প্রতীক্ষা



প্রতীক্ষা
মোস্তফা কামাল

বনফুলের অনাকাঙ্খিত ঘ্রাণে মুগ্ধ লুবনা নির্জন দুপুরের নিঝুম অরণ্যের ছায়ায় পুকুরঘাটের রৌদ্রছায়ার চিরায়িত খেলায় মগ্ন ছিল। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালা, লতানো তরুলতা আর পদ্মফুল যেন, অবলীলায়, অবাক চোখে, নীরব ছন্দে, মুগ্ধ হয়ে লুবনার দিকে অপলক তাকিয়ে রয়েছে। তার এলোমেলো কালো চুল, কাজল কালো হরিণীর চোখ যেন আকাশ বাতাস আলোর ঝালকানীতে মুখর করে তুলছে। কোথা হতে যেনো বাঁশির সুমধুর সুর ভেসে এসে তাকে  বিরহী করে তুলছে। হঠাৎ ঐ বুনো পথে হেঁটে যাচ্ছিল বখাটে মোহন। লুবনার অপূর্ব দেহ বিন্যাসে মুগ্ধ মোহন লালায়িত হয়। মোহনের মনে আদিম কামনা জেগে ওঠে। সে অবৈধ দেহ দখলের নেশায়  কুমতলব আঁটতে থাকে। সে ভাবে লুবনাকে একরাত বাড়ির বাইরে রাখতে পারলেই তার ইচ্ছে পূরণ সম্ভব। এতে লুবনার দুর্নাম রটবে। তাকে কেউ বিয়ে আর করবো না। এই বিকৃত মানসিকতা নিয়ে সে লুবনাকে একটি অপরিত্যক্ত বাড়িতে আটকে রাখে। কিন্তু তার পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয় একই গ্রামের ছেলে রাসেল। রাসেল আসলে সিঁধেল চোর। সে সারারাত চুরির ধান্ধায় পাড়াময় ঘুরে বেড়ায়। প্রতি রাতের মতো সে রাতেও রাসেল  লুবনাকে যে ঘরে আটকে রাখা হয় সে ঘরেই ঘুমিয়েছিল  জালাল মাদবরের খোপের মুরগি  চুরি করে এসে। এতেই যত কেলেঙ্কারি। গ্রাম পঞ্চায়েতের শালিসিতে রাসেলকে শাস্তি পেতে হয়। আর সে শাস্তি হলো লুবনাকে বিয়ে করা। বিয়ের পরপরই তাকে হাজত বাস করতে হয় চুরির দায়ে। কারা ভোগ শেষে যখন রাসেল বাড়ি ফিরছিল তখন রাস্তার পাশে ছুরিবিদ্ধ এক কিশোরকে দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার চিকিৎসা করায়। যখন সে জানতে পারল এই কিশোর মোহনের ছোট ভাই সোহান তখন সে মোহনের কাছে তার খবর দিতে যায়। ও দিকে গ্রামের এক লোক এসে মোহনকে জানায় যে সোহানকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে রাসেল। মোহন তার দলবল নিয়ে রাসেলকে খুঁজতে বেরিয়ে পডড়ে। রাসেলকে সামনে পাওয়া মাত্রই তার উপর উপর্যুপরি হামলা চালায়। রাসেলের পক্ষে তা রুখে দেওয়া সম্ভব হয় না। কিছুক্ষণ প্রতিরোধের পর তার মাথায় লাঠিয়াল প্রধান স্বজোরে আঘাত করলে তার প্রাণ বিয়োগ ঘটে। লুবনা স্বামীর মৃত্যুতে ভীষণ আঘাত পায়। কিছুদিন কেটে গেলে তার প্রথম ভালোবাসা কামাল গ্রামে ফিরে এবং সব ঘটনা জানতে পেরে সে ভীষণ আহত হয়। সে লুবনাকে দেখতে যায় এবং সব ভুলে তার সাথে নতুন করে জীবন শুরু করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু লুবনা এর কোনো উত্তর না দিয়ে দৌঁড়ে ঘরে চলে যায়। দরজায় খিল তুলে দেয়। কামাল বন্ধ দরজা খোলার প্রতিক্ষায় নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকে।

 ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল । সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=7_bEP0d9Rm4  
 
কামালের নির্ঘুম অনেক রাত্রিই এভাবে পার হয়েছে তবুও হয় নি তার স্বপ্নের শেষ দেখা। আজ যখন স্বপ্নের কাছাকাছি তখন স্বপ্নের পানে ফিরে এসে বারে বারে লুবনার আকুতি কেন যেন হয়ে পড়ে বড় ক্লান্ত। লুবনার স্বপ্নের আকাশে কামাল কেবলি চেয়েছি উদিত এক সূর্যের আর্বিভাব কিন্তু তার অজানা ভয় সেই উদিত সূর্যকে বারে বারে দিয়েছে ঠেলে অস্তপানে। লুবনা আসলে অস্ত ভালোবাসো নয়, উদিত সূর্যের রক্তিম আভাতেই লুবনার যত সংকোচ। কামালের ভালো লাগে লুবনার সমুদ্র অথচ সেই সমুদ্রের ঢেউকেই তার এত ভয়। কামাল কেবলি সুখ সুখ করেই অনন্ত পানে দিকভ্রান্ত হয়ে স্বপ্নের পানে ছুটে চল অথচ সুখ তার অঙিনায় অঝোর শ্রাবণের ধারা সৃষ্টি করেছে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট