ভালোবাসার রং
সাখাওয়াত আলী
এক কুয়াশা ভেজা রোদ বিকালে তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো। হেমন্তের মৃদু বাতাসে এলোমেলো চুলগুলো তখন খেলা করছিল। ডুবন্ত রোদের আবছা আভাগুলো তোমার মসৃণ বদনের উপর পড়ছে। আমি দেখছি। মিলন বদনখানি তখন জ্বলজ্বলিত হয়ে উঠল। আমি ভড়কে গেলাম। তোমার তুমিকেই তখন অপিরিচিত মনে হতে লাগলো। তুমি তখন ডুবো ডুবো সূর্যের ম্লান আলোগুলো খুব করে গায়ে মাখছো। সেই ম্লান আলোতে তোমার প্রতীমা বারান্দা পেরিয়ে আমার নগরীতে হানা দিতে লাগলো। আমি আরো ভড়কে গেলাম। ভয় হতে লাগলো, এই ডুবন্ত ম্লান আলো যদি শেষ হয়ে যায়! তুমি কি তখন ততই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে? এইভাবেই কি আমার নগরীতে হানা দিবে?
আমি সামনে এগিয়ে গেলাম। তুমি তাকিয়ে আছো, দুরে, বহুদূরে। তারপর আমার হাতের আলতো স্পর্শে তোমার হাতটি ধরলাম। তুমি হাসলে, মৃদু হাসলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী দেখছো?’
তুমি বললে, ‘ভালোবাসার রং’। আমি অবাক হলাম। বিস্ময়ে তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভালোবাসারও কি রং হয়’।
তুমি বললে, ‘হ্যাঁ, হয়।’
তখন আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভালোবাসার রং কি?’
তুমি বললে, ‘ধূসর। ধূসর-শুভ্র। ভালোবাসাতে কখনো কোন দাগ থাকে না। সে হয় মসৃন, নিখাঁত খাটি শুভ্র।’
আমি তখন ভাবলাম, ঠিকই তো! ভালোবাসা তো অমলিন একটা বিষয়। গভীরভাবে তখন কথাটা ভাবতে লাগলাম। রোদ বিকালের লাল আকাশটায় তখন এক ঝাক পাখি উড়ে গেল। অদ্ভুত শব্দে মুখরিত হলো কয়েক মুহূর্ত । আমি তাকিয়ে আছি সেই পাখিগুলোর দিকে। তারা চলে যাচ্ছে, দূরে, অনেক দূরে। আমার আনমনা মুখটা দেখে তুমি তখন বললে, ‘কী ভাবছো?’
আমি বললাম, ‘আচ্ছা, ভালোবাসার রং কি গায়ে মাখা যায়?’
তুমি তাকিয়ে আছো আমার দিকে। আমার চোখের গভীরে। পড়তে চাইছো আমার আমিকে। আমিও তাকিয়ে রইলাম। তুমি বললে, ‘কি দেখা আমার চোখে?’
আমি বললাম, ‘আমাকে।’ তুমি তখন ম্লান হাসলে। তারপর হাসিমুখে বললে এটাই ভালোবাসার রং'।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ।