আত্মহত্যা



আত্মহত্যা
মাসুদ রানা

বারান্দায়, উঠানের কোণায়, বিছানায় এমনকি মাটি লুটে পরে হাউমাউ করে কাঁদছে। যে যার যার জায়গা থেকে চিৎকার করে কাঁদছে। আর বলছে কি হয়ে গেল? আমি বারবার বলেছিলাম আব্বা তুমি মেনে নাও। কিন্তু মেনে নিল না। বারান্দায় মাটিতে হাত থাপরেথাপরে কথাগুলো বলছিলো সানাই।
ওদিকে উঠানে ডুকওে ডুকে কেঁদে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন রাম ঠাকুর। আমার জন্যেই আজ এমন ঘটনা ঘটলো। তখন আমি যদি রাজি হয়ে যেতাম তাহলে এমন দৃশ্য আর দেখতে হতো না।
বিছানায় শুয়ে থাকা মহিলাটির (রাণী কর্মকার) মাথায় জল ঢালতে ব্যস্ত প্রতিবেশীরা। ভোর থেকে কাঁদতে কাঁদতে নিশ্বাস যেন ফুরিয়ে গেছে তার। ঠিকভাবে দম নিতেই পারছে না। এমনিতেই পেশারেররোগী। একটুতেই শরীরটা ছেড়ে দেয়।
বাড়ির উঠান ভর্তি মানুষের আনাগোনা। জ্ঞান হয়েছে এমন কেউ বাদ নেই যে কান্নাকাটির শব্দ শুনে আসেনি। ছোট বড় সববয়সী মানুষ একনজরের জন্য হলেও দেখতে এসেছে। শান্তনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। কিভাবে দেবে? এমন ঘটনার কি কোন শান্তনা আছে?
ইতিমধ্যে আত্মীয় স্বজনেরা আসতে শুরু করেছে। একগ্রাম থেকে অন্য গ্রামে রটে গেছে ঘটনার বিষয়বস্তু। মন্দ কথা নাকি বাতাসের আগে দৌড়ায়। প্রতিবেশীরা বলাবলি করছে, কতোদিন ঝসড়া-ঝাটি হলো। কতো বুঝানো হলো রাম ঠাকুরকে কিন্তু কিছুতেই তিনি বুঝতে চাইলেন না। বড় মেয়ে, মেয়ের জামাই এসেও বুঝিয়ে গেছে কিন্তু তিনি এক কথার মানুষ। নিজের সিদ্ধান্তে থেকে একটুও নড়লেন না। মেনে নেবেই বা কি করে? ছেলেটি সবেমাত্র কলেজের সিঁড়িতে পা রেখেছে। এমন সময় কি সবকিছু মেনে নেওয়া সম্ভব?
বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শব্দটা কেমন যেন পরিচিত মনে হলো। কৌতুহল বসত একটু এগিয়ে গেলাম দেখার জন্য। ও উনি! রাম ঠাকুরের শ্যালক। পুলিশের চাকরি করেন। উনার সাথে আরও কয়েকজন পুলিশও এসেছেন। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই রাম ঠাকুর জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। থাক, এখন আর কেঁদে কি হবে? যা হবার তো হয়ে গেছে। কান্না ভাঙা কন্ঠে বলতে লাগলো রাম ঠাকুরের শ্যালক। রঞ্জুর কন্ঠ শুনে বিছানা থেকে চলে এসেছে রাণী কর্মকার। এসেই সে কি কান্নাকাটি? বারবার বলা সত্বেও কোন ক্রমেই থামানো যাচ্ছিলো না। দাদা রে! ভগবান আমার এ কি ক্ষতি করলো? আমার কলিজার টুকরো এভাবে......।
তোর জামাইদাকে কতোবার বললাম যা হয়েছে মেনে নাও। কিন্তু তিনি মেনে নিলেন না। যদি মেনে নিতেন তাহলে আজ মা হয়ে এমন ঘটনা দেখতে হতো না।
ইতিমধ্যে বাড়ির উঠানে চৌকির উপরে শোয়ানো মৃত লাশের রক্তের গন্ধে মাছিরা বনবন করে উড়তে শুরু করেছে। লক্ষণের কোন একজন আত্মীয় বারবার হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে মাছিগুলো তাড়ানোর জন্য। কিন্তু কিছুতেই যেন সরতে চাইছে না।
পরে থাকা মৃত দেহটা লক্ষণের। গত রাতে বাড়ির উঠানে কাঁঠাল গাছের সাথে দড়ি বেঁধে ফাঁসি নিয়েছে। ঝুলন্ত মাংসপিন্ডগুলো যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এতো সুন্দর মুখটা শুকিয়ে মর মরে হয়ে গেছে। নাক দিয়ে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এইতো সেদিন কথা হলো- বাবার সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাগ করেছিস কেনো? কি হয়েছে? প্রথমে বলতে চায়নি। পরে অবশ্য মিনমিন করে বললো। ও নাকি বিয়ে করবে। কলেজের একটি মেয়েকে খুব ভালবাসে। আমি আর কি বলবো? বলার মতো কিছু ছিলো না। ভালবাসা আর প্রেম হলো ভূতের মতো, ঘাড় থেকে সহজে নামে না। তাই বলে এরকম ঘটনা দেখতে হবে ভাবিনি সেদিন। ছেলেটির আত্মবিশ্বাস বলে কিছুই ছিলো না। নিজের জীবনের চেয়ে প্রেমে ভালোবাসাকেই বেশি মূল্যে দিয়েছে। তাও যদি প্রিয় মানুষটারে চিরদিনের জন্য কাছে পেত।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট