পাহারা
ইব্রাহীম রাসেল
মোকাম চাচা মেয়ের জন্য পাহারা বসিয়েছেন। কে যেন কানে দিয়েছে মেয়ে তার প্রেমে পড়েছে। মোকাম চাচার ঘুম-নিদ্রা বন্ধ। মেয়ে কলেজে ভর্তি হতে না হতেই এই কা-! চাচা আমাকে ডেকে বললেন-চাচাত বোন বলে কী তোর কোনো দায়িত্ব নেই? তোর নিজের তো বোন নেই, দুই-দুইটা ভাই আছো। চাচাতো বোনদের তো একটু দেখে রাখতে পারিস। কোথায় যায়? কার সাথে মেশে?
- জ্বি আচ্ছা, চাচা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, মাইমুনার দিকে আমরা খেয়াল রাখব।
- চাচার স্বর একটু উঁচু হয় এবার-চিন্তা কী আর সাধে করি? তোমার বোন মেট্টিক পাড় হতে না হতেই প্রেমে পড়েছে!
- বলেন কী চাচা! মাইমুনা তো এমন মেয়েই না।
- হ, তোমরা সব ভাইবোন তো সাধু। দুধের ধোয়া তুলসি পাতা। বলতে বলতে মোকাম চাচা পায়ে খট খট আওয়াজ তুলে বাজারের দিকে চলে গেলেন।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল । সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=7_bEP0d9Rm4
চাচার ঘরে ঢুকলাম। দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাইমুনা কাঁদছে। নিশ্চয়ই মোকাম চাচা উত্তম-মাধ্যম দিয়েছে। মাইমুনাকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম-কাঁদিস না তো, একটা প্রশ্নের উত্তর দে। চাচার নামটা মোকাম রেখেছিল কে? মাথায় তো তার সারাদিন যত আকাম চিন্তা ঘুরপাক খায়। কে কী বলেছে, অমনি মেয়েকে এসে মারধর শুরু! আসলে চাচার নাম হওয়া উচিত ছিল ‘আকাম’। দাদা-দাদি তার নামের ক্ষেত্রে একটু মিসটেক করে ফেলেছে। নামটা ‘আকাম’ হলেই ভালো হতো। সবাই ডাকতাম আকাম চাচা, ও... আকাম চাচা!
- মাইমুনা হেসে দিল। হাসতে হাসতে বলল-ভাইয়া, বাবাকে নিয়ে ইয়ার্কি কিন্তু বরদাস্ত করব না।
- হুম, খুব দরদ দেখছি বাবার জন্যে। তিনি যে তোমাকে কতটা আদর করেন তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি।
- যাক, বাদ দাও। বাবার কাজ বাবারা করবেই। এবার আসল কথায় আসো। আমার চিঠি কই?
- চিঠি! কীসের চিঠি? কোন চিঠি? একটুখানি ভনিতা করলাম।
- মাইমুনা বলল, তোমাকে না বলেছিলাম আমাকে একটা ভালোবাসার চিঠি লিখে দিতে। সেটা দেখে দেখে আমি একজনকে লিখব।
- হ, তুমি তো চিঠি লিখবাই, আর এইদিকে চাচা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাকে পাহারা দেয়ার জন্য।
- দিবা, তোমাকে পাহারা দিতে কে নিষেধ করেছে? পাহারা দিবা আবার চিঠিও লিখে দিবা।
- পকেট থেকে চিঠিটা বের করে মাইমুনার হাতে দিলাম। বললাম-এই যুগে এসেও চিঠি লিখছ?
- কী করব? আমাকে কী মোবাইল দিয়েছে? যাকে লিখব তাকেও তো তার বাবা মোবাইল কিনে দেয়নি।
চোখের সামনেই মাইমুনা কখন যে এতো বড়ো হয়ে গেল! চার বছরের ছোটো হলেও ওকে দেখ মনেই হয় না। বিশেষ করে ওর চোখ আর হাঁটু অবধি অবাধ চুলগুলো যে কাউকে আকর্ষিত করে। চিঠিটা কাকে দেবে জানিনা। আমি আমার মনের কথাগুলোই লিখে দিয়েছি। মাইমুনা বুঝবে কিনা কে জানে!
বেশ কিছুদিন কেটে গেল। ভেবেছিলাম মাইমুনা হয়তো বুঝতে পারবে চিঠির কথাগুল। কেউ কাউকে ভালো না বাসলে এমন করে তার জন্য লেখা যায় না। এদিকে মোকাম চাচা আরও একজন লোক নিয়োগ দিয়েছে মাইমুনাকে কলেজে আনা-নেওয়ার জন্য। মাইমুনাকে দেখলাম বিষয়টা নিয়ে সে মোটেও বিচলিত নয়। নিয়মিত পাহারার মধ্যেই কলেজে আসা যাওয়া করছে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। জুমার নামায শেষে বাসায় ফিরছিলাম। চাচার ঘরের দিকে চেঁচামেচি শুনে এগিয়ে গেলাম। মোকাম চাচা দৌঁড়ে এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বললেন- কী দায়িত্ব পালন করলি তুই?
নির্বাক আমি উপস্থিত লোকগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে বিষয়টা অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলাম। চাচি এলো ঘরের ভেতর থেকে। হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বললেন- তোর ছোটো ভাই আর মাইমুনাকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের দুজনকে একসাথে স্টেশনে দেখেছে তোর চাচার পরিচিত একজন।