দাগ
জেলী আক্তার
পড়শু বিয়েটা সাইড়া ফালাইতেই হইবো, নয়তো পোলাডা হাতছাড়া হইবো-
খুব জোড়ে সোড়ে বললো- কেরামত ঘটক।
সব কোণার ঘরটায় শুয়ে শুয়ে বালিশ ভিজিয়ে ফেলছে করিম মিয়া। শিমুল তুলোর তৈরী করা তুলতুলে বালিশটা চোখের জলে ভিজতে ভিজতে কডকডে মাথায় দিয়ে আজ কাল স্বস্তি নেই।
করিম মিয়া ভাবছেÑ ‘মাইয়াডা বড় হইতেছে ভাল একটা সম্বোন্ধো পাইলাম হাতে টেহা পয়সা কিচ্ছু নাই কেমনে কি করবো। আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তেই কেরামত ঘটক ডাকলো-
-ও করিম ভাই বাইরে আহেন কতা আছে।
-চোখ মুছতে মুছতে বাইরে বেড়িয়ে এলো করিম মিয়া।
-কন কেরামত ভাই কি কইবেন ?
-আরে কইলাম না সেদিন ।
একটা ভালো পোলা আছে মেট্রিক এ দুই সাবজেক্ট ফেল, বাপের সাড়ে সাত বিঘা সম্পতি আছে, ছেলেডা এহন ব্যবসা করে কাঁচামালের ব্যবসা কামাই আছে খুব।
-কেরামত ভাই পাওনা দাওনা কি?
-তেমন কিচ্ছু চায় নাই একলাখ টাহা, আর তোমার মাইয়াডা কে সাজে দিবেন তাতেই হইবে।
-কেরামত ভাই টাহা পয়সা হাতে নাই, ঘরে যা ধান আছে তা দিয়া এই মাসটাই চলবো না। আর এত টাহা কই পাবো।
-দেহো করিম মিয়া মাইয়ার সুখ এ থাকলেই তো আপনেও সুখী থাকবেন। হাতে সময় নাই পড়শু’ই শুভ কাজটা সাড়তে হইবো। ভাইবা চিন্তা কন কি করবেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন আমি আইতাছি।
এই বলে ঘরে গেল করিম মিয়া অনেক ভাইবা করিম মিয়া ঘরে গিয়ে ট্রাং থাইকা বাড়ী ভিটার দলিলডা বাইর করলো। ওই একটাই জমি সেইডাও গত বছর বউটার অসুখের পিছনে বন্ধক রাখছে। এই বার বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।
ঘাড়ের গামছা টা দিয়া দলিল ডা ঢাইকা বাইরে আইসা কইলো-
-কেরামত ভাই ডিমেনডা (যৌতুক)একটু কম করার চেষ্টা করেন। আর বিয়া পড়শুই হইবো।
-করিম মিয়া চিন্তা কইরো না, খুব চেষ্টা করুম। এই বলে চলে গেল ঘটক।
-করিম মিয়া বউ কে ডাকছে।
-কই গো ফুলির মা এইদিকে আহো।
-কি কইবেন?
-জমিটা বিক্রি দিয়া টাহা নিয়া আইলাম মাইয়াডা যদি ভাল থাকে আমরা না হয় গাছের তলায় থাহুম তাতে সুখ আইবো।
-কি আর কমু আপনে যা ভাল বোঝেন সেই ডাই করেন।
-হ পড়শু বিয়া। ফুলী কই গ্যাছে অনেক ক্ষণ দেহি না মাইয়াডারে।
-ওই গ্যাছে হয়তো খেলতে।
-এহন মাইয়াডারে বাইরে বাইরতে দিয়ো না।
-কেমনে বাইন্ধা রাখুম মাইয়াডার এহন ও খেলার বয়স’ই পার হয় নাই। সংসার যে কেমনে করবো?
-ফুলীর মা অত চিন্তা কইরো না তো। সব ঠিক হইয়া যাইবো।
-চিন্তা হয় ফুলীর বাপ, চিন্তা হয়।
বিয়ের দিন এসে গেল সব আয়োজন করা হলো ফুলী এহন ও বিয়ে সংসার এসব কিছুই বোঝে না। তবুও বিয়েটা দিয়েই দিলো ফুলীর বাপ।
কিন্তু অবুঝ ফুলী স্বামীর বাড়ীতে গিয়ে খেলতে যায়, রান্না পারে না, এবাড়ী ওবাড়ী টই টই করে ঘুড়ে বেড়ায় এই নিয়ে কত কথা, কিছুদিন পর ফুলীকে প্রচ-ভাবে মারধর করে ফুলীর স্বামী বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দেয় ফুলীকে। ফুলীর মা ফুলীর পিঠে অসংখ্য মারের দাগে তৈরী হওয়া ফুল দেখে চিৎকার করে বলে-
-ফুলীর বাপ ফুলীর পিঠে এত্ত মাইরের ফুল গো, এইডাই কি আমার মাইয়ার সুখের দাগ।
ফুলীর বাপ কোন কথা বলছে না অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়ের পিঠে আঘাত গুলোর দিকে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ