দাসত্ব



দাসত্ব
জুয়েল মাহমুদ

আত্নাকে জয় করা মানে বিশ্বজয় করা। অন্যের দাসত্বে পরিপূর্ণ আত্না কখনো মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে না। অথচ কবি বলেছেন বাদশা আলমগীর যদি তাকে শাস্তির কথা বলেন আমি  বলব
‘ভয় করি নাক, ধারি নাক কোন ধার, মনে আছো মোর বল
বাদশাহ শুঁধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল’।
অথচ যারা জাতির কারিগর তারাই আজ দাসত্ব করে বেড়ায়। আজ দাসত্ব এতটুকু বাড়ন্ত যার ফলে ওস্তাদের হাত আজ ছাত্রের পায়ে। অথচ এই হাত থাকার কথা ছাত্রের মাথায়।
‘দাস’ মানে গোলাম। আর দাসত্ব শব্দের অর্থ অন্যের গোলামী করা। সভ্যতার অগ্রগতিতে আজও দাসত্ব বাঙ্গালির মনোভাব ইতিবাচক করে তুলেছে। তারা মনে করে দাসত্বই যতই সুখ। হয়ত আপনারা বলতে পারেন দাস যেহেতু আছে আত্বসমালোচক নিশ্চয় আছে? ভালো দিক দেখুন। আসলে হ্যাঁ, আমাদের ডাক্তার, মন্ত্রী, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে তারা আবার আন্তর্জাতিকের দাসত্ব করে। যার ফলে অগ্রগতির ছোঁয়া যেখানে লাগে সেখানেই বাঁধা।
আতœসমালোচনা হলো আতœার শুদ্ধি। আর আত্নার সমালোচকরাই জীবনের সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে। তারা নিজেকে করেছে জয়। বিল গেটস, আইন স্টাইন, আব্রাহাম লিংকন, মাশরাফি বিন মর্তুজাদের সাফল্যতার পিছনেই রয়ে আতœসমালোচনা, দাসত্ব পরিহার ও পরিশ্রমের ইতিবাচক ফলাফল। প্রতিবন্ধী ছেলে যাকে মা কোলে করে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছে সেই ছেলেটি আজ নিজের প্রতি সুবিচারক। আমরা নেতার পিছনে থেকে স্লোগান দিতে পারি অথচ নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা আজও পারিনি উপস্থাপন করতে। আমরা আতœসমালোচক না হয়ে হয়েছি আতœার সমালোচক। এর অর্থ যে আত্না অন্যের আমার নয়। আমরা পারিনি উৎসাহ দিতে আমরা শিখেছি অন্যের প্রতিভায় মরীচিকার প্রতিসরণ ঘটাতে। নিজের আলোয় আলোকিত না হয়ে রয়েছি দাস হয়ে। আমরা নিজের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে সাত গ্লাস পানি পান করতে হয় অথচ মাকাল ফলের সৌন্দর্য বর্ণনায় আমরা পারদর্শী। যেখানে ছাত্র এসে শিক্ষককে সম্মান করত আজ আমরা শিক্ষক হয়ে ছাত্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমরা অন্যের সৌন্দর্য্যকে যে হারে উপস্থাপন করতে চায় যেন শয়ন খালিক। আজ আমাদের দাসত্ব মনোভাবের কারণেই আমরা উচুজাত নিচুজাতে পরিণত করেছে।
এজন্যই নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া এই জাতিকে ব্যাঙ্গ করে প্রবন্ধ লিখেছেন- ‘নিরীহ বাঙ্গালী’। অথচ এই জাতিকে কবি নজরুল বলেছেন ‘অরুণ প্রাতের তরুণ দল’। যারা রাঙ্গা প্রভাত আনার মত যুতসই জাতি। হয়ত নজরুলও দেখেছেন এই জাতির দাসত্বের মাঝে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে। পরশ্রীকাতরতার মাঝে খুঁজে পেয়েছেন আতœার সৌন্দর্যকে। অথচ আমরা আজ মেধাবী হতে চাই না আমরা মেধাসত্ত্ব চুরি করে আজ বিখ্যাত হতে শিখেছি। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন- ‘বই মানুষকে আলোর পথ দেখায়’।

উনি তাঁর লাইব্রেরি প্রবন্ধ লিখতে লিখতে হয়ত ভেবেছেন এই প্রবন্ধ পড়ে জনতা বলবে আমাকে বই দাও আমি লাইব্রেরি গড়ে তুলবো। বা মানুষ লাইব্রেরীর গুরুত্ব বুজতে পারবে। অথচ আজ মানুষ বলছে ‘আমাকে রিমোট দাও, আমি সিরিয়াল দেখব’। যে জাতি আজ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ আজ সেই জাতিই, ধর্ম, বর্ণের পার্থক্য খুঁজে বেড়ায়। এর মূলই দাসত্ব আর পরশ্রীকাতরতা। এই দাসত্বের জন্য  আজও আমরা দেশ চালাতে গিয়ে অন্য দেশের নীতিমালা ধার করি। অথচ আমরা মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন করে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখিয়েছি। আমরা আজও স্বপ্ন দেখি জাত, ধর্ম, বর্ণ, দাসত্ব,  পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলে বিশ্বের মাঝে মাথা উচু করো দাঁড়াতে। আমরা শুধু মানুষের দাসত্ব করিনা আমরা পরের সৌন্দর্য রূপেরও দাসত্ব করি। আর বর্ণবাদ আচারণ আজ আমরা খুবই বাড়ন্ত। আমরা মোলায়েম ভালোবাসি আর কাকের গায়ের রঙ নিয়ে কত না বৈষম্যমূলক আচারণ করি। কে খাটো কে লম্বা কে মোটা কে চিকন এসবের দিকে আমরা অনেক এগিয়ে থাকি এক্ষেত্রে আমরা বিশে¬ষক। ডিগ্রী থাক বা না থাক। সৌন্দর্যের দাসত্বে আমরা খাটো আর কালো মানুষগুলোর মেধাকে মূল্যায়ন করতে পারিনা অথচ জনৈক ব্যক্তি বলেছেন-  ‘তোমরা কারো চেহারাকে নয় মাথাকে মূল্যায়ন কর। আমি বলি মাল থাকলে মালদার হওয়া যায় আর মেধা থাকলে যশ খ্যাতি পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত বর্ণবাদের স্বীকার। অথচ এই বর্ণবাদ দূর করার জন্য নেলসন মেন্ডেলা কত না নির্যাতিত হয়েছেন। বর্ণবাদের মূল কারণেই বাহ্যিক সৌন্দর্যের দাসত্ব। আজ যদি নেলসন বেঁচে থাকত হয়ত আমার পাশে এসে দাঁড়াতেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বলতাম নেতা আমিও আজ বর্ণবাদের স্বীকার। তিনি হয়ত তবুও বলতেন- ‘আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ।
আর আমিও বলি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট