথবা বাঁশের খোড়লে বিশুদ্ধ ঘুম ঢেলে,
অথবা কোয়েলের ঝলসানো মাংস খেতে খেতে,
অথবা ঘনশীত রাতে বিভ্রমের ভায়োলিন বাজিয়ে,
অথবা প্রেসের চাকার ধ্বনি পোষা ট্রেনের চাকায় পিষ্ট করে,
মুমূর্ষু বয়ঃসন্ধি রেখে যাব থানকুনি পাতার আড়ালে।

পরিশিষ্টে দ্যাখো কিছুই পাইনি।
অথচ কী দারুণ ছন্দে নিভে যাচ্ছে সবকটা ঝাড়বাতি।

জন্মাতে পারছিনা:
মুদ্রাবিভঙ্গের জমকালো স্বর,
আর গোরখোদকের চিঠির সংবাদে, আমি কেউ নই।

সমূহ কৌশল জেনে কেবলই জড়ো করছি বিকট চিৎকার।





দেখা হলেই বলব
আহমদ মেহেদী

ভোরের শিশির ভেজা কুয়াশারা আমার কানে কানে বলে দেয়-
তুমি এখনো আমার কথা জানতে চাও,
শীতের স্মৃতিগুলো আবার আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাও,
কুয়াশার রাতে আমার সাথে গোপনে দেখা করতে চাও;
কাশ্মিরি-চাদর হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাও,
পেস্ট-কালার শার্টে এখনো আমায় কেমন লাগে দেখতে চাও ।
এই মায়াহীন শহরের সকল মায়া ছিন্ন করে  আসতে পারবে ?

একদিন দেখা দাও প্রিয়তমা- তোমাকে ছাড়া কেমন আছি
সেদিন দেখা হলেই বলব।

ছুটি হবে একদিন
মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ

ছুটি হবে একদিন
ব্যস্ত কোলাহল থেকে
মায়ের আঁচল জড়ানো মিষ্টি আদর থেকে
বাবার ¯েœহ মাখা জড়ানো ছায়া থেকে।

ছুটি হবে একদিন
ভোরের মলয় থেকে
সকালের সোনালী আলোর পরশ থেকে
দুপুরের ত্যজদ্বীপ্ত প্রখরতা থেকে
কিংবা বিকেলের আবির মাখা পথের প্রান্ত থেকে।

ছুটি হবে একদিন
পড়ার টেবিল থেকে
মায়ের বকুনি বাবর শাসন, স্কুলের বারান্দা থেকে
কিংবা অফিসের ব্যস্ত চরিত্র থেকে।

ছুটি হবে একদিন
সবুজ ঘাসেদের থেকে
ফড়িংয়ের দুরন্তপনা পাখিদের কলরব ভ্রমরের
গুঞ্জন থেকে
ছুটি হবে একদিন
বিচিত্র ক্যানভাস থেকে
নদী আর সগরের প্রণয়ের সুর দেখে দেখে
মেঘেদের ছুটে চলা পথের প্রান্ত ছেড়ে।
এভাবেই ছুটি হবে একদিন
অনন্ত পথের পানে।।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট