রাজা



রাজা
পারভেজ মল্লিক

খাটের তলায় এককোণে অন্ধকারে নিজেকে যতটা সম্ভব লুকিয়ে সমস্ত ঘটনাটাই দেখলো রাজা। দুষ্কৃতিরা হামলা চালালো সারা বাড়িতে; তলোয়ারের কোপ একটার পর একটা পড়তে লাগলো তাঁর বাড়ির লোকেদের উপর। ভাঙচুর হতে লাগলো ঘরের প্রতিটা জিনিষ আর তাজা রক্তে ভেসে যেতে লাগলো ঘরের মেঝে। রাজা মুখ বন্ধ রেখে এক দৃষ্টে চেয়ে রইলো একের পর এক লুটিয়ে পড়া দেহগুলোর দিকে। তাঁর চেনা মুখগুলো বিকৃত হয়ে উঠছিল অসহ্যযন্ত্রণায়, পরক্ষণেই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল শরীরের সমস্ত ভঙ্গিমা। বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করে উঠলো রাজার, একটা আতঙ্ক শরীরটাকে শিউরে তুলছিল। তাঁর নিজের অনিশ্চিত পরিণতি হাতছানি দিচ্ছিল প্রতিমুহূর্তে। কিন্তু না! কিছুতেই সে ওই অন্ধকার থেকে বাইরে বেরোবে না। সে জানে বাইরে ওই শয়তানগুলো তাঁকেও রেহাই দেবেনা। চারিদিকে তখন দাঙ্গার পরিস্থিতি, প্রতিটা গোঁড়া, মূর্খ ধার্মিক মনে তখন একে অপরের প্রতি ঘেন্না, ঈর্ষা, ক্রোধ। আরভেতরে রাজার মতো সন্ত্রস্ত মন লুকিয়ে আছে কোনো এক কোণায়, মরতে দেখছে তাঁর প্রিয়জনদের।
“আউর কোই নহি হ্যায়। সব খতম।” খিকখিক করে হেসে বললো শয়তানগুলোর একজন। বাকি লোকগুলো প্রতিটা ঘর একবার ঘুরে দেখতে লাগলো আর কেউ আছে কিনা। আর তখনই ঘটলো অঘটনটা। দলের একজন খাটের নীচে উঁকি দিতেই দেখতে পেল জড়োসড়ো হয়ে থাকা রাজাকে।
-আরে ইয়ে তো ইঁহা ছুপা ব্যায়ঠা হ্যা।
রাজার বুক ধড়াস করে উঠলো। চোখের সামনে যেন মৃত্যু ভেসে উঠলো। ভাবলো ওদের ধরার আগেই দৌড়ে পালাবে; কিন্তু জন্মের মাসখানেক পর থেকেই একটা দুর্ঘটনায় একটা পা সম্পূর্ণ অকেজো। ঠিকমতো হাঁটতেই পারেনা, দৌড়ানো দূরের কথা। কিন্তু অন্য উপায় ভেবে ওঠার আগেই দু’জন খাটের নীচ থেকে তাঁকে টেনে বের করলো; সবাই ঘিরে ধরলো ওকে।
-ইসকো ভি মার ডালে ক্যায়া? মগর ইসকা জাত ক্যায়া হ্যায়?
-ইসি ঘরকা হ্যায় তো এক হি হোগা জাত। শালা কিসিকো নহি ছোড়েন্গে ইস ঘরকা। 
লোকগুলোর কথা রাজার নির্বোধ মন বুঝতে পারলো না। সে করুন চোখে চেয়ে রইলো শয়তানগুলোর দিকে। আর পরক্ষণেই একটা তলোয়ারের কোপ সজোরে এসে পড়লো মাথার উপর। শেষবারের মতো রাজার ক্ষুদ্র শরীরআর্তনাদ করে উঠলো “ম্যায়াও”।
দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান, ভারতবর্ষ



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট