অক্ষরমালা
নুরুল ইসলাম বাবুল
তোমার উঠোন
তোমাকে বহুবার ডেকেছি
চিৎকার করে ডেকে-ডেকে পৌঁছে গেছি
ধূলিমাখা উঠোনের কোণে,
কবে যেন এখানেই খেলেছ গোল্লাছুট
রাতভর তারা গুনে-গুনে শরীরে মেখেছ চাঁদ,
সেই তুমি জোছনা ভুলে শোনাও অবেলার গান।
বুঝলাম, বয়ে যেতে-যেতে নদীও ক্লান্ত হয়
পড়ে থাকে শুকনো বুকে
অতঃপর শেষ হলে প্রহর, আসে মাতাল জোয়ার
টেনে আনে নদীর যৌবন।
আমিও হতে পারি জোয়ারের জল
তোমার বুকের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে-যেতে
এনে দিতে পারি থে-থৈ নদী,
হতে পারি এক আকাশ শ্রাবণের মেঘ
বৃষ্টির মতো শুনাতে পারি গান;
শুধু চাই বালিকার ঘুঙুরের মতো
আবার নেচে উঠুক তোমার উঠোন।
এ বুকে জমে আছে পাথর
রাতভর বৃষ্টি ছিল আজ
অবিরাম উপুড় হয়ে কেঁদেছিল আকাশ
বৃষ্টির ফোঁটায় ছিল সেই কান্নার আওয়াজ
ছিল এলোমেলো হাওয়া
মাঝে মাঝে ঝড়ের আর্তনাদ;
রাতভর বৃষ্টি ছিল আজ।
সেই কবে উত্তরের মেঘ দেখে কেঁদেছিল
যক্ষ্মের হৃদয়,
কবে যেন বাদলদিনে ফেলে আসা দিনগুলোর
হিসেব করতে গিয়ে দেখিÑ
বড় বেহিসেবী রয়ে গেছে জীবনের খাতা;
রাতভর বৃষ্টি ছিল আজÑ
তুমুল বর্ষণে নেমেছিল যেন নূহের প্লাবন,
জলের প্রবল তোড়ে ভেসে গেছে আর সব;
তবু এক আকাশ মেঘ জমে আছে আমাদের মনে
তবু এ বুকে জমে আছে পাথর, পাহাড় সমান।
ধানশালিক ইউটিউব চ্যানেল । সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকুন : https://www.youtube.com/watch?v=7_bEP0d9Rm4
নিজের আগুনে
যখন শিখেছি যৌবনের প্রথম পাঠ
দিনগুলো নীল-নীল লাল-লাল হলুদ-হলুদ
কেটে যেত প্রজাপতি মেঘের মতো;
নিয়েছি বুকভরা প্রস্বাস
চৈত্রের দুপুরে শূন্য খাঁ-খাঁ মাঠ
যতদূর চোখ যায় রোদে পোড়া মাটি;
তবু হৃদয়ে আমার বসন্ত বাতাস ছুঁয়ে-ছুঁয়ে
বৃক্ষ-ফুল-নদী হয়ে গেছে ...
অতঃপর দিন যেতে যেতেÑ
সেই বৃক্ষ সেই ফুল সেই নদী
এক অন্তহীন বেদনার কাছে দগ্ধপ্রায়;
ঠিক যেমন পুড়ে যাচ্ছি আমি,
নিজের ভেতরেই দহন
কোথাও কোন শান্ত¡না নেই, স্বস্তি নেই
এইভাবে কেটে যাচ্ছে দিন
নিজের আগুনে পুড়ে পুড়ে।
বাজল নূপুর তোমার পায়ে
হঠাৎ এসে দখিন হাওয়া লাগল গায়ে
তখন দুপুর বাজল নূপুর তোমার পায়ে
শিস্ বাজিয়ে একটি দোয়েল নাচল কাছে
ফাগুন দিনে লাগল আগুন শিমুল গাছে
ডালে ডালে ডাকল কোকিল অন্য স্বরে
তুমি তখন একলা ভীষণ আপন ঘরে
আমি এসে উদাস মনে দুচোখ খুলে
চেয়ে দেখি মেঘলা আকাশ তোমার চুলে।
ঘর পেরিয়ে দুজন গিয়ে ফুলের বনে
খুব গোপনে স্বপ্ন বুনি হৃদয় কোণে
হাজার সুরের ছন্দ তুলি নিজের ঠোঁটে
তোমার মুখে জুঁই চামেলি গোলাপ ফোটে
তখন আবার মাতাল হাওয়া লাগল গায়ে
মধ্য দুপুর বাজল নূপুর তোমার পায়ে।