নতুন জীবন



নতুন জীবন
মোস্তফা কামাল গাজী

হাসপাতালের জানালাঘেঁসা বেডে আধশোয়া হয়ে বাইরের শহর দেখছে রাতুল। ঢাকার সর্পিল রাস্তায় দীর্ঘ জ্যাম। গাড়ীর ভেতরের মানুষগুলো হয়তো প্রচ- গরমে হাসফাস করছে। রাস্তাগুলোর উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশাসনের ওপর কেউ কেউ হয়তো বিরক্তি উগরে দিচ্ছে। ঢাকায় বসবাসকারীদের জন্য এসব দৃশ্য নিত্যদিনের ব্যাপার। তাদের তুলনায় হাসপাতালের এসি রুমে বেশ ভালোই আছে রাতুল। বেশ কয়েকদিন ধরে পেটের অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব। গতকাল খুব সিরিয়াস হয়ে যাওয়ায় অরণি রাতুলকে ভর্তি করিয়েছে হাসপাতালে। অরণি এখানেরই ছাত্রী। বেশ মেধাবী। ডাক্তার হওয়ার খুব ইচ্ছে। শীতের ধুসর এক বিকেলে অরণির সঙ্গে রাতুলের প্রথম দেখা হয়। ঢাবির এক ক্যাম্পাসে মুখোমুখি সংঘর্ষ। সিনেমার দৃশ্য হলেও বাস্তবে তাই ঘটেছে। সরি বলে রাতুল নিজেকে সামলে নিলেও মনটা মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে অরণির হৃদয়কাড়া সৌন্দর্যের ওপর। বিধাতা যেনো ঢেলে সাজিয়েছেন কোমল কান্ত মুখশ্রীটা। এরপর বিভিন্ন বাহানায় দুজনের দেখা হতে থাকে। ফোন নাম্বার আর ফেসবুক আইডি দেয়া-নেয়া থেকে শুরু করে রাতভর গল্প করাও শুরু হয় আস্তে আস্তে। ভালোবাসার অথৈ সমুদ্রে ভাসতে থাকে দুজন। হাসি-আনন্দ আর খুনসুটি-দুষ্টুমিতে প্রণয়ের তরী গড়িয়েছে অনেকদূর। কিন্তু হঠাৎ রাতুল অসুস্থ হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে অরণি। সেবা-শুশ্রুষার কমতি করেনি এ দুদিন। রাতুল যতই বলে, ‘আমার কিচ্ছুটি হয়নি, তুমি চিন্তা করো না’- অরণির অশান্ত মন তবুও শান্ত হয় না।  দুশ্চিন্তারা ডানা মেলে উড়তে থাকে চারপাশে।
ডাক্তার ব্লাড টেস্ট আর আল্ট্রাসনোগ্রাম দিয়েছিলো। আজ বিকেলে রিপোর্ট দিবে। অজানা আশঙ্কায় অরণির মন কেমন ধুকপুক করছে। সময় গড়িয়ে বিকেল হলো। রেজাল্ট দেখে আঁৎকে উঠলো অরণি। যে আশঙ্কা করেছিলো তাই ঘটেছে। রাতুলের লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। হাউমাউ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাতুলের ওপর। মানসিকভাবে রাতুলও ভেঙে পড়ে। শুরু না হতেই জীবনটা তাহলে শেষ হয়ে এলো? অকালে কি ঝরে পড়বে সদ্য ফোটা ফুল? ডুকরে কেঁদে উঠে রাতুল। অরণি বললো, ‘চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। যতদিন বাঁচবো, তোমার স্ত্রীর পরিচয়ে বাঁচবো।’ রাতুল বলে, ‘আমার অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে আর জড়াতে চাই না অরু! তুমি অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী করে নিও।’ অরণি রাগ দেখায়। রাতুলের দুহাত ঝাপটে ধরে বারবার বলতে থাকে, ‘এটা আমি পারবো না রাতুল, এটা আমি পারবো না।’ দুজনের অশ্রুজল যখন বান ডেকেছে তখন হাসিমুখে কেবিনে প্রবেশ করে একজন নার্স। সলজ্জ ভঙ্গিতে অরণিকে বললো, ‘ম্যাডাম, ভুলবশত আপনাকে অন্যজনের রিপোর্ট দেয়া হয়েছিলো। এই নিন আপনাদের রিপোর্ট। দয়া করে আগেরটা ফেরৎ দিন।’
অরণি চটজলদি নার্সের হাত থেকে রাতুলের আসল রিপোর্টটা নিয়ে পড়তে লাগলো। বিষণœ মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মুহূর্তে। সামান্য গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম ছাড়া আর কোনো রোগ নেই। যেনো নতুন জীবন ফিরে পেলো রাতুল। সীমাহীন আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনে ফের রঙিন জীবনে স্বপ্নের নীড় বাঁধতে লাগলো মনে মনে।
সাভার, ঢাকা


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট