অপেক্ষা
শফিক নহোর
ফরিদা ভাবি আজ ক’দিন আমাকে বাসায় যেতে বলছে । এ দিকে আমার অফিসের কাজের চাপ, বাসায় যেতে হলে তো একেবারে খালি হাতে যাওয়া বেমানান । আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে । ভাবি , আমার কাছে একবার কদবেল খেতে চেয়েছিলো । অপা পোদ্দারের বাড়ি থেকে কদবেল নিয়ে গিয়েছিলাম । সে অনেক আগের কথা এতদিন পর যাচ্ছি , খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে !’ কদবেল পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিল । আমাকে জড়িয়ে ধরে, পাগলের মত বলছিল,
-এবার কিন্তু তোমার ভাইয়া বাসায় নেই । ক’দিন থেকে যেতে হবে ।
আমি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম ,
-আমার ইউনিভার্সিটির ক্লাস আছে । থাকতে পারব না ।
সে নাছোড়বান্দা কোন ভাবেই যেতে দিল না । স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ঝকঝক করছে । পৃথিবীতে ভাল মানুষের সংখ্যা এখনও অনেক বেশি । তাই হয়তো পৃথিবীটা চমৎকার লাগে । ফরিদা ভাবি আমার কাছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ভরসার নাম ফরিদা ভাবি ।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল । সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=7_bEP0d9Rm4
‘আমি অফিস শেষ করে বাস-স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি , হালকা বেহেস্তি কালারের শাড়ি পরে মধ্যবয়সী তরতাজা একজন উর্বশী আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল । তাঁর গায়ের ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগল । আমি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । মানুষ কী করে এত সুন্দরী হয় , সৃষ্টিকর্তা তিনিই ভাল জানেন । আমার মাথার ভিতর নয় ছয় চিন্তা হতে লাগল ।’ আমি পাশের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ব ঠিক তখনি মেয়েটিকে আবার দেখলাম ! অবাক হলাম সে আবার এ পথে ।
গাড়ির কন্টাকটার আমাকে বলছে ,
-স্যার যাবেন না ?’ গেলে উঠে পড়ুন ।
আমি উঠে বসলাম সিটে, গাড়ি দ্রুত গতিতে চলছে ,
আন্দাজ করতে পারছিলাম না ফরিদা ভাবি কেন ?’ বাররার আমাকে কল দিয়ে যেতে বলছে তার বাসায় । ফোনে যদিও বলেছিল বাসায় এলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো ।
৭’তলায় লিফট বিহীন পায়ে হেঁটে উঠা খুব কঠিন কাজ, আজ দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজন ছিল ভীষণরকম মন্দ । আমার গাঁয়ের গন্ধ আমার নিজের নাকে এসেই লাগছে । ঠা-া পড়ছে তবুও আমি ঘামছি ; কলিং-বেল বেজে উঠল ওপাশ থেকে কেউ আসছে না । আমি দরজার সামনে অপেক্ষা করছি বেশ কিছুক্ষণ ।
রিমোট কন্ট্রোল দরজা অবাক কা- ! বাসার ভিতরে ঢুকে ‘শিলা কি জোয়ানি’ড্যান্স দিতে লাগলাম । আহ কী আনন্দ আকাশে বাতাসে । এত বড় বাসা আমি আর ভাবি ।
-তোমার বাসায় লিফট নেই, প্রযুক্তি ঠিকই ব্যবহার করছো । দরজার সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা । সত্যি ফিরোজ ভাইয়ের তারিফ না করে পারছি না ।
-ভাবি তোমার স্বামী কৃপণ হলেও মানুষটা কিন্তু বেশ দারুণ । ‘আচ্ছা ভাবি মানুষ না হেঁসে থাকতে পারে ?' আমি ফিরোজ ভাইকে কখনো হাসতে দেখিনি । মানুষ না উনি রোবট ।
ভাবি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ।
-দুধ খাবে ?’ তোমার ভাল লাগবে নাও একটু ধরো । তোমার জন্য রান্না করছিলাম, কলিং-বেলর শব্দ শুনে সিসিটিভির পর্দায় তোমাকে দেখলাম । গরম গরম দুধ খেয়ে নাও । শীত পড়ছে আর তুমি ঘামছো কেন ?’
-না কিছু না, সব ঠিক আছে ভাবি ।
আমার গলা শুকিয়ে আসছে । ভাবি আমাকে বেড রুমে আসতে বলছে, আমার পা কাঁপছে, হাত পা কেমন যেন ঠা-া হয়ে আসছে;
আমি কী বলবো বুঝতে পারছিনা । দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত গেলাম । আকস্মিকভাবে বিদ্যুৎ চলে গেল, চারিপাশে বিদঘুটে অন্ধকার আমার বুকেরে ভিতর আতঙ্ক জনিত কম্পন হতে লাগল । মুহূর্তে জেনারেটর চলে আসল, আমি প্রাণ ফিরে পেলাম । মনে-মনে আয়াতুল কুরসি পড়ছি ।
-কি হলো জাহিদ ভিতরে আসছো না কেন ? তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম না !’
-জ্বি ! হ্যাঁ , মানে ইয়ে ।
-কি সব কথা বলছো তুমি । তুমি এমন করছো কেন ?’
-না ভাবি আজ আমার একটু কাজ আছে , অন্যদিন আসব । আমি আজ চলি তাহলে ।
-তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়ে ছিলাম না , আমার বোন রিথি আজ আমার এখানে আসবে । তোমার গল্প করেছিলাম ওকে । তোমাকে দেখতে চেয়েছিল, তাই তোমাকে বারবার ফোন দিয়ে নিয়ে এলাম । আমি বোকার মত ভাবির দিকে চেয়ে থাকলাম ।
ভাবি কিছুক্ষণ পরপর ফোন হাতে নিয়ে চেষ্টা করছে কল করতে , বারবার একই কথা ।‘ এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না । ভাবি বড্ড আবেগি কন্ঠে আমাকে বলছে শামীম আমি আর পারছি না প্লিজ ! কিছু একটা করো তোমারা । আমার প্রচ- ক্ষুধা লাগছে । আমি কিছু বলতেও পারছি না , “আমার ক্ষুধা লাগছে কিছু খেতে দাও ”। রিথি আসবে তার পর আমরা সবাই মিলে খেতে বসবো । আমি আর ভাবি সারারাত জেগে ছিলাম । সে রাতেই সবার কাছে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হলো । রিথিকে পাচ্ছিনা । আমি থানায় গেলাম , পুলিশকে বিষয়টা জানাতে, পুলিশ সাধারণ ডায়েরী করতে বললেন, সঙ্গে এককপি রঙিন ছবি দিতে হবে । ফের ছবির জন্য বাসায় ফিরবার পথে হাকিমপুর বাজার পার হয়ে দেখি, পথে উৎসুক জনতার ভীর ।
আমি এগিয়ে গেলাম , গতকাল যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটি । ধর্ষিত হয়েছে, আমার শরীরের লম আতঙ্কে শিউরে উঠল । আমি দ্রুতগতিতে বাসায় গিয়ে ভাবির কাছে ছবি চাইলাম , ছবির অ্যালবাম থেকে রিথির ছবি দিলো, আমি তাকাতেই ভেসে উঠলো রিথির মায়াময় মুখ । আমার হাতের ছবি এত ভারি লাগছে, মনে হচ্ছে আমার হাত ছিঁড়ে যাচ্ছে । আমার চোখ নোনাজলে ঝাপসা হয়ে আসছে । ভাবি রিথির লাশ নেওয়ার অপেক্ষায় মির্জাপুর থানায় ।